• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১
সর্বশেষ আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১

নন্দিত নায়িকা, বাংলাদেশের সুপারস্টার শুভ জন্মদিন শাবনূর

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

বাংলা চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। অস্ট্রেলিয়ায় বোন , ভাই, সন্তানের সঙ্গে থাকেন। গ্লামার জগতের নিয়মই হচ্ছে যতদিন তুমি কাজ করবে ততদিন আলোচনায় থাকবে, দর্শকদের চর্চায় থাকবে। রুপালি জগৎ ছেড়ে দেবে দর্শক ও ভুলে যাবে,কিন্ত তিনি আশ্চর্য ব্যতিক্রম। সিনেমাতে না থেকেও দর্শক মনে আছেন। এখনো তাকে নিয়ে দর্শক মহলে নিয়মিত চর্চা চলে।এখনো তার যে কোন খবর পাঠক, দর্শকদের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ।এই যুগেও বছরের পর বছর ধরে এই যে ক্রেজ ধরে রাখা, এটাই মনে হয় একজন শাবনূরের কারিশমা।

যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারনের কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর থেকে হয়েছেন দর্শক নন্দিত নায়িকা, বাংলাদেশের সুপারস্টার। অথচ শুরুর গল্প হোচট খাওয়ার গল্প। ১৯৯৩ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কিশোরী নূপুর যখন তার এহতেশাম দাদুর হাত ধরে সিনেমায় আসেন প্রথম সিনেমা ” চাঁদনী রাতে ” ফ্লপ করল। ঘুরে দাড়ানোর গল্প সেখান থেকেই শুরু।এরপর নূপুর থেকে শাবনূর হয়ে সালমানশাহর সাথে জুটি বেধে একের পর এক উপহার দিয়েছেন তুমি আমার, স্বপ্নের ঠিকানা, স্বপ্নের পৃথিবী, আনন্দ অশ্রুর, তোমাকে চাই মত সিনেমা। নব্বই দশকে শুক্রবার মানেই তাই বিটিভিতে শাবনূরের দাপট, আর সিনেমা হলে দর্শকদের ভীড়।

মনে আছে ছোট বেলায় মেলায় গেলে অনেককে দেখতাম শাবনূরের কার্ড কিনে পরম যত্নে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। আর গ্রামের বাড়িতে অনেক ঘরে তার ছবির পোস্টার রাখা একটা নিয়মিত ঘটনা ছিল। এভাবেই শাবনূরের পৌঁছে গেছেন দর্শকদের মনের অন্দর মহলে। শাবনূরের সাথে, রুপালী পর্দা আর দর্শকদের এই রসায়নের রহস্য কি? ন্যাচারাল অভিনয়। আগের দিনে প্রযুক্তির এই রমরমা না থাকলেও শাবনূর অভিনয়টা করেছেন ফাটিয়ে। তার অভিনয়কে কোনদিন অভিনয় মনে হয়নি, বরং দর্শকের মনে হয়েছে তাদের নিত্য দিনের হাসি, কান্না, দুঃখ সিনেমার পর্দায় প্রকাশ পাচ্ছে শাবনূরের মাধ্যমে।পর্দায় তাই শাবনূর কাদলে দর্শক কাদে, শাবনূর হাসলে দর্শক হাসে।

শাকিব খান থেকে, ডিপজল, মিশা সওদাগরসহ অনেক অভিনেতার পছন্দের ঢালিউড অভিনেত্রী তাই তিনি। পূর্নিমা থেকে হালের মাহিয়া মাহি, পরীমনি, নুসরাত ফারিয়া, পূজা চেরী, ঢালিউডে নায়িকাদের অনেকেই আদর্শ মানেন শাবনূরকেই। বেশ কয়েকজন পরিচালকের সাথে কথা হয়েছে শাবনূর প্রসঙ্গে। জানতে চেয়েছি ক্যামেরার সামনের শাবনূর আর পেছনের শাবনূর কেমন? সবার উত্তরের একটাই সারাংশ ” কিছুক্ষন পর হয়ত কান্নার কোন দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে তার আগেও হয়ত ওকে দেখবেন হাসছে, কারো সাথে মজা করছে কিন্ত ক্যামেরার সামনে দাড়ানোর পরেই ও একেবারে বদলে যায়, পুরো চরিত্রের মাঝে ঢুকে যায়।বোঝার উপায় নেই কিছুক্ষন আগে এই মানুষটিই মজার মুডে ছিল “।

চারিত্রের ভেতর ঢুকে যাওয়া এটাই তার সফলতার কারন। হৃদয় শুধু তোমার জন্য সিনেমায় গ্রাম্য মেয়ে শাবনূর, স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ সিনেমার বড় লোক বাবার উচ্ছ্বনে যাওয়া কন্যা শাবনূর, তোমাকে চাই সিনেমার রোমান্টিক শাবনূর, মোল্লাবাড়ির বৌ সিনেমার কমেডিয়ান শাবনূর, দুই নয়নের আলো সিনেমার সিরিয়াস শাবনূর সব জায়গাতেই নিজেকে ভেঙ্গেছেন। এরপরেও আফসোস হয়, যদি আরো ভালো পরিচালক আর কাহিনীকার পেতেন ৪৩ এর শাবনূর এখনো পর্দা কাপিয়ে দিতেন। দেশী পরিচালকদের অনেকেই যে তার বয়সের সাথে যায় এমন চরিত্র তৈরি করতে পারেননি৷পঞ্চাশোর্ধ মাধুরী দীক্ষিত যেখানে এখনো নাচের ঝড় তোলেন , সেখানে আমাদের দেশের নায়িকাদের ক্যারিয়ার যে শেষ হয়ে যায় পঁয়ত্রিশেই!

এত বছর ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার কারন কি? ফেসবুক, ইউটিউবের এই যুগে দর্শক যেখানে অভিনয় শিল্পীদের হাচি কাশির খবর পর্যন্ত পেয়ে যায় শাবনূর সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিস্ক্রিয় ছিলেন এতদিন। টেলিভিশনে নাটক করেন নাই, বিজ্ঞাপন করলেও হাতে গোনা, আর টেলিভিশনে সেন্স অব হিউমার ছাড়া অন্য কোন শোতে অংশ নিয়েছেন বলে মনে করতে পারছিনা।শাবনূরকে দেখতে তাই পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে হলে যেতে হবে, কারন শাবনূর সহজলভ্য নয়। হ্যা ইদানীং ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে সক্রিয় হয়েছেন এখন ইউটিউবে চ্যানেল খুলছেন জানি তবু তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়বে না, কারন তিনি যে দর্শকদের শাবনূর।

নিউজ কাভার করতে যেয়ে কখনো মনে হয়নি এই মানুষটা দেশের এতবড় সুপারস্টার, কারন তারকাসুলভ ভাবেই নেননি সবার সাথে কি দারুন আন্তরিকতায় মেশেন, যেন পাশের বাড়ির মেয়ে। ব্যক্তি শাবনূর এই কারনেই আলাদা। এই কারনেই গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও প্রিয় নাম।

১৯৭৯ সালে আজকের দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন বাবা মায়ের কোল আলো করে৷ এরপর ঢালিউডের চলচ্চিত্রকে আলোকিত করলেন। দুই নয়নের আলোর জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, শেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন অসংখ্যবার। তবে সবচেয়ে বড় পুরস্কার দর্শকদের ভালোবাসা। বহুবার বলেছেন ফিট হয়ে আবার ফিরতে চান সিনেমায়, সেটা ক্যামেরার সামনে হোক বা পেছনে। অক্সিজেন ঘরে থাকা দেশের চলচ্চিত্র বাচাতে তার মত শিল্পীর যে কোন বিকল্প নেই। বয়স ৪৩? সম্ভব? তার জন্য বয়স যে একটা সংখ্যা মাত্র।

আজ ৪৩ শে পা দিলেন। শুভ জন্মদিন ঢালিউড সম্রাজ্ঞী।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

error: Content is protected !!