অনলাইন ডেস্ক:
দেশে গত আগস্ট-১৯ থেকে ১৮ নভেম্বর১৯ পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ে ১ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে তলব করা ৪৭ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫৮ টন অর্থাৎ, ১০ কোটি ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে তাদের খরচ হয়েছে গড়ে ৩৮ টাকা ২৬ পয়সা। অথচ এই পেঁয়াজ দেশের খুচরা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা কোথাও কোথাও তা ৩’শ টাকায়ও বিক্রয় হচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসার কারণ দেখিয়ে গত চারমাসে হু হু করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দেশিয় পেঁয়াজের মজুত থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় পেঁয়াজ না আসার সঙ্গে সঙ্গে তা আটকে দেয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। ফলে, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আসার পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি পেঁয়াজের ঝাঁজ।
দেশের ইতিহাসে চলতি বছর পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকা। দেশিয় পেঁয়াজ বাজারে পর্যাপ্ত না থাকায় সংকট নিরসনে বিভিন্ন দেশ থেকে গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশিয় পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা পেঁয়াজ নেয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। অথচ এই পেঁয়াজই আমদানি হয়েছে গড়ে ৩৮ টাকায়!
সরকারের নানা উদ্যোগের পরও যখন অস্থির পেঁয়াজের বাজার, তখন সিন্ডিকেটকারীদের ধরতে মাঠে নামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।
পেঁয়াজের দাম সহনীয় করতে এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৫ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেও, কার্যত কোনো কাজে আসেনি। ফলে, পেঁয়াজের কারসাজিতে জড়িত এমন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে মাঠে নামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বোর্ডের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব প্রতিষ্ঠান কবে, কত দরে, কি পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করেছে এবং কত দরে বাজারে ছেড়েছে।
এক্ষেত্রে বিস্ময়কর মুনাফার তথ্যাদি পাওয়া গেছে। এগুলো এখন যাচাই-বাছাই করে দেখছেন এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পাশাপাশি চিহ্নিত এসব প্রতিষ্ঠানকে একের পর এক তলব করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ৩৪১টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে এনবিআর। যার মধ্যে গতকাল সোমবার ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে তলব করেছে। আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে তলব করা হয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, অনুসন্ধানে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মূল্য কারসাজির সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার। প্রয়োজনে অধিকতর অনুসন্ধান ও তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহায়তা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
তলব করা পেঁয়াজ আমদানিকারক ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বর্তমানে কি পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত রয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজ আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। যারা আমদানি করেছেন, তারা আমদানির পরে কোথায় কোথায় বিক্রি করেছেন, এবং কী মূল্যে বিক্রি করেছেন। এখন পর্যন্ত তাদের হাতে কত টন পেঁয়াজ মজুত আছে, সেটাই আমরা জানার চেষ্টা করছি।’
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের নিজ কার্যালয়ে সহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা ১৩ জনকে ডেকেছিলাম। তাদের মধ্যে ১০ জন এসেছেন। আগামীকাল (আজ) ডেকেছি এমন চারজন আজ চলে এসেছেন। আজ মোট ১৪ জনের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করছি। আজ ও আগামীকাল (আজ) তাদের বক্তব্য নেয়ার পর আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব।’
সহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি পেঁয়াজের বাজার সহনশীল হয়ে যাবে। বিমানের কার্গোতে পেঁয়াজ আসছে, কিছু কিছু পেঁয়াজ যাত্রী বিমানেও আনা হচ্ছে। আমরা যেটা দেখছি, বাজারে এখনও যথেষ্ট পেঁয়াজ আছে। কোনো ঘাটতি নাই। তবে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেখার চেষ্টা করছি, কারা কারা পেঁয়াজ আমদানি করে এখনও বিক্রি করেননি। তারা বিক্রি করলে সঙ্কটটা কমে যাবে। সেই উদ্যোগটাই মূলত আমরা নিচ্ছি। আসলে বেশি দামে বিক্রি করছে কি না, কত দিন ধরে রেখেছে -এ জিনিসগুলো আমরা বের করার চেষ্টা করছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে এই শুল্ক কর্মকর্তা বলেন, কারোর বিরুদ্ধে পেঁয়াজ মজুতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমানিত হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, গতকাল সোমবারও রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। পাকিস্তান থেকে আনা পেঁয়াজ নেয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা।
পেঁয়াজের লাগামহীন বাজারের ফলে, দীর্ঘদিন থেকে স্বস্তি ফিরছে না সাধারণ মানুষের মাঝে। তবে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বারবার পেঁয়াজের ঝাঁজ কমার আশ্বাস দিলেও, তা কাজে আসেনি। নতুন করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি।