অনলাইন ডেস্ক
পাসপোর্টবিহীন পাইলটকে ইমিগ্রেশনে পার হতে অনুমতি দেয়ায় সাময়িক বরখাস্ত হচ্ছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদকে পাসপোর্ট ছাড়াই দেশের বাইরে যেতে দেয়াসহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব অবহেলার ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগমকে কমিটির আহ্বায়ক করে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব(রাজনৈতিক-৪) হেলাল মাহমুদ শরীফ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী।
কমিটির সদস্য সচিব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক-১) জাহাঙ্গীর আলম।
শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব গাজী তারিক সালমনের সই করা এক আদেশে বলা হয়, পাসপোর্টবিহীন পাইলটের কাতার ভ্রমণের কারণ অনুসন্ধান করবে কমিটি। এছাড়াও বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের ত্রুটিগুলো শনাক্ত করা হবে বলেও এতে জানানো হয়েছে।
কমিটি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।
সূত্র জানিয়েছে, এই ঘটনায় কয়েকজনকে ইতিমেধ্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় পাইলট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেননি বলে ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযোগ। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের পাইলট হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাও তার বিষয়ে ছিলেন নমনীয়।
ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এদিকে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, ঈদের দিন বিকেলে রওনা হই। এদিন সবাই উৎসবমুখর ছিলেন। ইমিগ্রেশনে আমার পাসপোর্ট দেখতে চাইলে এ ভুলটি আর হতো না। আমি তখনই পাসপোর্ট এনে ফ্লাইটে যেতাম। আসলে আমি যেমন ভুল করেছি, ইমিগ্রেশনও ভুল করেছে।
জানা গেছে, বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে বুধবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের একটি ড্রিমলাইনার দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়। বিশেষ এই বিমানের পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ।
তিনি পাসপোর্ট ছাড়াই কাতার যান, যেটি ধরা পড়ে সেদেশের ইমিগ্রেশনে। পরে তাকে ইমিগ্রেশনে আটকে রাখা হয়।
আইন অনুযায়ী, পাসপোর্ট ছাড়া কারো দেশত্যাগ কিংবা অন্য দেশে প্রবেশের সুযোগ নেই। ফজল মাহমুদ কাতার ইমিগ্রেশনকে জানান, তার পাসপোর্ট বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের লকারে।
পরে বিমানের নিরাপত্তা মহাব্যবস্থাপকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে ফজল মাহমুদের পাসপোর্ট উদ্ধার করেন বিমানের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ মহাব্যবস্থাপক (জিএম সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ) আশরাফ হোসেন।
তিনি জানান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদের নির্দেশনা মোতাবেক তিনি পাসপোর্ট উদ্ধার করেন এবং এই পাসপোর্ট কাতারে পাঠানোর উদ্যোগ নেন তিনি।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহিবুল হক বলেন, বিষয়টি ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের ব্যক্তিগত গাফিলতি। তিনি দেশে ফিরে আসার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভিভিআইপিকে বহন করতে যাওয়া কোনো ফ্লাইটের কোনো ক্রুর পাসপোর্ট ছাড়া যাওয়া ঠিক হয়নি। এটি বড় ধরণের অপরাধ। দেশে আসার পর তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে পাসপোর্ট ছাড়া লন্ডন যাওয়ায় বিমানের একজন পাইলটকে বড় অংকের আর্থিক জরিমানা গুনতে হয়েছে। ফজল মাহমুদ ড্রিমলাইনারের একজন ইনস্ট্রাকটরের দায়িত্বও পালন করছেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দেশে সরকারি সফরের অংশ হিসেবে বর্তমানে ফিনল্যান্ডে অবস্থান করছেন। ৮ জুন দোহা বিমানবন্দর হয়ে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তাকে বহন করতে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের ড্রিমলাইনার বর্তমানে কাতার অবস্থান করছে।