দেশ ভাসছে উন্নয়নে, আমরা ভাসছি মেঘনায়: আক্ষেপ যুবলীগ নেতার

  • আপডেট: ১২:২০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯
  • ৬০

লক্ষীপুর প্রতিনিধি:

সারা দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে আর আমরা অসহায় মানুষ ভাসছি মেঘনায়- আক্ষেপ জানিয়ে এমন মন্তব্য করেন যুবলীগ নেতা মো. লিটন।

তিনি বলেন, প্রতিদিনই ভাঙছে মেঘনার পাড়। সর্বনাশী মেঘনা গিলে খাচ্ছে ঘরবাড়ি-ভিটেমাটিসহ মূল্যবান সম্পদ। বর্ষা না আসতেই ভাঙন তীব্র হচ্ছে। বর্ষা আসলে বর্তমান আবাসস্থলটিও তলিয়ে যাবে মেঘনার পেটে। একজন জনপ্রতিনিধিও ঘটনাস্থলে আসেননি। তিন বছরের অব্যাহত ভাঙনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনার কোল ঘেঁষে স্কুল-মাদ্রাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার সব তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ হারিয়েছে ভিটেমাটি।

স্থানীয় রামগতি ও কমলনগর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে তার কথার সত্যতা মেলে। বর্ষা না আসতেই লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন চরম আকার ধারণ করেছে। হুমকির মুখে রয়েছে দুই উপজেলার ১০ নতুন এলাকার হাজার হাজার মানুষের বাড়িসহ মূল্যবান সম্পদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৯৬ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ বেড়ি বাঁধ রয়েছে। মেঘনার ভয়ংকর থাবায় ইতিমধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা গেছে।

বিশেষ করে, কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট, পাটওয়ারীর হাট, চরফলকন, মাতব্বরহাট, লুধুয়া ও রামগতি উপজেলার বাংলা বাজার, আসলপাড়া, গাবতলী ও বড়খেরীসহ ১০ এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা হুমকির মুখে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পরিষদ, হাসপাতাল, আলেকজান্ডার বাজার ও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসত-বাড়ি, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

মেঘনার ভাঙনে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে খুপরি ঘর তুলে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। নতুন করে বসতবাড়ি হারিয়ে ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।

এবার বর্ষার শুরুতেই ফের ধস দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দু’পাশের এলাকা অব্যাহতভাবে ভাঙছে। অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিম্নমানের কাজ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বেড়ি বাঁধ রক্ষা ও ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

বিভিন্ন সংগঠন মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।

স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লিটন জানান, আগের সাংসদ এ এলাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যাপক কাজ করলেও বর্তমানে সাংসদ বিকল্পধারার নেতা মেজর (অব.) আবদুল মান্নান একবারের জন্যও সংসদে মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে কোনো ভূমিকা রাখেননি।

তিনি বলেন, আমাদের আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় নেই। সারা দেশ বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নে ভেসে যাচ্ছে, আর আমরা কমলনগরবাসী ভাসছি মেঘনায়।

ভাঙনের কবলে সর্বস্ব হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকার আবু তাহের নামে এক কৃষক জানান, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। দু-চার দিনের মধ্যে হয়ত ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্যত্রে। কয়েক একর সম্পত্তি ইতিমধ্যে মেঘনার ভাঙনে তলিয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন ও স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথাও যাব। চেয়ারম্যান-মেম্বার কী করবেন, স্থানীয় এমপি সাহেব নির্বাচনের পর এলাকায় আসেননি’।

রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ জানান, নদীভাঙন বিষয়ে স্থানীয় এমপি সংসদে কথা বলেছেন। বড় ধরনের একটি বরাদ্দ আমরা পেতে যাচ্ছি। ভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আমরা সরকারিভাবে গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তর করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিক উল্যাহ জানান, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার চার ইউনিয়নেরই বেশি ভাঙন উল্লেখযোগ্য। কয়েক স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্ষা আসলে তা আরো বেশি হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বা গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তরের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, চর পোড়াগাছা ও চরবাদাম ইউনিয়নের সরকারি খাস জমিতে আমরা বর্তমানে ভূমিহীনদের জমি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছি। তেলিরচর-১ ও ২ এ আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করেছি। আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধটি সম্প্রসারণের জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

মেঘনায় ইলিশ ধরার সময় কৃষি ব্যাংকের এজিএমসহ ১৪ জেলে আটক

দেশ ভাসছে উন্নয়নে, আমরা ভাসছি মেঘনায়: আক্ষেপ যুবলীগ নেতার

আপডেট: ১২:২০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯

লক্ষীপুর প্রতিনিধি:

সারা দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে আর আমরা অসহায় মানুষ ভাসছি মেঘনায়- আক্ষেপ জানিয়ে এমন মন্তব্য করেন যুবলীগ নেতা মো. লিটন।

তিনি বলেন, প্রতিদিনই ভাঙছে মেঘনার পাড়। সর্বনাশী মেঘনা গিলে খাচ্ছে ঘরবাড়ি-ভিটেমাটিসহ মূল্যবান সম্পদ। বর্ষা না আসতেই ভাঙন তীব্র হচ্ছে। বর্ষা আসলে বর্তমান আবাসস্থলটিও তলিয়ে যাবে মেঘনার পেটে। একজন জনপ্রতিনিধিও ঘটনাস্থলে আসেননি। তিন বছরের অব্যাহত ভাঙনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনার কোল ঘেঁষে স্কুল-মাদ্রাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার সব তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ হারিয়েছে ভিটেমাটি।

স্থানীয় রামগতি ও কমলনগর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে তার কথার সত্যতা মেলে। বর্ষা না আসতেই লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন চরম আকার ধারণ করেছে। হুমকির মুখে রয়েছে দুই উপজেলার ১০ নতুন এলাকার হাজার হাজার মানুষের বাড়িসহ মূল্যবান সম্পদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৯৬ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ বেড়ি বাঁধ রয়েছে। মেঘনার ভয়ংকর থাবায় ইতিমধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা গেছে।

বিশেষ করে, কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট, পাটওয়ারীর হাট, চরফলকন, মাতব্বরহাট, লুধুয়া ও রামগতি উপজেলার বাংলা বাজার, আসলপাড়া, গাবতলী ও বড়খেরীসহ ১০ এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা হুমকির মুখে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পরিষদ, হাসপাতাল, আলেকজান্ডার বাজার ও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসত-বাড়ি, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

মেঘনার ভাঙনে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে খুপরি ঘর তুলে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। নতুন করে বসতবাড়ি হারিয়ে ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।

এবার বর্ষার শুরুতেই ফের ধস দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দু’পাশের এলাকা অব্যাহতভাবে ভাঙছে। অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিম্নমানের কাজ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বেড়ি বাঁধ রক্ষা ও ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

বিভিন্ন সংগঠন মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।

স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লিটন জানান, আগের সাংসদ এ এলাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যাপক কাজ করলেও বর্তমানে সাংসদ বিকল্পধারার নেতা মেজর (অব.) আবদুল মান্নান একবারের জন্যও সংসদে মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে কোনো ভূমিকা রাখেননি।

তিনি বলেন, আমাদের আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় নেই। সারা দেশ বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নে ভেসে যাচ্ছে, আর আমরা কমলনগরবাসী ভাসছি মেঘনায়।

ভাঙনের কবলে সর্বস্ব হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকার আবু তাহের নামে এক কৃষক জানান, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। দু-চার দিনের মধ্যে হয়ত ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্যত্রে। কয়েক একর সম্পত্তি ইতিমধ্যে মেঘনার ভাঙনে তলিয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন ও স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথাও যাব। চেয়ারম্যান-মেম্বার কী করবেন, স্থানীয় এমপি সাহেব নির্বাচনের পর এলাকায় আসেননি’।

রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ জানান, নদীভাঙন বিষয়ে স্থানীয় এমপি সংসদে কথা বলেছেন। বড় ধরনের একটি বরাদ্দ আমরা পেতে যাচ্ছি। ভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আমরা সরকারিভাবে গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তর করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিক উল্যাহ জানান, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার চার ইউনিয়নেরই বেশি ভাঙন উল্লেখযোগ্য। কয়েক স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্ষা আসলে তা আরো বেশি হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বা গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তরের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, চর পোড়াগাছা ও চরবাদাম ইউনিয়নের সরকারি খাস জমিতে আমরা বর্তমানে ভূমিহীনদের জমি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছি। তেলিরচর-১ ও ২ এ আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করেছি। আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধটি সম্প্রসারণের জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।