‘জন্মের সুবর্ণে জাগো সম্প্রীতির স্বরে, মুক্তির ডাক দেয় পিতা আজও ঘরে ঘরে’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে অনলাইনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন তিনি।
আয়োজনে একই সাথে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রদান করা হয়।
দেশের ৬৪ জেলায় ন্যায় চাঁদপুর জেলা থেকে ৩টি সংগঠনের অর্ধশতাধিক নিবন্ধিত আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক ভারচুয়ালি যুক্ত হয়ে আয়োজনের উদ্বোধন পর্বে অংশগ্রহণ করেন। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলীয়ভাবে কবিতা আবৃত্তি করে চাঁদপুরের মতলব কবিতাঙ্গণ আবৃত্তি পরিষদ, সনক এবং সাহিত্য মঞ্চ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কবিতা, গান, নাটক বা সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে যেভাবে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়- তা আর কোনো কিছুতে হয় না। জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পরও যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তখনও প্রতিবাদ করেছেন কবি ও আবৃত্তিকারকরা। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা যাচ্ছিল না; তখন আমাদের কবিতার মধ্য দিয়েই প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে এবং মানুষ সেখানে উদ্বুদ্ধ হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ওপর কত বার আঘাত এসেছে কিন্তু বাঙালি বসে থাকেনি, প্রতিবারই প্রতিবাদ করেছে। কারণ, আমাদের সাহিত্য চর্চাতো বৃথাই হয়ে যেতো। এক একজন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার আমাদেরকে যা কিছু দিয়ে গেছেন এগুলো আমাদের সম্পদ।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি বলবো যে এ দেশের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে এ দেশের কবিদের এবং আবৃত্তিকারকদের। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের সকলের প্রতি।’’
কবিতার অমোঘ শক্তির কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা যখন আন্দোলন শুরু করলাম স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, তখনও কত নাটক, কবিতা-বিভিন্ন আবৃত্তির মধ্যদিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। সেখানে অনেক বাধা বিপত্তিও এসেছে। তখনকার কবিতার উৎসব অনেক বাধার মধ্যদিয়েই করতে হতো।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কথা বলে একটি মানুষকে যতটুকু উদ্বুদ্ধ করতে পারি, তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ একটা কবিতা, গান, নাটক বা সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে। যার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের কাছে পৌঁছনো যায়।’
বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্থানীয় আবৃত্তিশিল্পীদের পরিবেশনায় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দাউদ হায়দার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) ইমতিয়াজ হোসেন, সিনিয়র সংগঠক ফারুক বিন জামান, লায়ন দেওয়ান সুরুজ, ফারুক আহমেদ বাদল, কামরুন্নাহার কাদরী প্রমুখ।
মতলব কবিতাঙ্গণের দলীয় পরিবেশনায় নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি আইনুন নাহার কাদরী, সনক এর দলীয় পরিবেশনায় নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি শামসুল আরেফিন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক বদরুনন্নাহার লরিন, সাহিত্য মঞ্চের দলীয় পরিবেশনায় নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি মাইনুল ইসলাম মানিক, সাধারণ সম্পাদক আশিক বিন রহিম। বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব এর চাঁদপুর জেলা সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ইফতেখার উদ্দীন কাদেরী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে সারা দেশের আবৃত্তি সংগঠনগুলোর ফেডারেশন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এ আয়োজন করেছে। প্রথমবারের মত প্রবর্তিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রাপ্তরা হলেন গোলাম মুস্তাফা (মরণোত্তর), সৈয়দ হাসান ইমাম ও আশরাফুল আলম, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কাজী মদিনা ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দিন সংস্কৃতিবান্ধব কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং গুণী আবৃত্তিশিল্পীসহ ৫০ জনকে ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারক’ প্রদান করা হয়েছে।