অনলাইন ডেস্ক:
একজন শাহরিয়ার। বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই নামের আইডিতে অনিয়ম ও ভেজালবিরোধী অভিযানের লাইভ দেখাতেন মঞ্জুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার। ছয় দিনের ব্যবধানে একই পণ্যের দ্বিগুণ দাম নেয়ায় আড়ংয়ের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়ার পরই তাকে বদলি করায় দেশজুড়ে এখন পরিচিত নাম মঞ্জুর শাহরিয়ার।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এই উপপরিচালকে বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করার পরই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। হঠাৎ তার বদলির কারণে ক্ষোভ দেখান নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
প্রজ্ঞাপনে বরাবরের মত জনস্বার্থে ঢাকা থেকে খুলনায় বদলির কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষ বলছেন, আড়ংকে জরিমানা করায় তাকে বদলি করা হয়েছে। এমন প্রশ্ন মঞ্জুর শাহরিয়ারের নিজের ছোট্ট মেয়ের মনেও উঁকি দিয়েছে। বাবার কাছে তাই জানতে চেয়েছে ভালো কাজ করার পরও কেন তাকে বদলি করা হলো?
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এই প্রজ্ঞাপনকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিলেও নিজের ছোট্ট মেয়ের প্রশ্নের উত্তরে কিছুই বলতে পারেননি তিনি। বললেন কিছু বলতে না পারাটাই আমার ব্যর্থতা।
সোমবার দুপুরে উত্তরা আড়ংকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি। এরপর রাতেই তার বদলির আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গণমাধ্যমকে মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, আমার ছোট্ট মেয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘বাবা তুমি ভালো কাজ করলে তোমাকে বদলি করা হলো কেন?’ আমি তার উত্তর দিতে পারিনি। এটাই আমার ব্যর্থতা। তাকে উত্তর দেওয়ার জবাব আমার জানা নেই। আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী যেখানেই বদলি করা হবে, সেখানেই কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আগে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। সুনামগঞ্জে দায়িত্ব পালনের পর যখন আমার বদলি হলো, সেখানের মানুষ আমার জন্য কান্নাকাটি করেছে, মানববন্ধন করেছে। বললেন, এসবই প্রাপ্তি। আর যেখানেই যাবেন সেখানে ন্যায়ের পক্ষে কাজ করবেন।’
তবে ঈদের ঠিক একদিন বা দুদিন আগে এই বদলিটা নিজের পরিবারের জন্য সুখকর নয় বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি যেখানেই যে অবস্থায় থাকি, ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে যাবো। এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করেছি, সেসব এলাকায় ন্যায় ও সুনামের সঙ্গে কাজ করেছি। সেইসব জেলার মানুষ এখনও আমাকে ফোন করে, মনে রেখেছে। তবে ঈদের আগে আমার পরিবারের জন্য এই বদলির আদেশটি বিব্রত ও সুখের সংবাদ না।’
সোমবার দিবাগত রাতে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি আজকে সারাদিনই ব্যস্ত ছিলাম। উত্তরা ও গুলশান এলাকায় অভিযানে ছিলাম। সেখান থেকে এসে অফিসে কাজ করেছি। ইফতার করেছি বাইরে। এরপর বেসরকারি টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছি। সেখান থেকে বের হয়ে রাতে ফের আরটিভির আলোচনায় অংশ নিতে বের হই। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে আমার ভাই ফোন দিয়ে আমাকে জানায়, আমার বদলি হয়েছে। আমি আলোচনার বিরতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে বদলির আদেশটি দেখতে পাই। এরপর আরটিভি থেকে বাসায় চলে আসি।’