• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৩ মে, ২০২২
সর্বশেষ আপডেট : ২৩ মে, ২০২২

কচুয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌরাত্ম্য চরমে ! হয়রানির শিকার হচ্ছে রোগীরা

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]
ইসমাইল হোসেন বিপ্লব কচুয়াঃ
কচুয়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্রই হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নেন দালালরা। পরে তারা তাদের পছন্দমতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম বলে দেন। তাদের ক্লিনিকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, এ পরীক্ষাটা শুধু সেখানেই করা হয়।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী এভাবেই তার ভোগান্তির কথা অনেকে জানান।
তবে শুধু ওই রোগী নন, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দাদের জন্য একমাত্র সরকারি হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিদিনই দালালদের হয়রানির শিকার হন অনেকে।
রোগীদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। দক্ষ লোকবলের অভাবে এখানে অনেক সেবা না মিললেও এখানকার চিকিৎসকরাই বাইরের ক্লিনিকে গেলে স্বনামধন্য চিকিৎসক বলে যান।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠিকমতো সময় না দিয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মোহাম্মদ সোহেল রানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি কোয়ার্টার ভিতরে নিজস্ব চেম্বার বানিয়ে অর্থের বিনিময়  রোগী দেখছেন প্রতিনিয়ত।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগী শাহজাহান ও ফারুকুল ইসলাম মৌখিকভাবে অভিযোগ করে বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা সব সময় হাসপাতালের ভেতরে ঘোরাঘুরি করে। অনেকে আবার চিকিৎসকের চেম্বারের মধ্যে অবস্থান করে। চিকিৎসকরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিলেই এসব দালাল পাগল হয়ে যায় তাদের প্রতিষ্ঠানে নেয়ার জন্য। এতে রোগী ও স্বজনদের প্রতিদিনই নাজেহাল হতে হয়।
তারা আরো বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শৌচাগারের অবস্থা বেহাল। সুস্থ মানুষও এখানে একদিন থাকলে রোগী হয়ে যাবে।
আরেক রোগী বাবুল খাঁন জানান, হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঠিকমতো আসে না । দুর্গন্ধে হাসপাতালে থাকা যায় না। কেউ কোনো ব্যবস্থাও নেয় না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আগে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান কমে গেছে। কোনো রাগী এলে চিকিৎসকরা রেফার্ড করে দেন অন্য হাসপাতালে। পাঠিয়ে দেন তাদের পছন্দমতো ক্লিনিকে। চিকিৎসকরা কোনো দায়িত্বই নিতে চান না।
জগতপুর থেকে আসা রোগী শামসুন্নাহার জানান, প্রতিদিনই কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান নেয় নির্দিষ্ট কিছু দালাল সিন্ডিকেট। তাদের সঙ্গে চিকিৎসকদের যোগসাজশ রয়েছে। কারণ প্রায় সব চিকিৎসকই কোনো না কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগস্টিক সেন্টারে বসে রোগী দেখেন। বিনিময়ে এসব দালালকে দেন কমিশনের টাকা।
মধুপুর গ্রামের লোকমান হোসেন অভিযোগ করেন, হাসপাতালের ১০ গজ ভিতরে ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করে দালালদের দিয়ে প্রতিনিয়ত রোগীদেরকে হয়রানি করছেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের ভোগান্তি ও তাদেরকে নানা ভাবে হয়রানির চিত্র। এ হাসপাতালে চিকিৎসকদের কনসালটেন্ট,মেডিকেল অফিসার ও প্যাথলজিষ্ট সহ ৩২টি পদের মধ্যে ৯টি পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য। এ কারণে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে ৫শ’ গজের আওতায় কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালের নিয়ম না থাকলেও হাসপাতালের প্রবেশ গেইটের ১০ গজের মধ্যে রয়েছে মনোয়ারা ডায়াগনিষ্টক সেন্টার,ডা: আব্দুল হাই ফাউন্ডেশন ও মহিউদ্দিন ডেন্টাল ক্লিনিকসহ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক।
হাসপাতালের ২য় ও ৩য় শ্রেণি পদে ৫৮টি পদ খালি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সাব সেন্টারে ৪র্থ শ্রেনীর ২৬টি পদের মধ্যে ১৩টি পদ শুন্য রয়েছে। গাইনী কনসালট্যান্টের একটি পদ দীর্ঘ দিন থেকে শূণ্য রয়েছে। ফলে মহিলাদের জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ্যানেসথেসিয়া না থাকায় অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে বছরের পর বছর।
নতুন এক্সরে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্সরে করা যাচ্ছে না। আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার কোন মেশিন নেই। এতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, দালালদের উৎপাতের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতনদের নজরে দিয়েও সমাধান হয়নি। এমনকি ক্লিনিক মালিকপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তারা কথা দিয়েও কথা রাখেননি।
দালালদের উৎপাতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজন কুমার দাস জনবল সংকট ও হাসপাতালে দালালদের দৌরাতত্মের কথা স্বীকার করে জানান, কোনো ভাবে এ দালাল হঠানো যাচ্ছে না। তবে জনবল সংকট সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে ।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • কচুয়া এর আরও খবর
error: Content is protected !!