মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ:
চাঁদপুরে ৮টি উপজেলায় ব্যাপক হারে শীতকালীন শাক সব্জি চাষ করেছে কৃষকরা। এসব উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চলগুলো বাম্পার ফল হয়েছে সবজির। জেলার মতলব উত্তর ও সদর উপজেলার কৃষকরা বাজারে লাল শাক, মুলার শাক ও ধনিয়াপাতা সরবরাহ শুরু করেছেন। বর্ষার পানি জমিতে থাকায় অনেকে মাচান তৈরী লাউয়ের চাষ করেছে। এসব জমিতে লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। পানি চলে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মরিচ ও উচ্চ ফলনশীল টমেটু ফলন দিবে একমাসের মধ্যে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত শাক সব্জির আবাদ অব্যাহত থাকবে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছর জেলায় শীতকালীন শাক শব্জি আবাদের লক্ষ্যমাত্রাছিলো ৫০১০ হেক্টর। গত ১ মাসে জেলার ৮ উপজেলায় আবাদ হয়েছে ২হাজার ১শ’ হেক্টর। এর মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৯১০ হেক্টর, সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৯০০ হেক্টর। সবচাইতে কম আবাদ হয়েছে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৩৬০ হেক্টর। আর বাকী উপজেলায় আবাদের প্রক্রিয়া চলছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে মেঘনা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখাগেছে কৃষকরা শীতকালীন সব্জির জন্য অনেকেই জমি প্রস্তুত করছেন। আবার অনেকের সবজি বড় হয়েছে এবং বিক্রিও শুরু করেছেন। অধিকাংশ জমিতে লাল শাক, মুলার শাক, ধনিয়া পাতা, খিরাই, কুমড়া, লাউ, পুঁই শাক, টমেটোর আবাদ হয়েছে। তবে মেঘনা পাড়ের জমিগুলো বেশীরভাগ কৃষক খিরাই আবাদ করেন। এছাড়া মতলব উত্তর উপজেলায় খিরাই আবাদের জন্য জনপ্রিয়।
অপর দিকে চাঁদপুর সদর উপজেলার কুমারডগী ও হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর, কৈয়ারপুল বলাখাল এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়েছে, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বটবটি। এসব অঞ্চলের লাউ, কুমড়া, বটবটি চাঁদপুরের বাহিরে ঢাকা, চট্রগ্রামে প্রেরণ করা হয়। প্রতিদিন গভীর রাতে এসব লাউ, কাঁচা কুমড়া, কুমড়ার শাক ও লাউয়ের শাক ট্রাকে করে চয়ে যায় ঢাকা-চট্রগ্রামে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক হানিফ মিয়া জানান, গত ১মাস পূর্বেই তিনি তার জমিতে লাল শাক, মুলার শাক ও ধনিয়া পাতার আবাদ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বাজারে কয়েকবার বিক্রি করছেন। তবে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল তার জমির মুলার শাক কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। যার কারণে এখন আবার আবাদ করেছেন।
একই গ্রামের কৃষক শাহজাহান ও জাহাঙ্গীর খান জানান, মেঘনা পাড়ের কৃষকরা পলি মাটির কারণে বেশীরভাগ জমিতে খিরাই আবাদ করেন। কারণ খিরাই আবাদ করা হলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তারা আড়তেও বিক্রি করেন। প্রত্যেক কৃষক কমপক্ষে প্রতিবছর ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার খিরাই বিক্রি করেন।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, চাঁদপুর জেলায় শীতকালীন সব্জির আবাদ লক্ষ্যমাত্রার আলোকে প্রায় অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাজারে স্থানীয় শব্জি পুরোপুরি আমদানি শুরু হবে। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না থাকলে লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হবে এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন।