কচুয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাদ্দাম ও রিফাত সদ্য বিবাহিত ছিলেন, শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল উর্মির

  • আপডেট: ০৮:৪৯:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১
  • ৩৬

কচুয়া প্রতিনিধি ॥

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী উর্মি মজুমদার উমার চোখেমুখে স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা শেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। কিন্ত বৃহস্পতিবার তার পরিবারের সব স্বপ্ন চুর্ন করে দেয় একটি মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায়। উর্মি মজুমদার উমা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কচুয়া থেকে সিএনজি যুগে হাজীগঞ্জ যাওয়ার সময় চাঁদপুরের কচুয়া-হাজীগঞ্জ-গৌরিপুর সড়কের কড়ইয়া বিশ^রোড সংলগ্ন ডাক্তার বাড়ী এলাকায় ঢাকাগামী বিআরসিটি বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়। এসময় তার দুই সহপাঠী সাকিবুল ইসলাম সাদ্দাম ও মাহবুবুল ইসলাম রিফাত নিহত হন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ চোখের জলে উর্মি মজুমদার উমাকে নিজ গ্রাম উপজেলার দোয়াটি গ্রামে সৎকার করা হয়।
উর্মি মজুমদার উমা’র ছোট ভাই শুভ মজুমদার জানান, আমরা ৩ বোন ১ ভাই। প্রায় ৮ বছর আগে কুয়াতে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় বাবাকে হারাই। উর্মি মজুমদার উমা ২০১১ সালে পালাখাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি,২০১৪ সালে পালাখাল রোস্তম আলী এইচএসি ও ২০১৭ সালে বিএসসি পাস করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্সে ভর্তি হন।

এদিকে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান মজুমদারের ছেলে সাকিবুল হাসান সাদ্দামও লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকুরী করার স্বপ্ন দেখছিলেন। তার ভাই স্কুল শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, আমরা ৫ ভাই ২ বোন। ছোট ভাই সাকিবুল হাসান সাদ্দাম একজন স্বপ্ন বিলাসী মানুষ ছিলেন। প্রায় দের বছর আগে একই গ্রামের আসমা আক্তারের সাথে দু’পরিবারের ইচ্ছা বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের গৃহে আরিয়ান মজুমদার নামের ৩ মাসের একটি পুত্র সন্তান জম্ম হয়। বর্তমানে তার স্ত্রী আসমা আক্তার স্বামীকে হারিয়ে অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বার বার কান্নায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তার এবং পরিবারের সদস্যদের কান্না থামাতে পারছেনা কেউ।

অপর নিহত হওয়া কোয়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে মাহবুবুল ইসলাম রিফাত সরকারও সদ্য বিবাহিত ছিলেন। প্রায় এক বছর আগে একই উপজেলার সহদেবপুর গ্রামের রিয়া আক্তার নামে এক যুবতীর সাথে সংসারে আবদ্ব হন তিনি। চাঁদপুর সরকারি কলেজের অর্নাস ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুবুল ইসলাম রিফাত লেখাপড়ার পাশাপাশি কচুয়া সাব-রের্জিষ্টার অফিসে নকল নবীশ হিসেবে পাঠ টাইম কাজ করতেন। তার বোন শামিমা আক্তার জানান,আমরা ৩ ভাই ১ বোন। ভাই বোনদের মাহবুবুল ইসলাম রিফাত তৃতীয় ছিলো। অভাবি সংসারে লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে বিবিএস পরীক্ষার দিয়ে প্রশাসনিক ক্যাডার পদে চাকুরী করার ইচ্ছা ছিলো তার। মাহবুবুল ইসলাম রিফাতের মা হালিমা বেগম বলেন,আমার স্বামী বৃদ্ধ হওয়ায় ছেলে রিফাত কর্মকরে সংসার চালাতেন। এখন আমার সংসারের হাল কে ধরবে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। মাহবুবুল ইসলাম রিফাতের ভগ্নীপতি মো.শাহীন জানান, ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও থানা পুলিশ ছাড়া কেউ আমাদের খবর নেয়নি। এ সড়ক দূর্ঘটনার বিআরসিটি বাস চালকের দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি জানান নিহতের পরিবার।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

সর্বাধিক পঠিত

পঞ্চম শ্রেণির ২ শিক্ষার্থীর মারধরে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু

কচুয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাদ্দাম ও রিফাত সদ্য বিবাহিত ছিলেন, শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল উর্মির

আপডেট: ০৮:৪৯:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১

কচুয়া প্রতিনিধি ॥

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী উর্মি মজুমদার উমার চোখেমুখে স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা শেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। কিন্ত বৃহস্পতিবার তার পরিবারের সব স্বপ্ন চুর্ন করে দেয় একটি মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায়। উর্মি মজুমদার উমা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কচুয়া থেকে সিএনজি যুগে হাজীগঞ্জ যাওয়ার সময় চাঁদপুরের কচুয়া-হাজীগঞ্জ-গৌরিপুর সড়কের কড়ইয়া বিশ^রোড সংলগ্ন ডাক্তার বাড়ী এলাকায় ঢাকাগামী বিআরসিটি বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়। এসময় তার দুই সহপাঠী সাকিবুল ইসলাম সাদ্দাম ও মাহবুবুল ইসলাম রিফাত নিহত হন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ চোখের জলে উর্মি মজুমদার উমাকে নিজ গ্রাম উপজেলার দোয়াটি গ্রামে সৎকার করা হয়।
উর্মি মজুমদার উমা’র ছোট ভাই শুভ মজুমদার জানান, আমরা ৩ বোন ১ ভাই। প্রায় ৮ বছর আগে কুয়াতে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় বাবাকে হারাই। উর্মি মজুমদার উমা ২০১১ সালে পালাখাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি,২০১৪ সালে পালাখাল রোস্তম আলী এইচএসি ও ২০১৭ সালে বিএসসি পাস করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্সে ভর্তি হন।

এদিকে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান মজুমদারের ছেলে সাকিবুল হাসান সাদ্দামও লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকুরী করার স্বপ্ন দেখছিলেন। তার ভাই স্কুল শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, আমরা ৫ ভাই ২ বোন। ছোট ভাই সাকিবুল হাসান সাদ্দাম একজন স্বপ্ন বিলাসী মানুষ ছিলেন। প্রায় দের বছর আগে একই গ্রামের আসমা আক্তারের সাথে দু’পরিবারের ইচ্ছা বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের গৃহে আরিয়ান মজুমদার নামের ৩ মাসের একটি পুত্র সন্তান জম্ম হয়। বর্তমানে তার স্ত্রী আসমা আক্তার স্বামীকে হারিয়ে অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বার বার কান্নায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তার এবং পরিবারের সদস্যদের কান্না থামাতে পারছেনা কেউ।

অপর নিহত হওয়া কোয়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে মাহবুবুল ইসলাম রিফাত সরকারও সদ্য বিবাহিত ছিলেন। প্রায় এক বছর আগে একই উপজেলার সহদেবপুর গ্রামের রিয়া আক্তার নামে এক যুবতীর সাথে সংসারে আবদ্ব হন তিনি। চাঁদপুর সরকারি কলেজের অর্নাস ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুবুল ইসলাম রিফাত লেখাপড়ার পাশাপাশি কচুয়া সাব-রের্জিষ্টার অফিসে নকল নবীশ হিসেবে পাঠ টাইম কাজ করতেন। তার বোন শামিমা আক্তার জানান,আমরা ৩ ভাই ১ বোন। ভাই বোনদের মাহবুবুল ইসলাম রিফাত তৃতীয় ছিলো। অভাবি সংসারে লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে বিবিএস পরীক্ষার দিয়ে প্রশাসনিক ক্যাডার পদে চাকুরী করার ইচ্ছা ছিলো তার। মাহবুবুল ইসলাম রিফাতের মা হালিমা বেগম বলেন,আমার স্বামী বৃদ্ধ হওয়ায় ছেলে রিফাত কর্মকরে সংসার চালাতেন। এখন আমার সংসারের হাল কে ধরবে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। মাহবুবুল ইসলাম রিফাতের ভগ্নীপতি মো.শাহীন জানান, ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও থানা পুলিশ ছাড়া কেউ আমাদের খবর নেয়নি। এ সড়ক দূর্ঘটনার বিআরসিটি বাস চালকের দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি জানান নিহতের পরিবার।