নিজস্ব প্রতিনিধি॥
চাঁদপুরে গৃহপরিচারিকা তাছলিমা আক্তার (২৮) নামে এক নারীকে গৃহকর্তা কর্তৃক হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
নিহত তাছলিমার গলায় ওড়না পেচানো থাকলেও পা ২টি খাটের উপর বাকাঁ অবস্থায় পুলিশ দেখতে পেয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পুলিশ লাশ যে অবস্থায় পেয়েছে তাতে আত্যহত্যা পুরোপুরি ধারনা করা যায়না। এতে এ নিহতের সন্দেহের তীর এখন গৃহকর্তার পরিবারের দিকে রয়েছে। চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ ঐ নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনাটি মঙ্গলবার রাতে শহরের কুমিল্লারোডস্থ আহম্মদ শপিং কমপ্লেক্যের ৩য় তলায় মালিকের বাসায়। পুলিশ প্রশাসন বুধবার দুপুরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করেছে। এলাকাবাসী ও স্থানীয় একজন জন প্রতিনিধি অভিযোগ করে জানান,হত্যার শিকার নারী বিগত ১৪ বছর যাবত এ বাসায় কাজ করে। বাড়ির মালিক আব্দুর রশিদের ছেলে মো: জাবেদ আহমেদ মিয়া (প্রকাশ বিহারী ও পাকিস্তানি জাবেদ) তাকে বিয়ে দেয় জেলাধীন মতলব এলাকায়। বিয়ের পর স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় স্বামী নাছিরের কাছ থেকে তাকে তালাক দিয়ে তাদের বাসায় কাজের জন্য তাকে রেখে দেয়। নাম প্রকাশ নাকরা শর্তে এক জন জনপ্রতিনিধি জানান এরই মধ্যে গৃহকর্তা জাবেদ আহম্মেদের ভাইয়ের সাথে নিহত নারীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ নিয়ে তাদের পারিবারিক কলহ পর্যন্ত হয়েছে।
এলাকাবাসীর ও জনপ্রতিনিধিরা আরো জানান, ধারনা এ সম্পর্র্কের ঘটনা নিয়ে যে কোন ঘটনা ঘটেছে। হয়তোবা তাকে হত্যা করে লাশ ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। অথবা তার শারিরিক কোন পরীবর্তন হওয়ার কারনে এ ঘটনা সে ঘটাতে পারে। তবে এ ঘটনার আলোকে ঘটনাস্থলে বসবাসকারীদেরকে বা গৃহকর্তার ভাইকে আটক করে রিমান্ডে নেওয়া হলে প্রকৃত সঠিক ঘটনা বাহির হয়ে আসার সম্ভাবনা শতভাগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই পলাশ বড়ুয়া জানান, আমরা উদ্ধারকৃত লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। এটি আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যাকান্ড তা এখনি বলা সম্ভব নয়। কেননা মৃত নারীর পা খাটের ওপর বেঁকে পড়ে ছিলো। যেখানে সে খাটে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো বোঝা যাচ্ছে। তাছাড়া ওই নারীর গলায় ওরনা পেঁচিয়ে ছিলো। সেটি কি সে নিজে পাখায় পেঁচিয়েছে কিনা তা অনেকটা সন্দেহজনক।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ জানান, ঘটনাটি ঘটেছে একটি আবাসিক বাসার ৩য় তলায়। আমরা এখন পর্যন্ত লাশের সাথে থাকা বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। তাছাড়া আমরা মৃত ওই তাছলিমা আক্তারের মোবাইল, এনআইডি কার্ড (১০-১২-১৯৯২)সহ বেশকিছু আলামত তদন্ত সাপেক্ষে হেফাজতে নিয়েছি।
এদিকে ঘটনাটি ঘটে শহরের জাবেদ আহমেদের আবাসিক বাসায়। যিনি ব্যাক্তিগত কাজে চাঁদপুরের বাহিরে রয়েছেন বলে তার আত্বীয় মিশু জানান। তিনি আরো জানান,মৃত তাছলিমা স্বামী পরিত্যাক্তা। তার স্বামী ছিলেন মতলব দক্ষিণ নায়ের গাঁওয়ের নাছির।
এছাড়া তার পৈত্রিক বাড়ী বরিশালের ঝালকাঠী। সে প্রায় ১৪ বছর পূর্বে এ বাসায় কাজের লোক হিসেবে কাজ শুরু করে। এখন পুলিশ আমার মোবাইলটি পর্যন্ত জব্দ করে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।এদিকে ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ ও প্রশাসন) মোঃ মিজানুর রহমান। তিনি জানান,পুরো ঘটনাটি আমরা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি। এখনি কিছু বলতে চাচ্ছি না।তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা এই বাসার যাকে যখন প্রয়োজন হবে তাকেই ডেকে নিয়ে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত এ ঘটনার তেমন কোন ভিন্ন কিছু জানতে পারি নাই। তবে ধারনা করা হচেছ,আত্যহত্যা। ময়না তদন্ত রিপোটও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রিপোট আসলে বুঝা যাবে। শুনেছি তার মাথায় সমস্যা ছিল। তার ডাক্তারি কাগজ পত্র আমাদেরকে দেখিয়েছে। এ ব্যাপারে অপমৃত্যু মামলা দায়ের চিন্তা রয়েছে।