প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আমাদের নানা জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে চাল, তেল ও পেঁয়াজ অন্যতম। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে গত কয়েক দিন ধরে। তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যে পেঁয়াজ ছিল ৩০-৩৫ টাকা, এখন তা ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। তবুও দাম বেড়েই চলছে। সামনে রোজা। তা হলে ওই সময় দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। যেখানে রমজান মাসে দাম কম হওয়া উচিত, সেখানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। সপ্তাহের ব্যবধানে এভাবে দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ অনেক হতাশ।
পেঁয়াজের মূল্য ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নআয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। বাজারে চাল, ডাল, লবণ ও শাকসবজি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম ক্রয়মতার মধ্যে নেই। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজ ও তেলের দাম। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এর মানে রোজা সামনে রেখে এই ধরনের দাম বৃদ্ধি ঠিক হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যে পেঁয়াজের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। করোনায় নিম্নআয়ের মানুষ যা আয় করছে, তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য ব্যয় করার মতো অর্থ তাদের হাতে থাকছে না।
করোনায় সাধারণ মানুষের আয় কমেছে। তার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ একটাই- তা হচ্ছে বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ যে নেই, তা তো আরও সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেল পেঁয়াজ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড দেখে। অর্থনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী বাজারে চাহিদা ও জোগানের ওপর দব্যমূল্য নির্ভর করে। কিন্তু এ সংজ্ঞা এখন অনেক েেত্র কাজ করছে না।
বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে ২৫-৩০ টাকার পেঁয়াজ ৪৫ বা ৫০ টাকা হওয়ায় এখন আমরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছি যে, রমজানে যেন কতগুণ দাম বেড়ে যায়! সরকারি মনিটরিং, পত্রিকায় লেখালেখি, আলোচনা, সমালোচনা ও পরামর্শ- বহুকিছু হলেও ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম নিয়ে নানা কারসাজি করেই যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজ গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসায় দেশি ও ভারতের আমাদানি করা পেঁয়াজের দাম কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোনো শুভলণ নয়। পেঁয়াজের মতো পচনশীল দ্রব্য গুদামজাত করায় এক সময় অনেক পেঁয়াজ পচিয়ে ফেলতে দেখা গিয়েছিল। মানুষ কতটা লোভী ও অমানবিক হলে এ ধরনের খারাপ কাজ করতে পারে! যারা এই কাজ করেছে, তাদের ধিক্কার জানাই।
তার উপর আবার তৈলের দাম বাড়ানোর পরেও তৈলের দাম আরো বাড়ানোর প্রস্তাব করছে ভোজ্য তৈল ব্যবসায়ীরা। এটাক একটি বড় আতঙ্ক। সাধারণ মানুষ যা রুজী করছে তার সবটাই চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্য দ্রব্য কিনতে। তাহলে তাদের শিক্ষা-বাসস্থান-চিকিৎসায় কি ব্যয় করবে। এতের তাদের দুর্ভোগ বাড়বে।
ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলছে। গরিব মানুষের কথা একবার চিন্তা করে দেখছে না। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। এটিই এখন স্বাভাবিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা একান্ত কাম্য। অন্যথায় ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি আসতে পারে। তাই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
করোনার রেশ এখনো কাটেনি। অধিকাংশ জমি এখনো চাষাবাদের আওতায় আসেনি। ফলে অন্যের জমিতেও কাজ নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না কৃষক। এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি। এর ওপর বাজারে তেলের দাম আগের চেয়ে বেশি। তাই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খাদ্যসামগ্রী দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে বহু মানুষের। এর বাইরে প্রশাসনিক মনিটরিং তেমন না থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে। এক্ষেত্রে জেলার প্রতিটি বাজার ও হাটে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত। তবে বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে বলেও দাবি করে সাধারণ মানুষ।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্যের মজুদ রয়েছে। কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্য পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে নেই। আর নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের তৎপরতা মাঝে মধ্যে দেখা যায়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরণ অধিদপ্তরের নৈতিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। অনেক সময় অভিযান চালিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হলেও পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও ভেজাল পণ্যের সংখ্যা কমছে না। সরকারের কার্যক্রম অনেকটাই গতিশীল ও তৎপর। কিন্তু ক্রেতাদের যেমন মজুদ করা থেকে থামাতে পারছে না, তেমনি মূল্যবৃদ্ধিও ঠেকাতে পারছে না।
রমজান মাস আসার আগেই বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। রমজান এখনো ২ মাস বাকী ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বাড়ছে তৈলের দাম, সাবান, হুইল পাউডার সব কিছুরই দাম বাড়ছে।
হাজীগঞ্জ বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, আমরাতো আর মজুদ করিনা, কিনে এনে বিক্রয় করি। পাইকারী বাজারেই দাম বাড়াচ্ছে। আমরা যেই দামে কিনি হয়তোবা ২/৪টাকা লাভ করে বিক্রয় করি।
রমজান আসার আগেই আমাদের দেশে পণ্যের দাম বাড়ে- এটি নতুন নয়। তবে শুনেছি, অন্য দেশে বিভিন্ন উৎসবে দাম কমে। পবিত্র রমজান উপলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় রমজানের সব পণ্য এবং বড়দিন উপলে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো পণ্যবাজারে বিশাল মূল্যহ্রাস করে। কিন্তু আমাদের দেশে পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টো। রমজান উৎসব এলেই আমাদের দেশের খুচরা থেকে মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটার উৎসবে মেতে ওঠে। ফলে জনগণের নাভিশ্বাস ওঠে। এই দাম বৃদ্ধির সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদারকি নিয়মিত করতে হবে।
রমজানের শুরুতেই চাল, ডাল ও সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। করোনার এই সংকটে রমজান ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি বন্ধ থাকবে না। জিনিসের দাম বৃদ্ধিতে হতাশ হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। বিক্রেতারা নানা অজুহাত বা সংকটে দেখিয়ে থাকে। কিন্তু এই অজুহাত থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সরকারকে ওই বিষয়ে বেশি উদ্যোগী হতে হবে। রমজান আসার আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনেক কাজ করতে হবে- যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম না বাড়াতে পারে। রমজানে দেশের সাধারণ মানুষকে ক্রয়মতার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নির্ধারণ করে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সম হবে বলে মনে করছি। তবে করোনা মহামারীতে সরকার যেভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কাজ করছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকায় দেশের অধিকাংশ ক্রেতা-ভোক্তা তাদের অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন নন। ফলে সহজেই অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে পণ্যর দাম বাড়িয়ে অনেক লাভ করে নিয়ে যায়। তা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। অধিকন্তু অধিকাংশ ভোক্তা আসল-নকল চিহ্নিত করে সঠিক পণ্য পছন্দ করতে পারেন না। এতে তারা অনেক সময় বিপাকে পড়ে যান। তাই ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং অনেক প্রচার করতে হবে- যাতে সাধারণ নাগরিক জানতে পারে তাদের কীভাবে সঠিক পণ্য কিনতে হবে এবং কোন অন্যায় দেখলে সেখানে প্রতিবাদ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত যে কোনো নীতিনির্ধারণীমূলক েেত্র ভোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে- যাতে তাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে পারেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. শামসুল ইসলাম রমিজ বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত রমজান মাস আসলেই অসাধু কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা রোধ করার সমন্বয় করে উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক। তবে আমাদের দায়িত্ব হলো কোথাও কেউ অনিয়ম করলো কিনা, মূল্য তালিকা ছাটালো কিনা, খাদ্যে ভেজাল মিক্স করলো কিনা তা দেখা। বিষয়টি মনিটরিং করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ কর্মকর্তা আরো বলেন, আমি হাজীগঞ্জ উপজেলায় যোগ দেয়ার পর ভেজাল পণ্য, ভেজাল খাদ্যের বিষয়ে কঠোর ভূমিকা পালন করছি। এ পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য আইনে ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে অনেকের জেল ও জরিমানা হয়েছে। কিছু মামলা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।