ফরিদগঞ্জে যে কারণে এক বন্ধুর গলা কেটে হত্যা করলো আরেক বন্ধু

  • আপডেট: ০৩:০৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২
  • ৪৩

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি॥
ফরিদ উদ্দিন ভুইয়ার (২৫) এর মানিভ্যাগে এক হাজার টাকার ১০টি চকচকে নতুন নোট দেখে হঠাৎ লোভে পড়ে যায় বন্ধু সালাউদ্দিন ভুইয়া (৩৯)। সেই লোভ এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে পাশ্ববর্তী যুবক আব্দুর রহমান (২২) কে সাথে নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের আঁধারে ঘরে ঢুকে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় ফরিদ উদ্দিনকে।

চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার আলোচিত ফরিদ উদ্দিন হত্যার ঘটনার এমনই নির্মম স্বীকরোক্তি দিয়েছেন পুলিশের হাতে আটক দুই আসামি।

১৮ এপ্রিল সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম-বার।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল রাতে উপজেলার রূপসা দণি ইউনিয়নের ভুইয়া বাড়িতে নিজ বসত ঘর থেকে ফরিদ উদ্দিনের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, ফরিদ উদ্দিন ভূইয়া হত্যার ঘটনায় তার বোন জামাই দুলাল চৌধুরী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৩, তারিখ ১৬/০৪/২০২২। ধারা ৩০২/২০১/৩৪।

মামলা রুজু হওয়ার পর পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় এবং হাজীগঞ্জ সার্কেল সোহেল মাহমুদের প্রত্য তত্ত্বাবধানে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ রুবেল ফরাজী ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং আসামিদের গ্রেফতারে তৎপরতা চালান। এরপর প্রথমে ঘটনার সাথে জড়িত আসামি আব্দুর রহমানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুর রহমান ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং মূল আসামি সালাউদ্দিনের নাম ঠিকানা বলে দেন।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মো. সালাউদ্দিনকে ফরিদগঞ্জের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আটক আসামিরা ঘটনা স্বীকার করে জানান, মৃত ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আসামি সালাউদ্দিন ভূঁইয়া একই সাথে চলাফেরা করত। সালাউদ্দিন ভূঁইয়া পেশায় একজন ড্রাইভার। তার দুই স্ত্রীর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম এবং অপরজন ফরিদগঞ্জে থাকেন। সালাউদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে মৃত ফরিদ উদ্দিনের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করা হতো।

ঘটনার আগের রাতে ফরিদ উদ্দিন ও সালাউদ্দিন বাড়ির পাশের দোকানে আইপিএল খেলা দেখছিল। এসময় সালাউদ্দিন ফরিদ উদ্দিনের মানিভ্যাগে ১ হাজার টাকার ১০টি নতুন নোট দেখতে পায়। এই নতুন টাকা এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে পার্শ্ববর্তী আব্দুর রহমানকে নিয়ে ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করে সালাউদ্দিন।

ঘটনার রাতে তারা ফরিদের ঘরের দরজায় নক করে ধারালো দা’নিয়ে উৎ পেতে থাকে। ফরিদ উদউদ্দিন দরজা খুলতেই তারা ফরিদের ঘাড়ে ধারালো দা দিয়ে কোপ দেয়। ফরিদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা মৃতদেহ গুম করার জন্য তার শয়ন কে তোসকের ভিতরে প্যাঁচিয়ে রাখে। এরপর আসামীরা ফরিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং ১০ হাজার টাকার নতুন নোট নিয়ে চলে যায়। বাইরে এসে সালাউদ্দিন তার সহযোগী আব্দুর রহমানকে ৫হাজার টাকা দিয়ে ঢাকায় চলে যেতে বলে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফরিদগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ, ডিআইও-১ মনিরুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদ হোসেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

ফরিদগঞ্জে যে কারণে এক বন্ধুর গলা কেটে হত্যা করলো আরেক বন্ধু

আপডেট: ০৩:০৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি॥
ফরিদ উদ্দিন ভুইয়ার (২৫) এর মানিভ্যাগে এক হাজার টাকার ১০টি চকচকে নতুন নোট দেখে হঠাৎ লোভে পড়ে যায় বন্ধু সালাউদ্দিন ভুইয়া (৩৯)। সেই লোভ এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে পাশ্ববর্তী যুবক আব্দুর রহমান (২২) কে সাথে নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের আঁধারে ঘরে ঢুকে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় ফরিদ উদ্দিনকে।

চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার আলোচিত ফরিদ উদ্দিন হত্যার ঘটনার এমনই নির্মম স্বীকরোক্তি দিয়েছেন পুলিশের হাতে আটক দুই আসামি।

১৮ এপ্রিল সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম-বার।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল রাতে উপজেলার রূপসা দণি ইউনিয়নের ভুইয়া বাড়িতে নিজ বসত ঘর থেকে ফরিদ উদ্দিনের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, ফরিদ উদ্দিন ভূইয়া হত্যার ঘটনায় তার বোন জামাই দুলাল চৌধুরী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৩, তারিখ ১৬/০৪/২০২২। ধারা ৩০২/২০১/৩৪।

মামলা রুজু হওয়ার পর পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় এবং হাজীগঞ্জ সার্কেল সোহেল মাহমুদের প্রত্য তত্ত্বাবধানে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ রুবেল ফরাজী ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং আসামিদের গ্রেফতারে তৎপরতা চালান। এরপর প্রথমে ঘটনার সাথে জড়িত আসামি আব্দুর রহমানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুর রহমান ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং মূল আসামি সালাউদ্দিনের নাম ঠিকানা বলে দেন।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মো. সালাউদ্দিনকে ফরিদগঞ্জের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আটক আসামিরা ঘটনা স্বীকার করে জানান, মৃত ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আসামি সালাউদ্দিন ভূঁইয়া একই সাথে চলাফেরা করত। সালাউদ্দিন ভূঁইয়া পেশায় একজন ড্রাইভার। তার দুই স্ত্রীর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম এবং অপরজন ফরিদগঞ্জে থাকেন। সালাউদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে মৃত ফরিদ উদ্দিনের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করা হতো।

ঘটনার আগের রাতে ফরিদ উদ্দিন ও সালাউদ্দিন বাড়ির পাশের দোকানে আইপিএল খেলা দেখছিল। এসময় সালাউদ্দিন ফরিদ উদ্দিনের মানিভ্যাগে ১ হাজার টাকার ১০টি নতুন নোট দেখতে পায়। এই নতুন টাকা এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে পার্শ্ববর্তী আব্দুর রহমানকে নিয়ে ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করে সালাউদ্দিন।

ঘটনার রাতে তারা ফরিদের ঘরের দরজায় নক করে ধারালো দা’নিয়ে উৎ পেতে থাকে। ফরিদ উদউদ্দিন দরজা খুলতেই তারা ফরিদের ঘাড়ে ধারালো দা দিয়ে কোপ দেয়। ফরিদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা মৃতদেহ গুম করার জন্য তার শয়ন কে তোসকের ভিতরে প্যাঁচিয়ে রাখে। এরপর আসামীরা ফরিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং ১০ হাজার টাকার নতুন নোট নিয়ে চলে যায়। বাইরে এসে সালাউদ্দিন তার সহযোগী আব্দুর রহমানকে ৫হাজার টাকা দিয়ে ঢাকায় চলে যেতে বলে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফরিদগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ, ডিআইও-১ মনিরুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদ হোসেন।