• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ, ২০২২
সর্বশেষ আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২২

মতলবের ইয়াসমিন হত্যা: হত্যার পর স্ত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে নামাজে যান রেজাউল

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের ডেউয়াতলী গ্রামের গৃহবধূ ইয়াসমিন আক্তার (২২) হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের দাবি, ওই গৃহবধূকে হত্যার পর বসতঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ফজরের নামাজ পড়তে যান তার স্বামী রেজাউল করিম।

ইয়াসমিনকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার স্বামী রেজাউল করিমকে। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব ১১, সিপিসি-২, কুমিল্লার কম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।

মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা জানতে পারি ২০১৭ সালের শুরুতে রেজাউল করিম ইয়াসমিন আক্তারের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ডিংগাভাঙ্গা গ্রামে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করত। ওই বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার সুবাদে রেজাউল করিমের সাথে ইয়াসমিনের মা বেবী আক্তারের পরিচয় হয়। সেই সুবাদে রেজাউল করিম ঋণের কিস্তির টাকা নিতে ইয়াসমিনদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। আসা-যাওয়ার একপর্যায়ে ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে রেজাউল করিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের প্রেমের সম্পর্কটি এলাকায় জানাজানি হলে ইয়াসমিনের আগের স্বামী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ভিকটিমের তালাক হয়ে যায়। তাই খুব অল্প পরিসরে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রকার কাবিন ও ইসলামিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই রেজাউল করিম ভিকটিম ইয়াসমিন আক্তারকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। বিয়ে করে সে মালদ্বীপ চলে যায়। ‘

কম্পানি কমান্ডার জানান, গত ৭ জানুয়ারি রেজাউল মালদ্বীপ থেকে দেশে ফিরে আসেন। এরপর পরিবারের অমতে গত ১০ জানুয়ারি ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে রেজাউল করিমের ফের ইসলামিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর রেজাউল করিম ইয়াসমিনকে তার বাড়ি বরুড়ার ডেউয়াতলী গ্রামে নিয়ে আসেন। একদিকে রেজাউলের পরিবারের অমতে বিয়ে অন্যদিকে যৌতুকের চাপের কারণে তাদের পারিবারিক কলহ চরমে ওঠে।

রেজাউলের বরাত দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরো জানান, গত ১০ মার্চ বিকেলে স্বামীর সঙ্গে ইয়াসমিন আক্তারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা-কাটাকাটি হলে স্বামী রেজাউল তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। রাত ১০টার সময় রেজাউলের বাবা-মা ঘুমিয়ে গেলে পুনরায় তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হলে একপর্যায়ে রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে ইয়াসমিনের গলা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার কিছুক্ষণ পরে রেজাউল তার গায়ে হাত দিয়ে দেখেন তার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আছে। তিনি বুঝতে পারেন তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই। এমতাবস্থায় তিনি সারা রাত চিন্তা করতে থাকেন স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি পরিবার ও লোকমুখে জানাজানি হলে তিনি কী জবাব দেবেন। চিন্তা-ভাবনার একপর্যায়ে ১১ মার্চ ভোর ৫টার দিকে তিনি মৃত স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারের সারা শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজ পড়তে চলে যান।

মেজর সাকিব জানান, নামাজ শেষে স্থানীয় লোকজনের আগুন লাগার বিষয়ে কোনো আওয়াজ না পাওয়ায় তিনি পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারতের উদ্দেশ্যে চলে যান। রেজাউল কবরস্থানে থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে আগুন লাগার বিষয়ে জানতে পারেন এবং বাড়িতে যান। স্থানীয়রা আগুন নেভানোর সময় রেজাউলও তাদের সঙ্গে আগুন নেভানোর ভান করতে থাকেন এবং বলতে থাকেন ঘরে তার স্ত্রী ও বিদেশ যাওয়ার সকল কাগজপত্রসহ টাকা-পয়সা আছে। বিষয়টি বলতে বলতে রেজাউল জ্ঞান হারানোর ভান ধরে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে স্ত্রীর জানাজা শেষে হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাতবাসে যান।

জানা গেছে, এ বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে বরুড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • সারা দেশ এর আরও খবর
error: Content is protected !!