• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
সর্বশেষ আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

একদিন হাতে রেখেই ম্যাচ জয় বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

ক্রীড়া ডেস্ক:

বাংলাদেশর বিপক্ষে পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচে একদিন বাকি থাকতে হেরে গেছে জিম্বাবুয়ে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৮৯ রানে অলআউট হয়েছে সফরকারীরা। তাতেই ইনিংস ও ১০৬ রানে জিতেছে স্বাগতিকরা।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে মাত্র ৫ ওভারের জন্য জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে নামিয়ে দুই উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের দু’টি উইকেটই নেন নাইম হাসান। তাও ইনিংসের প্রথম ওভারেই।

আজ দিনের শুরুতে, প্রথম দিনের মতোই টানা ৪ ওভার মেইডেন করেন আবু জায়েদ রাহী ও তাইজুল ইসলাম। দিনের পঞ্চম ওভারে কভার ড্রাইভে চার মেরে প্রথম রান নেন ব্রেন্ডন টেলর। তাইজুলের করা পরের ওভারে অন সাইডে ঠেলে দুই রান নেন ওপেনার কেভিন কাসুজা।

সে ওভারেই অবশ্য বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় কাসুজার। ওভারের চতুর্থ বলটিতে খানিক বাড়তি ফ্লাইট দেন তাইজুল। যাতে বিভ্রান্ত হয়ে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স খেলার চেষ্টা করেন কাসুজা। কিন্তু বল লাগে তার ব্যাটের বাইরের কানায়। প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে সহজেই সেটি লুফে নেন মোহাম্মদ মিঠুন। ফলে ৩৪ বলে ১০ রান নিয়ে সাজঘরে ফেরেন কাসুজা।

নিজের ইনিংসের শুরু থেকেই ধৈর্য নিয়ে ব্যাট করছিলেন জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর। কোনোরকমের ভুল শট না খেলে, একটু একটু করে এগিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের ইনিংস। কিন্তু নাঈম হাসান আক্রমণে আসতেই যেন কী হয়ে গেল তার, হারিয়ে বসলেন নিজের উইকেট।

দিনের ১১ ওভার যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো আক্রমণে আনা হয় ম্যাচের সফলতম বোলার নাঈম হাসানকে। কোনও ভুল করেননি নাঈম। নিজের প্রথম ওভারেই তুলে নিয়েছেন টেলরের উইকেট। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট নিয়ে প্রথম ধাক্কা দিয়েছিলেন নাঈমই।

তাই হয়তো আজ নাঈম আক্রমণে আসতেই প্রতিশোধ নেয়ার ভূত চাপে টেলরের মাথায়। প্রথমে খেলার চেষ্টা করেন রিভার্স সুইপ। যা তার ব্যাট, উইকেট এবং উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো লিটন দাসকে ফাঁকি দিয়ে বাই হিসেবে চলে যায় বাউন্ডারিতে।

সেই রিভার্স সুইপ মিস করেও যেনো শান্তি হয়নি টেলরের। তাই দুই বল পরেই উদ্ভ্রান্তের মতো ছক্কা হাঁকানোর আশায় স্লগ সুইপ করেন তিনি। যা ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে উঠে যায় আকাশে। শর্ট স্কয়ার লেগ থেকে সহজেই ক্যাচ লুফে নেন তাইজুল ইসলাম। সাজঘরের পথ ধরেন ৪৭ বলে ১৭ রান করা টেলরে।

মাত্র ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলায় প্রতি আক্রমণের পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। ম্যাচে বাংলাদেশের সফল বোলার নাঈম হাসান থেকে শুরু করে বাকি সব বোলারকেই একের পর এক পাঠাতে থাকেন সীমানা দড়ির ওপারে। যা দ্রুত রান এনে দিচ্ছিল জিম্বাবুয়েকে।

সিকান্দার রাজার সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিটাও হয়ে গিয়েছিল ৬০ রানের, তাও মাত্র ১৩ ওভারে। কিন্তু একটু বেশিই তাড়াহুড়ো দেখা গেল আরভিনের ব্যাটিংয়ের। ইনিংসের ৩০তম ওভারের শেষ বলে শর্ট পয়েন্ট অঞ্চল থেকে দ্রুত রান নেয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

কিন্তু ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ফিল্ডিং করে বাঁহাতের সরাসরি থ্রোতে ব্যাটিং প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল। ফলে বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক আরভিনের। এ ইনিংসে ৬ চার ও ১ ছয়ের মারে ৪৯ বলে ৪৩ রান করেছেন তিনি।

লাঞ্চ বিরতির পর ইনিংসের ৩৬তম ওভারে তাইজুল ইসলামের করা শর্ট লেন্থের ডেলিভারিটি সজোরে পুল করেছিলেন রাজা। বলে চলে যাচ্ছিল শর্ট মিড উইকেট দিয়ে। সেখানে দাঁড়ানো মুশফিক পুরো শরীর হাওয়ায় ভাসিয়ে দুই হাতে ক্যাচ ধরে ফেলেন। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে নিজে পড়ে গেলেও, বল হাত থেকে ছাড়েননি মুশফিক। শুধুমাত্র ফিল্ডার হিসেবে খেলতে নেমে মুশফিকের ষষ্ঠ ক্যাচ এটি। আউট হওয়ার আগে ৩৭ রান করেন রাজা।

রাজার বিদায়ের পর রেজিস উইকেটে চাকাভা আর টিমিসেন মারুমা বেশ সেট হয়ে গিয়েছিলেন। তাইজুলের টসড আপ বলটা মিড অনের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন চাকাভা, তামিম ছিলেন সেখানে। একদম টাইমিং করে দেওয়া লাফে বলটা চলে এলো হাতের মুঠোয়।

একদম ঈগলের মতো ক্যাচটা নিলেন তামিম; ১৮ রানে ফিরলেন চাকাভা, ১৬৫ রানে জিম্বাবুয়ে হারায় সপ্তম উইকেট। এরপর মাঠে নামা এন্ডিলভু চার দিয়ে শুরু করেন নাঈম হানাসের বলে কিন্তু পরের বলেই আটকে গেলেন ক্রিজে। ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করলেন, নাঈম আবেদন করার সময়েই জানতেন কাজ হয়ে গেছে। আম্পায়ার আঙুল ওঠাতে দেরি করলেন না, এন্ডিলভুও আর রিভিউ নিলেন না। তাতেই ১৭০ রানে ৮ম উইকেট হারায় সফরকারীরা।

দলীয় ১৮১ রানের মাথায় ৯ম উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। ব্যক্তিগত ৪১ রানে নাঈম হানাসের বলে তামিমের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে চার্লটন টিসুমাকে ০ রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন তাইজুল ইসলাম। সেই সাথে দলীয় ১৮৯ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।

এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৬৫ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। তবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে ভর করে রান পাহাড় গড়ে। ৬ উইকেট হারিয়ে ৫৬০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে।

প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নাঈমের শিকার ৫ জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার দ্বিতীয় ফাইফার। এছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।

টেস্ট ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের ১৪তম জয়। আর ইনিংস ব্যবধানে জয়ের কথা হিসেবে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় নজির। এর আগে শেরে বাংলায় খেলা সবশেষ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংস ও ১৮৪ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছিল সাকিব আল হাসানের দল।

সেই ম্যাচের পর খেলা ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মাস পর শেরে বাংলায় ফিরেই জয়ের দেখা গেলো মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত খেলা ১১৯ টেস্টে এটিসহ ১৪টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, ড্র হয়েছে ১৬টি ম্যাচ আর পরাজিত ম্যাচের সংখ্যা ৮৯টি।

চতুর্থ দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ১০৬.৩ ওভারে ২৬৫

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫৪ ওভারে ৫৬০/৬ ইনিংস ঘোষণা

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ( আগের দিন- ৯ ওভারে ১৬/২) ১৮৯ (৫৭.৩ ওভার)

ফল: বাংলাদেশ জয়ী ইনিংস ও ১০৬ রানে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • খেলাধুলা এর আরও খবর
error: Content is protected !!