রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় কুরিয়ারকর্মী নাহিদ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তারা দুজনই ঢাকা কলেজের ছাত্র। থাকেন কলেজের একটি ছাত্রাবাসে।
রবিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে প্রথম আলো। শনাক্ত দুইজনের মধ্যে একজনের নাম কাইয়ুম, অন্যজনের নাম জানায়নি পুলিশ।
দুজনেই ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির একজন নেতার অনুসারী। সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দুইজনকে শনাক্ত করা হয়।
এ ছাড়া মঙ্গলবার ধারালো অস্ত্র হাতে যাদেরকে রাস্তায় দেখা গেছে তাদেরকেও শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তারাও ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
পুরো সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও ব্যবসায়ীদের পক্ষের দিকেও ধারালো অস্ত্র ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। তিনি সমকালকে বলেন, “অস্ত্রধারীদের প্রত্যেকের মাথায় ছিল হেলমেট। তাই শনাক্ত করতে সময় লাগছে।”
তিনি আরও বলেন, “ছবি দেখে মোট ১২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কি-না, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।”
এদিকে পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা কলেজের যেসব শিক্ষার্থী ধারালো অস্ত্র ও হেলমেট পরে সংঘর্ষে অংশ নেন, তাদের মধ্যে বেশি সক্রিয় ছিলেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির চার নেতার অনুসারীরা। এর মধ্যে নাহিদ হত্যায় জড়িতরা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জসীম উদ্দিন ও নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ফিরোজ হোসেনের অনুসারী।
হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া কাইয়ুম সম্পর্কে জসীম উদ্দিন শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, যাদেরকে ভিডিওতে দেখা গেছে তাদেরকে তিনি চেনেন না। সংঘর্ষের দিন পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। আর কাইয়ুম অন্য গ্রুপের রাজনীতি করে। কলেজের ছাত্রাবাসে তিনি তাকে দেখেছেন।
তবে কাইয়ুম ছাত্রলীগের কোন নেতার অনুসারী, তা তিনি নিশ্চিত নন।
এ বিষয়ে ডিবির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, “এখন পর্যন্ত নাহিদ হত্যার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। যাদেরকে ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, তাদের বিষয়ে একেকজন একেক রকম তথ্য দিচ্ছেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।”
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শনিবার প্রথম আলোতে প্রকাশ হওয়া অস্ত্রধারীদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তাদের একজন ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহীন সাদেক মীর্জা। তিনি কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসে ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকেন। অন্যজন হলেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা কাউসার হামিদ ওরফে সাদা কাউসার।
ডিবি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার যারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে ভাঙচুর ও সংঘর্ষে অংশ নেন, তারা মূলত ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সামাদ আজাদ ওরফে জুলফিকার, সদস্য শফিক আহমেদ, জসীম উদ্দিন ও শাহীন সাদেক মীর্জার অনুসারী।
ডিবি জানিয়েছে, তারা সবাই সেদিন সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। এর মধ্যে ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা গেছে শাহীনকে।
সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন সামাদ আজাদ। তবে তার দাবি, সেদিন তিনি ছাত্রদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
দুটি হত্যা মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবির রমনা বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক সমকালকে বলেন, “সংঘর্ষে দুইজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যায় জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছে একাধিক দল। দুই পক্ষের শত শত ব্যক্তি অংশ নেওয়ায় শনাক্ত করতে সময় লাগছে। কোনো নির্দোষ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য কাজটি সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে।”
ডিবির তদন্ত-সংশ্নিষ্ট অন্য এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেছেন, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ছবি নিয়ে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সেই ছবিগুলো দেখানো হচ্ছে। অনেকে দেহের গঠন, শরীরের উচ্চতা ও পোশাক দেখে শনাক্তে সহায়তা করছেন। তবে সরাসরি জড়িতদের প্রায় সবাই হেলমেট পরা থাকায় পুরোপুরি শনাক্ত করা যাচ্ছে না।”