নিজস্ব প্রতিনিধি॥
হাঁসের খামারে হাসি ফুটেছে হতদরিদ্র দেলোয়ারের মুখে। শত বাঁধা পেরিয়ে সে এখন একজন স্বফল খামারি। ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলেও সে বাঁধা কাটিয়ে উঠছেন তিনি। ২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্কারী সিডরের আঘাতে স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় মেঘনা পাড়ের হতদরিদ্র দেলোয়ারের। মনোবল নিয়ে নতুন উদ্দ্যমে স্বপ্ন পুরণে আবারো পুরো দমে কাজ শুরু করেন তিনি। গড়ে তুলেছেন চার সহস্রাধিক হাঁস নিয়ে বিশাল খামার। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন অন্যদেরও। হাঁসের খামারের মাধ্যমে হাসি ফুটেছে বেকার যুবক দেলোয়ার ও তার পরিবারের সদস্যদের মুখে।
দেলোয়ার মিজি জানান, এক সময় নদীতে মাছ ধরা ও কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। কয়েকবারের নদীভাঙ্গনের শিকার হলেও সুখেই কাটছিল তার দিনগুলো। কিন্তু প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ এর আঘাতে ভেঙে যায় দেলোয়ার এর স্বপ্ন। সেই ঝড়ের তান্ডবে বসতঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে দেলোয়ার ও তার পরিবার।
এতো কষ্টের মাঝেও মনোবল হারারনি দেলোয়ার। জীবনযুদ্ধে আসা বাঁধায় পিছু না হটে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে যখন যেই কাজ পেয়েছে তাই করেছেন তিনি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাঁস পালনের কথা জানতে পেরে আগ্রহী উঠে দেলোয়ার। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন। দুই বছর আগে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী এলাকায় নতুন করে জেগে উঠা ‘মধ্য চর’ এর পতিত জমিতে গড়ে তুলেন হাঁসের খামার।
দেলোয়ার মিজি বলেন, ২০১৭ সালে আমি আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ঋণ করে সাত লক্ষা টাকা পুঁজি নিয়ে খামার তৈরি করি। শুরুতে দুইশত হাঁসের বাচ্চা নিয়ে শুরু করে এখন আমার খামারে রয়েছে চার সহস্রাধিক হাঁস। দুই বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকায়। আমার খামারে বর্তমানে ৬জন শ্রমিক কাজ করছে। খামার থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার ডিম পাই। হাঁস এবং ডিম বিক্রি করে প্রতিমাসে আমার লক্ষাধিক টাকা আয় হচ্ছে। আমার ইচ্ছে রয়েছে ২০ হাজার হাঁসের খামার তৈরির। সরকারের নিকট দাবি আমাকে যেন ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে আমি আরো বড় পরিসরে খামার করে আরো বেশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করতে পারবো।
দেলোয়ারের খামারে কর্মরত রুহুল আমিন, মো. শামিম ও মনির বলেন, আমরা বেকার অবস্থায় কষ্টের সাথে দিনযাপন করতাম। এখন এই খামারে কাজ করা মাধ্যমে যেই টাকা আয় হয় তা দিয়ে আমারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালই আছি।
নদীর চরে খামার তৈরি করায় নদীতে থাকা শামুক, ঝিনুক মাছসহ প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে এসব হাঁস। এতে হাসের ডিমের পুষ্টিগুনাগুন থাকে অনেক ভালো। অপর দিকে খাবার টাকা বেঁচে যাওয়া হাঁস প্রতিপালনে আর্থিকভাবেও অনেক লাভবান হন এ খামারী।
তার খামারে উৎপাদিত ডিমের চাহিদা রয়েছে বেশ। ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ডিম বিক্রি করা হয়ে থাকে।
চরভৈরবী দক্ষিণ পাড়া বগুলা এলাকার স্থানীয় যুবক আবুল বাসার, ছানাউল্লাহ দেওয়ান বলেন, একটা সময় অনেক কষ্টে দিন কেটেছে দেলোয়ারের। বর্তমানে তার দেওয়া হাঁসের খামারে পাল্টেছে ভাগ্যের চাকা। সে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। দেলোয়ার এর হাঁসের খামারে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক বেকার যুবকও হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
দেলোয়ার এর সাফল্যগাঁথা অন্য যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, দেলোয়ার মেঘনা নদীতে জেগে উঠা চরে হাঁস পালন করে সাফল্য দেখিয়েছে। সে এখন সমাজের বেকার যুবকদের জন্য আদর্শে পরিণত হয়ে উঠেছে। আমাদের উপজেলায় অনেক বিশাল চর অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে। দেলোয়ারের মত যদি অন্য বেকার যুবকরাও এগিয়ে আসে তাহলে ব্যাকারত্ব দূরের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ভালো প্রভাব পড়বে। তার হাঁসের খামারের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারিভাবে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য বেকার যুবকরাও যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে সে ব্যাপারেও আমাদের সহায়তা থাকবে।
ক্যাপশন : চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার চরভৈবরী এলাকার মেঘনা নদীর প্রত্যন্ত চরের পতিত জমিতে হাঁসের খামার দিয়ে সফলা পেয়েছে দেলোয়ার।