তেল-পানির বোতল উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধলক্ষ মানুষ!

  • আপডেট: ০১:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৯
  • ৩৩

অনলাইন ডেস্ক:

বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোর থেকে তেল-পানির বোতল নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। সবার গন্তব্য পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চর পলাশ গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।

শনিবার সকাল আটটা বাজার আগেই ৫০ সহস্রাধিক নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে উঠে ফসলের পতিত ওই বিশাল মাঠ। এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজ আসবেন বলে মঞ্চও তৈরি করা হয়। তিনি পানি ও তেলে ফুক দিবেন। তার ঝাড়ফুকের পানি খেলে এবং তেল মালিশ করলে সব রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ও মনোবাসনা পূরণ হবে। এমন অন্ধ বিশ্বাস থেকেই হাজার হাজার নর-নারীর উপস্থিতি।

এবার অপেক্ষার পালা কাঠুরিয়া কবিরাজের। তার ভক্তরা বারবার কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন বার্তা জানিয়ে মাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলেন। হাজার হাজার নর-নারীর উপস্থিতি সামাল দিতে মঞ্চে এসে উঠলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু ও সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু। তারা উপস্থিত লোকজনকে ধৈর্য্য ধরে শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন।

বেলা ১১টার মধ্যেই পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পাইলাবর গ্রামের কাঠুরিয়া কবিরাজ এসে হাজির হলেন। তিনি সমাগত লোকজনের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় তিনি দাবি করেন, আমি মাইকে ফুক দেব, আর মাইকে আমার ফুকের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতলে ফুক কাজ করবে। বক্তব্য শেষ হতে না হতেই কাঠুরিয়া কবিরাজ মাইকে ফুক দিলেন। আর চারপাশে অবস্থান নেয়া হাজার হাজার নর-নারী তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরলেন। রোগবালাই মুসিবত দূর এবং মনোবাসনা পূরণের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন নর-নারীরা।

এ ব্যাপারে কথা হলে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রেণু যুগান্তরকে জানান, কিছু ভক্তের অনুরোধে এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন ঘটে। বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে আসেন।

পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান যুগান্তকে জানান, তিনি এ খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। সেখানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্রুততম সময়ে এ আয়োজন শেষ করেন।

এ ব্যাপারে দেশের সর্ববৃহৎ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সাবেক ইমাম কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গবেষক মুফতি মাওলানা এ কে এম সাইফুল্লাহ জানান, এভাবে মাইকে ফুক দেয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের আয়োজন প্রতারণা ও শিরকের শামিল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবুজ মিয়া নামের ওই কবিরাজ ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পায়লাবের গ্রামের অধিবাসী। তিনি বনে কাঠ কেটে জীবিকার্জন করেন। সপ্তাহে চারদিন কাঠ কাটেন এবং তিনদিন কবিরাজি করে থাকেন। স্বপ্নপ্রাপ্ত হয়ে এ ধরনের কবিরাজি করেন বলে দাবি তার।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

দেশে HMPV ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু, বাড়ছে আতঙ্ক

তেল-পানির বোতল উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধলক্ষ মানুষ!

আপডেট: ০১:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোর থেকে তেল-পানির বোতল নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। সবার গন্তব্য পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চর পলাশ গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।

শনিবার সকাল আটটা বাজার আগেই ৫০ সহস্রাধিক নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে উঠে ফসলের পতিত ওই বিশাল মাঠ। এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজ আসবেন বলে মঞ্চও তৈরি করা হয়। তিনি পানি ও তেলে ফুক দিবেন। তার ঝাড়ফুকের পানি খেলে এবং তেল মালিশ করলে সব রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ও মনোবাসনা পূরণ হবে। এমন অন্ধ বিশ্বাস থেকেই হাজার হাজার নর-নারীর উপস্থিতি।

এবার অপেক্ষার পালা কাঠুরিয়া কবিরাজের। তার ভক্তরা বারবার কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন বার্তা জানিয়ে মাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলেন। হাজার হাজার নর-নারীর উপস্থিতি সামাল দিতে মঞ্চে এসে উঠলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু ও সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু। তারা উপস্থিত লোকজনকে ধৈর্য্য ধরে শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন।

বেলা ১১টার মধ্যেই পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পাইলাবর গ্রামের কাঠুরিয়া কবিরাজ এসে হাজির হলেন। তিনি সমাগত লোকজনের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় তিনি দাবি করেন, আমি মাইকে ফুক দেব, আর মাইকে আমার ফুকের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতলে ফুক কাজ করবে। বক্তব্য শেষ হতে না হতেই কাঠুরিয়া কবিরাজ মাইকে ফুক দিলেন। আর চারপাশে অবস্থান নেয়া হাজার হাজার নর-নারী তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরলেন। রোগবালাই মুসিবত দূর এবং মনোবাসনা পূরণের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন নর-নারীরা।

এ ব্যাপারে কথা হলে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রেণু যুগান্তরকে জানান, কিছু ভক্তের অনুরোধে এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন ঘটে। বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে আসেন।

পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান যুগান্তকে জানান, তিনি এ খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। সেখানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্রুততম সময়ে এ আয়োজন শেষ করেন।

এ ব্যাপারে দেশের সর্ববৃহৎ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সাবেক ইমাম কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গবেষক মুফতি মাওলানা এ কে এম সাইফুল্লাহ জানান, এভাবে মাইকে ফুক দেয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের আয়োজন প্রতারণা ও শিরকের শামিল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবুজ মিয়া নামের ওই কবিরাজ ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পায়লাবের গ্রামের অধিবাসী। তিনি বনে কাঠ কেটে জীবিকার্জন করেন। সপ্তাহে চারদিন কাঠ কাটেন এবং তিনদিন কবিরাজি করে থাকেন। স্বপ্নপ্রাপ্ত হয়ে এ ধরনের কবিরাজি করেন বলে দাবি তার।