মুক্তির পথে খালেদা!

  • আপডেট: ১২:৩৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০১৯
  • ৫১

অনলাইন ডেস্ক:

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। ১৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন তিনবারের এ প্রধানমন্ত্রী।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩৬। বিএনপির দাবি, এসব মামলার সবকটি রাজনৈতিক বিবেচনায় করা। যে দুটি মামলায় তার ১৭ বছর সাজা হয়েছে, সেটিও সরকারের হস্তক্ষেপে হয়েছে বলে দাবি দলটির।

৩৬ মামলার মধ্যে ৩৪টিতে খালেদা জিয়ার জামিন মিলেছে। গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা দুটিতেও জামিন পেয়েছেন তিনি।

যে দুটি মামলায় খালেদা জিয়া জামিনের অপেক্ষায় আছেন তা হলো- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। এই দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে এ মামলায় তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। আর গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন চাওয়া হয়েছে। দুটি মামলায়-ই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী জামিন পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন তার আইনজীবী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, আমরা আশা করব সরকার খালেদা জিয়ার মামলায় হস্তক্ষেপ করবে না। সরকার বাধা না দিয়ে দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। তিনি শিগগিরই মুক্তি পাবেন বলে আশা মওদুদের।

দুই সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়ার শিগগির মুক্তির আশাবাদ ব্যক্ত করে তার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আর মাত্র দুটি মামলায় জামিন বাকি আছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে এবং সরকার কোনো হস্তক্ষেপ না করলে, আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে বের হয়ে আসতে পারবেন।’

খালেদা জিয়ার আগের মামলাগুলোতে সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল দাবি করে বিএনপির এ আইনজীবী বলেন, ‘আইনগতভাবে এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন না পাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। রোববার (আজ) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আবার জামিনের জন্য মেনশন করব। জামিনের আবেদন আগেই করা আছে। দুই মাস সময় নেয়া হয়েছিল শুনানির জন্য। সেই সময় এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে এটা শেষ হবে। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার জামিনের বিষয়টিও এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে আশা করি।’

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটনি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদা জিয়ার মামলা আর জামিন নিয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা খালেদা জিয়ার জামিনে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না বলে আসছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েক দিন ধরেই বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আদালতের। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তার জামিনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তিকে সামনে রেখে বিএনপি একটা সমঝোতার পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্রদখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বর্জন করলেও বিএনপি কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেয়নি। একাদশ সংসদে যাবে না এমন ঘোষণা দিয়েও বিএনপির নির্বাচিত পাঁচ সংসদ সদস্য ও একজন নারী সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন।

শনিবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে কথা তোলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন হবে আশা করা যায়। আইনজীবীরা সেভাবেই এগোচ্ছেন। আমাদের তাড়াহুড়ো না করে বুঝেশুনে এগোতে হবে। তা হলে খুব শিগগির জামিন পাবেন তিনি (খালেদা জিয়া)। তার এ কথায় বৈঠকে স্কাইপে যুক্ত হওয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য নেতারাও একমত প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জমিরউদ্দিন সরকার রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার বাধা না দিলে অনেক আগেই খালেদা জিয়ার জামিন হয়ে যেত। আমরা আশা করি সরকার বাধা না দিলে তিনি খুব তাড়াতাড়ি জামিন পাবেন।

তথ্য সূত্র : যুগান্তর

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

মতলব উত্তর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস’সহ ২০৬ জনকে আসামী করে মামলা

মুক্তির পথে খালেদা!

আপডেট: ১২:৩৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। ১৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন তিনবারের এ প্রধানমন্ত্রী।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩৬। বিএনপির দাবি, এসব মামলার সবকটি রাজনৈতিক বিবেচনায় করা। যে দুটি মামলায় তার ১৭ বছর সাজা হয়েছে, সেটিও সরকারের হস্তক্ষেপে হয়েছে বলে দাবি দলটির।

৩৬ মামলার মধ্যে ৩৪টিতে খালেদা জিয়ার জামিন মিলেছে। গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা দুটিতেও জামিন পেয়েছেন তিনি।

যে দুটি মামলায় খালেদা জিয়া জামিনের অপেক্ষায় আছেন তা হলো- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। এই দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে এ মামলায় তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। আর গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন চাওয়া হয়েছে। দুটি মামলায়-ই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী জামিন পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন তার আইনজীবী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, আমরা আশা করব সরকার খালেদা জিয়ার মামলায় হস্তক্ষেপ করবে না। সরকার বাধা না দিয়ে দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। তিনি শিগগিরই মুক্তি পাবেন বলে আশা মওদুদের।

দুই সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়ার শিগগির মুক্তির আশাবাদ ব্যক্ত করে তার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আর মাত্র দুটি মামলায় জামিন বাকি আছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে এবং সরকার কোনো হস্তক্ষেপ না করলে, আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে বের হয়ে আসতে পারবেন।’

খালেদা জিয়ার আগের মামলাগুলোতে সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল দাবি করে বিএনপির এ আইনজীবী বলেন, ‘আইনগতভাবে এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন না পাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। রোববার (আজ) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আবার জামিনের জন্য মেনশন করব। জামিনের আবেদন আগেই করা আছে। দুই মাস সময় নেয়া হয়েছিল শুনানির জন্য। সেই সময় এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে এটা শেষ হবে। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার জামিনের বিষয়টিও এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে আশা করি।’

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটনি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদা জিয়ার মামলা আর জামিন নিয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা খালেদা জিয়ার জামিনে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না বলে আসছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েক দিন ধরেই বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আদালতের। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তার জামিনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তিকে সামনে রেখে বিএনপি একটা সমঝোতার পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্রদখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বর্জন করলেও বিএনপি কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেয়নি। একাদশ সংসদে যাবে না এমন ঘোষণা দিয়েও বিএনপির নির্বাচিত পাঁচ সংসদ সদস্য ও একজন নারী সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন।

শনিবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে কথা তোলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন হবে আশা করা যায়। আইনজীবীরা সেভাবেই এগোচ্ছেন। আমাদের তাড়াহুড়ো না করে বুঝেশুনে এগোতে হবে। তা হলে খুব শিগগির জামিন পাবেন তিনি (খালেদা জিয়া)। তার এ কথায় বৈঠকে স্কাইপে যুক্ত হওয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য নেতারাও একমত প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জমিরউদ্দিন সরকার রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার বাধা না দিলে অনেক আগেই খালেদা জিয়ার জামিন হয়ে যেত। আমরা আশা করি সরকার বাধা না দিলে তিনি খুব তাড়াতাড়ি জামিন পাবেন।

তথ্য সূত্র : যুগান্তর