• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯ আগস্ট, ২০২২
সর্বশেষ আপডেট : ৯ আগস্ট, ২০২২

চাঁদপুরের বালুখেকো সেলিম চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চার বছরের রাজস্ব হিসাব করে আদায় করার নির্দেশ আপিল বিভাগের

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]
ছবি-সংগৃহিত।

মেঘনার ডুবোচর থেকে চার বছর ধরে বালু তোলার রাজস্ব হিসাব করে চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানের কাছ থেকে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।

এর আগে গত ২৯ মে সেলিম খানকে মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলন করার অনুমতি দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। সেখানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব নির্ধারণ করে আদায় করতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “আপিল বিভাগ চাঁদপুরের ডিসিকে সেলিম খান থেকে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব নির্ধারণ করে টাকা আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে।

“নির্দেশনা অনুযায়ী ডিসি সাহেব আইনের আলোকে সেলিম খান থেকে রাজস্ব আদায় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

চাঁদপুর সদর ও হাইমচরের ২১টি মৌজা এলাকায় মেঘনা নদীতে ‘জনস্বার্থে’ নিজ খরচে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালে একটি রিট করেছিলেন লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান।

ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল হাই কোর্ট তাকে বালু উত্তোলনের পক্ষে রায় দেয়। ওইসব এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু গত ৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের আবদনে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ। বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চ হাই কোর্টের রায় বাতিল করে। এতে সেলিম খান মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ হারান।

হাই কোর্টের রায়ে ‘গুরুতর ক্রটি’ ছিল উল্লেখ করে আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, “২০১৬ সাল থেকে সরকারকে কোনো রাজস্ব পরিশোধ ছাড়াই বালু উত্তোলন করে আসছিল। এতে সরকার সরকারের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।

“সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে হাই কোর্টের রায়ের দিন থেকে গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে রাজস্ব হিসাব ও নির্ধারণ এ বিষয়ে তা আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করা হল।”

পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান হাই কোর্টের এক রায়ের বরাতে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন।

“সেই রায় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর সাথে অসংগতিপূর্ণ। আইনের লঙ্ঘন বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায়কে বাতিল করে দেয়।”

সেই রায় বাতিল করে দিয়ে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায়ে বেশ কিছু নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই মামলাটি হাই কোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তির সময় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো জবাব দাখিল করা হয়নি।

“কোনো জবাব দাখিল না করার কারণে তৎকালীন সময়ে ওই হাই কোর্ট বেঞ্চের আইন কর্মকর্তা হিসেবে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছে আপিল বিভাগ।”

একই সঙ্গে চাঁদপুরের প্রশাসনের তৎকালীন কর্মকর্তারা বালু উত্তোলনে কার্যক্রমে কোনো তদারকি না করায় তাদের প্রতিও আপিল বিভাগ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন এবং চাঁদপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ, দলের দুর্নাম কৃড়ানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ৫ জুন তাকে বহিষ্কার করা হয়।

গত ১ অগাস্ট তার বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • চাঁদপুর সদর এর আরও খবর
error: Content is protected !!