মহিউদ্দিন আল আজাদ:
পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে দেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে শুধু বাংলাদেশই নই যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতেও এ সেতু নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ সেতু চালু হলে বদলে যাবে বা বেগবান হবে দুই পারের অর্থনীতি। সেতুর কারণে দুই পারের জেলাগুলোর মধ্যে সরাসরি গণপরিবহণ চলাচল করবে। এতে মানুষের যোগাযোগ সহজ ও দ্রুত হবে, বাড়বে যাতায়াত। নদীর ওপারে ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ ঘটবে।
এপার-ওপারের কৃষি ও শিল্প পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুত হবে। বাড়বে অর্থের প্রবাহ ও হাতবদল। সবমিলিয়ে এ সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব।
জাপান ইন্টারন্যাশনার কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারের ফলে জিডিপি ১ দশমকি ২ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এর প্রভাবে অর্থনীতির আকার বাড়বে, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিনিয়োগ হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দারিদ্র্য কমবে।
পদ্মা সেতুর কারণে অর্থনীতি বহুমুখী ধারায় উপকৃত হবে। এর প্রভাব পড়বে দুই পারের মানুষের মধ্যে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে কৃষি, শিল্প, মাছ, পাটজাত পণ্য কম সময়ে ও কম খরচে অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছে যাবে।
এতে এসব খাতের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি এসব পণ্য ব্যবসায় পদ্মার এ পারে যারা জড়িত ভোক্তারাও উপকৃত হবেন। যোগাযোগ সহজ হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নদীর এ পারের মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। গড়ে উঠবে বিভিন্ন রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল ও বিনোদন পার্ক। এছাড়া নদীকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। পদ্মার ওপারে জমির দাম ও শ্রমের মূল্য এ পারের তুলনায় কম হওয়ার কারণে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। ফলে শিল্প গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। দারিদ্র্য কমবে।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থার পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন থেকে উল্লিখিত সব তথ্য পাওয়া গেছে। সেতু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদ্মা সেতুর বহুমুখী কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরা হয়।
সেতু বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেতু নির্মাণে মোট খরচ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু শুধু এ অর্থ নিয়ে পদ্মা সেতুকে মূল্যায়ন ঠিক হবে না। এর প্রভাবে দুই পারের মানুষের জীবনযাত্রার যে পরিবর্তন আসবে তা অর্থ দিয়ে মূল্যায়ন করা যাবে না। আর্থিক হিসাবে জিডিপিতে যোগ হবে ৪৮ হাজার থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেতুকে কেন্দ্র করে এর দুই পারে ২৯ শতাংশ বাড়বে নির্মাণ কাজ, সাড়ে ৯ শতাংশ বাড়বে কৃষি কাজের প্রবৃদ্ধি, ৮ শতাংশ বাড়বে উৎপাদন ও পরিবহণ খাতের কাজ। এর প্রভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমালঞ্চলে দারিদ্র্যের হার কমবে ১ শতাংশ। জাতীয়ভাবে কমবে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন করছে।
এতে বছরে দশমিক ৮৪ শতাংশ দারিদ্র্যতা হ্রাস পাবে, এক দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখবে জিডিপিতে।
এ বিনিয়োগ থেকে বছরে রেট অব রিটার্ন বাড়বে সাড়ে ১৯ শতাংশ হারে। সাধারণত দেশে ব্যবসার মুনাফার হার ১৫ শতাংশ ধরা হয়। সে হিসাবে পদ্মা সেতুর বিনিয়োগ থেকে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে।
দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলায় বদলে যাবে অর্থনৈতিক চিত্র। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৫ জেলা। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায়ও এর প্রভাব পড়বে। সারা দেশের সঙ্গে ওইসব জেলার সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বর্তমানে সন্ধ্যার পর মাওয়া ঘাট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে এ ঘাট দিয়ে ওপারে যাতায়াতও বন্ধ থাকে। পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে সব সময় ফেরি চললেও যানবাহনের ভিড়ে ৪ থেকে ১৬ ঘণ্টাও ফেরির অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে এই বিড়ম্বনার অবসান হবে। বর্তমানে ফেরিতে ওঠার পর নদী পার হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। সেতু চালু হলে মাত্র ৬ মিনিটেই নদী পার হওয়া যাবে। ফলে ১ ঘণ্টারও কম সময়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যাওয়া যাবে। এতে জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সময়ের অপচয়জনিত জিডিপির ক্ষতিও বন্ধ হবে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের সময় কমবে এক-চতুর্থাংশ।
দক্ষিণাঞ্চলে বছরে গড়ে বন্যার কারণে ৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। স্থানীয়ভাবে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ায় এসব ফসল রক্ষা পাবে। এতে সাশ্রয় হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ কৃষি খাতের উৎপাদনে এসব অর্থ যোগ হবে।
পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগের ফলে সাশ্রয় হবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। কেননা এগুলো নদীর তলদেশ দিয়ে নেওয়া অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। নদীর উপর দিয়ে যাওয়ায় এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজও সহজ হবে। বর্তমানে মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে ফেরি সার্ভিসের ব্যয় যেমন কমবে, তেমনি এ থেকে অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয় হবে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুর কারণে খুলনার মোংলা ও পটুয়াখালীর পায়রা, যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরাবন্দরের কার্যক্রমে অনেক বেশি গতি পাবে।
মোংলা বন্দরকে আধুনিক রূপ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এ বন্দরে ৬টি নিজস্ব জেটি, ব্যক্তি মালিকানাধীন ১১টি জেটি, ৩টি মুরিং, ২২টি অ্যাংকোরেজ মাধ্যমে ৪২টি জাহাজ থেকে একসঙ্গে পণ্য উঠানামা করানোর সক্ষমতা রয়েছে। ২টি ওয়্যারহাউজ, ৪টি ট্রানজিট শেড, ১ট স্টাফিং অ্যান্ড আনস্টাফিং শেড, ৬টি কনটেইনার ইয়ার্ড, ২টি কার ইয়ার্ডের মাধ্যমে দেড় কোটি টন কর্গো, ১ লাখ টিইউজ কনটেইনার এবং ২০ হাজার গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষমতা রয়েছে। বন্দরে গত অর্থবছরে ৩৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, ব্যয় হয়েছে ২১৭ কোটি টাকা। উদ্বৃত্ত হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।
পায়রা বন্দরকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে রিজার্ভ থেকে ৫২ কোটি ইউরো ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হচ্ছে।
ওই দুই বন্দরের প্রায় সব পণ্যই মাওয়া ও পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণে ঘাটে কোনো কোনো পণ্যবাহী ট্রাককে ১ থেকে ৭ দিনও অপেক্ষা করতে হয়। এতে খরচ বাড়ে, পণ্য নষ্ট হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি দেশের যে কোনো অঞ্চলে চলে যাবে। ফলে অনেক খাতে অর্থের সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে দুই বন্দরের ব্যবহারও বাড়বে। এতে চট্টগ্রামবন্দরের ওপর চাপ কমবে। বর্তমানে ৯২ শতাংশ পণ্যই আমদানি রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। পদ্মা সেতু চালু হলে বিশেষ রপ্তানি পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে পাঠানো যাবে। কেননা, তখন সরাসরি ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ থেকে মোংলাবন্দরে পণ্য বোঝাই ট্রাক পাঠানো যাবে। চট্টগ্রামের চেয়ে মোংলার দূরত্বও কমবে। মোংলাতে চাপ কম থাকায় কনটেইনার জট নেই। ফলে সময় সাশ্রয় হবে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন রপ্তানিকারকরা। দেশের ভাবমূর্তিও বাড়বে। পায়রা বন্দরকে গাড়ি আমদানিসহ অন্যান্য কিছু কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতেও সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। বর্তমানে স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় বেনাপোল দিয়ে। ওই বন্দরের পণ্য মাওয়াঘাট দিয়ে পারাপার করতে হয়। ফলে অনেক সময় লাগে। সেতুর ফলে বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরাবন্দরের পণ্য দ্রুত ও স্বল্প খরচে দেশের যে কোনো অঞ্চলে চলে যাবে। একইভাবে চট্টগ্রামবন্দরের পণ্যও দ্রুত দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলায় পৌঁছে যাবে। এছাড়া সারা দেশের জেলাগুলোর মধ্যে পণ্য পরিবহণে গতিশীলতা বাড়বে, সময় কমবে।
দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলায় বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে খুলনার সুন্দরবন, বাগেরহাটের সাতক্ষীরা ষাটগম্বুজ মসজিদ, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, ঝালকাঠির পাথরঘাটা সমুদ্রসৈকত, বরিশালের সোনার চর, রূপার চর, ভোলার চর কুকরি মুরকি, ঝালকাঠির ভাসমান পেয়ারা বাজারসহ অসংখ্য পর্যটন স্থান রয়েছে। এসব স্থানে এখন যেতে বেশ সময়সাপেক্ষ। সেতু চালু হলে এগুলোতে সহজেই যাতায়াত করা যাবে। ফলে পর্যটকদের আগমন বাড়বে। এতে স্থানীয় লোকজনের যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়বে।
বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলায় দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিলাসবহুল বাস চলাচল করে না বললেই চলে। কিন্তু সেতু চালু হলে এসব বাস চলাচল করবে। তখন রাস্তার দুই পাশে বিলাসবহুল হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠবে। এছাড়া বিনোদন পার্কও গড়ে উঠবে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের দিকে রাস্তার দুই পাশে নানা শিল্প গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় জমির দাম ও শ্রমের মূল্য বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই শিল্প স্থাপন করতে আগ্রহী নন। পদ্মার ওপারে এ পারের তুলনায় জমি ও শ্রমের মূল্য এখনও কম। সেতুর ফলে পদ্মার ওপারে যাতায়াত সহজ হওয়া, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ মিলবে। এছাড়া উৎপাদিত পণ্য দ্রুত রপ্তানি করা যাবে। একই সঙ্গে পণ্য আমদানি খরচও কমবে। ফলে পদ্মার ওপারে বিনিয়োগের নতুন দুয়ার খুলবে।
এর বাইরে বৈদেশিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেতু ভূমিকা রাখবে। বেনাপোল দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার দিয়ে মিয়ানমারে যাবে। এর সংযোগে ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু। এতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়বে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার কারণে সেতুর ও পারের ১৯ জেলার মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য কমবে ১ শতাংশ। জাতীয়ভাবে কমবে দশমিক ৮৪ শতাংশ। খুলনা ও বরিশাল বিভাগে এখনও দারিদ্র্যের হার বেশি। ওই দুই বিভাগে গ্রামে দারিদ্র্য কম, কিন্তু শহরে বেশি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এটি অস্বাভাবিক। সাধারণত গ্রামেই বেশি দরিদ্র থাকে। পদ্মা সেতুর কারণে দুই বিভাগে শহরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি বাড়বে। ফলে শহরের দারিদ্র্য কমবে।
২০১৬ সালের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২৫ সালে তা আরও কমে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
উচ্চ দারিদ্র্যের মাপকাঠিতে ২০১৬ সালে মোট দারিদ্র্যের মধ্যে বরিশালে ছিল ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে পল্লি এলাকায় ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। খুলনায় মোট দারিদ্র্য ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে পল্লি এলাকায় ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ, শহরে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে নদীর দুই পারেই বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে দুই পারেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। বলা হয়, কোনো অঞ্চলে সরকার ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে অবকাঠামো নির্মাণ করলে বেসরকারি খাত শতগুণ বেশি বিনিয়োগ করে এর সুবিধা নেয়। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করেই এমনটি হবে বলে ভাবা হচ্ছে। পদ্মার দুই পারে ২টি করে চারটি স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলোতে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক জাদুঘর নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় বিশ্বমানের অলিম্পিক ভিলেজ, বেনারসি, তাঁতপল্লী, রাজউকের উদ্যোগে আইকন টাওয়ার, দেশের মধ্যে একমাত্র ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমিসহ বড় বড় প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় আর্থিক খাতের বিকাশও হবে দক্ষিণাঞ্চলে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের মধ্যে খুলনা বিভাগ থেকে সংগ্রহ করা হয় ৫২ হাজার কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ৬ শতাংশ। ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা মোট ঋণের সাড়ে ৩ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে মোট আমানতের পরিমাণ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। যা মোট আমানতের সাড়ে ৪ শতাংশ। মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩ শতাংশ। এসব খাতে অর্থের প্রবাহ বাড়বে।