পর্দার আড়ালে সমঝোতা: দেশ ও রাজনীতি ছাড়ছেন খালেদা

  • আপডেট: ০১:২০:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২৭

অনলাইন ডেস্ক:

অবশেষে সমঝোতার ভিত্তিতে দেশ ছাড়ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এমন গুঞ্জনই চাউর হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

নিজের প্রাপ্ত খেতাব ‘আপসহীন’ আর স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রিয় স্লোগান ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ’- এই দুইয়ের মুখোমুখি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাজা নিয়ে বন্দিদশায় রোগের সঙ্গে লড়াইকারী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এ দুটোই পরিত্যাগের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি গৃহিণী থেকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে তিনিই দলের কান্ডারি। জীবন বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসা নিতে তাকে বিদেশে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আর মুক্তির জন্য তাকে রাজনীতি থেকে যেতে হচ্ছে ‘সাময়িক অবসরে’! এ নিয়ে পর্দার আড়ালে সমঝোতা চলছে। বিষয়টি সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অবগত। গত দুদিন ধরে বিদ্যুৎ গতিতে এমন গুঞ্জন ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক চিত্র। চাউর আছে, শিগগিরই তিনি মুক্তি পাচ্ছেন। আর মুক্ত হলে সৌদি আরব অথবা যুক্তরাজ্য (লন্ডন) যাবেন খালেদা জিয়া। দুই দেশেই তিনি চিকিৎসাসেবা নিয়েছিলেন ইতোপূর্বে।

এদিকে দলীয় প্রধানের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওবায়দুল কাদেরও সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রীর (আইন ও স্বরাষ্ট্র) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন পাননি। আবেদন ও যৌক্তিকতা মিললে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

গতকাল শুক্রবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই মুহূর্তে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার শরীরের গুরুতর অবনতি হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে পরিবার থেকেই আবেদন জানানো হয়েছে সরকারের কাছে। এখন আর এগুলো নিয়ে সরকারের অন্য কোনো রাজনীতি না করে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।

২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের জরুরি সরকারের জামানায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও জামিনে মুক্তি নিয়েছিলেন। তখন থেকেই ‘চিকিৎসা নিচ্ছেন’ লন্ডনে। ওই সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন তারেক রহমান। চাউর আছে, তখনো পর্দার আড়ালে এমনই সমঝোতা হয়েছিল। সমঝোতাটা হয়েছিল খোদ দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তাই দলীয় প্রধানই দলকে জানিয়েছিলেন সুস্থ না-হওয়া পর্যন্ত তারেক রহমান সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য পরে তিনি (তারেক রহমান) কাউন্সিলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তিনিই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। স্কাইপিতেই দূরদেশ থেকে সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবরণ করেন খালেদা জিয়া। আগে থেকেই রোগে আক্রান্ত থাকলেও বন্দিদশায় শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। গত ১ এপ্রিল তাকে দ্বিতীয়বারের মতো বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আদালতের আদেশে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নানামুখী পরীক্ষা করা হচ্ছে; কিন্তু আতঙ্কের কারণে ওষুধ নিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। দিনে দিনে গুরুতর দিকে যাচ্ছে তার অবস্থা। স্বজনরা দফায় দফায় সাক্ষাৎ করেছেন। দীর্ঘ দুই বছরে উন্নতি না হওয়ায় গত সোমবার আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। বিদেশে চিকিৎসার ব্যয়ভারও বহন করতে ইচ্ছুক পরিবার। বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গেও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শের জন্য শামীম এস্কান্দার ও সেলিমা ইসলাম প্রবীণ আইনজীবী, গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শিগগিরই আদালতে একটি আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

এদিকে দলীয় একাধিক সূত্রের তথ্য, খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি রাজনৈতিক বলে মনে করে জিয়া পরিবার। সমঝোতা ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। তাই পর্দার আড়ালে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তির প্রক্রিয়া কী— এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাকে মুক্ত করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা যা-ই বলি না কেন, এখন সাময়িকভাবে তার কারামুক্তির জন্য দুটি পথই খোলা আছে। এর একটি হলো প্যারোল, অন্যটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় দণ্ড স্থগিত করা। সরকার যেকোনো সময় এই দুই প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্তি দিতে পারে।

দলের নীতিনির্ধারকদের একজন এই প্রতিবেদককে জানান, নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘সঠিক’ স্বীকার করে প্যারোলে মুক্ত হতে রাজি নন খালেদা জিয়া। তবে আদালতের মাধ্যমে জামিন পেলে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন। সুস্থ না-হওয়া পর্যন্ত তিনি রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসরে যাবেন বলেও ওই সূত্রের দাবি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে ৪’শ নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

পর্দার আড়ালে সমঝোতা: দেশ ও রাজনীতি ছাড়ছেন খালেদা

আপডেট: ০১:২০:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:

অবশেষে সমঝোতার ভিত্তিতে দেশ ছাড়ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এমন গুঞ্জনই চাউর হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

নিজের প্রাপ্ত খেতাব ‘আপসহীন’ আর স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রিয় স্লোগান ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ’- এই দুইয়ের মুখোমুখি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাজা নিয়ে বন্দিদশায় রোগের সঙ্গে লড়াইকারী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এ দুটোই পরিত্যাগের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি গৃহিণী থেকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে তিনিই দলের কান্ডারি। জীবন বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসা নিতে তাকে বিদেশে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আর মুক্তির জন্য তাকে রাজনীতি থেকে যেতে হচ্ছে ‘সাময়িক অবসরে’! এ নিয়ে পর্দার আড়ালে সমঝোতা চলছে। বিষয়টি সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অবগত। গত দুদিন ধরে বিদ্যুৎ গতিতে এমন গুঞ্জন ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক চিত্র। চাউর আছে, শিগগিরই তিনি মুক্তি পাচ্ছেন। আর মুক্ত হলে সৌদি আরব অথবা যুক্তরাজ্য (লন্ডন) যাবেন খালেদা জিয়া। দুই দেশেই তিনি চিকিৎসাসেবা নিয়েছিলেন ইতোপূর্বে।

এদিকে দলীয় প্রধানের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওবায়দুল কাদেরও সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রীর (আইন ও স্বরাষ্ট্র) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন পাননি। আবেদন ও যৌক্তিকতা মিললে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

গতকাল শুক্রবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই মুহূর্তে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার শরীরের গুরুতর অবনতি হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে পরিবার থেকেই আবেদন জানানো হয়েছে সরকারের কাছে। এখন আর এগুলো নিয়ে সরকারের অন্য কোনো রাজনীতি না করে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।

২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের জরুরি সরকারের জামানায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও জামিনে মুক্তি নিয়েছিলেন। তখন থেকেই ‘চিকিৎসা নিচ্ছেন’ লন্ডনে। ওই সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন তারেক রহমান। চাউর আছে, তখনো পর্দার আড়ালে এমনই সমঝোতা হয়েছিল। সমঝোতাটা হয়েছিল খোদ দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তাই দলীয় প্রধানই দলকে জানিয়েছিলেন সুস্থ না-হওয়া পর্যন্ত তারেক রহমান সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য পরে তিনি (তারেক রহমান) কাউন্সিলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তিনিই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। স্কাইপিতেই দূরদেশ থেকে সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবরণ করেন খালেদা জিয়া। আগে থেকেই রোগে আক্রান্ত থাকলেও বন্দিদশায় শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। গত ১ এপ্রিল তাকে দ্বিতীয়বারের মতো বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আদালতের আদেশে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নানামুখী পরীক্ষা করা হচ্ছে; কিন্তু আতঙ্কের কারণে ওষুধ নিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। দিনে দিনে গুরুতর দিকে যাচ্ছে তার অবস্থা। স্বজনরা দফায় দফায় সাক্ষাৎ করেছেন। দীর্ঘ দুই বছরে উন্নতি না হওয়ায় গত সোমবার আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। বিদেশে চিকিৎসার ব্যয়ভারও বহন করতে ইচ্ছুক পরিবার। বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গেও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শের জন্য শামীম এস্কান্দার ও সেলিমা ইসলাম প্রবীণ আইনজীবী, গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শিগগিরই আদালতে একটি আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

এদিকে দলীয় একাধিক সূত্রের তথ্য, খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি রাজনৈতিক বলে মনে করে জিয়া পরিবার। সমঝোতা ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। তাই পর্দার আড়ালে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তির প্রক্রিয়া কী— এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাকে মুক্ত করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা যা-ই বলি না কেন, এখন সাময়িকভাবে তার কারামুক্তির জন্য দুটি পথই খোলা আছে। এর একটি হলো প্যারোল, অন্যটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় দণ্ড স্থগিত করা। সরকার যেকোনো সময় এই দুই প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্তি দিতে পারে।

দলের নীতিনির্ধারকদের একজন এই প্রতিবেদককে জানান, নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘সঠিক’ স্বীকার করে প্যারোলে মুক্ত হতে রাজি নন খালেদা জিয়া। তবে আদালতের মাধ্যমে জামিন পেলে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন। সুস্থ না-হওয়া পর্যন্ত তিনি রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসরে যাবেন বলেও ওই সূত্রের দাবি।