অনলাইন ডেস্ক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ নূর হোসেন নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যের জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা।
তিনি বলেছেন, ’আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমার কলিগরা আমার এটা শুনে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছেন, হয়ত আমার দল ক্ষমতায় থাকলেও মন্ত্রী হতে পারতাম না’।
বুধবার রাতে সংসদ অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়ত সম্পর্কিত ধারায় মশিউর রহমান রাঙ্গা এসব কথা বলেন।
তিনি এ সময় আরও বলেন, গত ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র দিবস পালন নিয়ে একটি সভা ছিল, ছোট্ট পরিসরে। মাইক বাইরে ছিল না, ভেতরে সাউন্ডবক্সের মধ্যে আমরা কথা বলেছি। নূর হোসেন দিবসও একই দিন ছিল। আমাদের ওখানে পুরান ঢাকা থেকে তখন কিছু লোক আসছিল নূর হোসেন চত্ত্বরে ওখানেই এরশাদ সাহেবকে গালাগালি করে এরশাদের দুই গালে জুতা মার তালে তালে এইভাবে কিছু কথা বার্তা শোনার পরে, ওনারা আমাদের অফিসে এসে বলেন। আমি দলের মহাসচিব হিসেবে ওনাদের শান্ত থাকতে বলি। কিন্তু তারা এ সময় হৈ চৈ করেন।
দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে সংসদে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি একটা ভুল করেছি। এ জন্য এই সংসদে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী।’ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে সম্প্রতি দেওয়া তার আপত্তিকর বক্তব্যের বিষয়ে বুধবার (১৩ নভেম্বর) সংসদে কার্যপ্রণালীর ২৭৪ বিধিতে (ব্যক্তিগত কৈফিয়ত প্রদান) ফ্লোর নিয়ে তিনি এ ক্ষমা চান।
রাঙ্গা বলেন, ১০ নভেম্বর ‘গণতন্ত্র দিবস’ নিয়ে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ একটি ছোট সভা ছিল। বাইরে কোনও মাইক ছিল না। ভেতরে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে আমরা কথা বলি। একই দিনে ‘নূর হোসেন দিবস’ও ছিল। পুরনো ঢাকা থেকে আমাদের কিছু লোক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। আসার পথে তারা নূর হোসেন চত্বরে শুনতে পান, এরশাদকে গালাগালি করা হচ্ছে।
‘এরশাদের দুই গালে, জুতো মারো তালে তালে’—এ ধরনের কিছু কথাবার্তা শোনার পরে আমাদের এখানে এসে তা বলেন। আমি দলের মহাসচিব হিসেবে তাদের শান্ত থাকতে বলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করি। গতকাল (মঙ্গলবার) অনেক কথা বলেছেন। আমি মনে করি, তারা আমাকে শাসন করেছেন। আমি একটা ভুল করেছি। এজন্য আমি নূর হোসেনের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। এটি নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছি।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো আপত্তিকর মন্তব্য করেননি দাবি করে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি প্রতিমন্ত্রী থাকতে এই সংসদে অনেক কথা বলেছি। এই সংসদে দাঁড়িয়ে অজস্রবার জয়বাংলা বলেছি। অজস্রবার জাতির পিতা বলেছি। জাতির পিতা নিয়ে যদি আমি কোনও রকম ভুল বলে থাকি, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সালে মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করেছি। শাজাহানসহ আমি সারাদেশে পরিবহন সচল রাখার জন্য কাজ করেছি। আঠারো দিন আমরা হেলিকপ্টারের মধ্যে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে আমি সন্ত্রাসবাদ-দুর্নীতিবাজ বলিনি। বলেছি, বিশ্বজিৎ হত্যা, জেলহত্যার বিচার হয়েছে। ক্যাসিনোরও বিচারও হয়েছে। ১৯৯০ সালের পরে খালেদা জিয়ার সময় কৃষক হত্যার কথা, একুশ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলার কথা বলেছি। এর রেকর্ডও আছে। তারপরও ভুল করলে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। যারা কলিগ আছেন, ক্ষমা সুন্দর সৃষ্টিতে দেখবেন।’
রাঙ্গা বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমার দল ক্ষমতায় এলেও মন্ত্রী হতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী করেছেন। আমাকে অনেক স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। তার সঙ্গে আমার এই ভালো সম্পর্কই থাকবে বলে মনে করি। কাউকে কটাক্ষ করে কিছু বলতে চাই না। আমার বলায় ভুল হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এরশাদ গুলি করে মারুন বা না মারুন, এটি সত্য যে, নূর হোসেন মারা গেছেন।’ নূর হোসেনের মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বলেও রাঙ্গা দাবি করেন।