শাহরাস্তি প্রতিনিধি॥
জনম দূঃখী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মনোহর আলী (৫৫)। ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে তার সংসার। তিন মেয়েকে নিয়ে থাকেন একটি ঝুঁপড়ি ঘরে। গত কয়েক দিন ধরে মনোহর আলীর দূঃখ দূর্দশা নিয়ে লেখা-লেখি হয় সামাজিক যোগাযোগরে মাধ্যম ফেইসবুকে। ঘটনাটি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম’র নজরে আসে।
তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আকতারকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মনোহর আলীর বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে বলেন। ইউএনও মনোহর আলীর খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে সত্যই অসহায় ও দূর্দশার মধ্যে পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করছেন তিনি। সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমকে বিষয়টি অবহিত করেন ইউএনও। সংসদ সদস্যের নির্দেশে ইউএনও শিরিন আকতার তাকে নগদ ৫ হাজার টাকা ও চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে দেন।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শোরশাক গ্রামের বাসিন্দা মৃত গফুর আলীর ছেলে মনোহর আলী। স্ত্রী আশরাফী বেগম, তিন মেয়ে জ্যোস্না সালমা ও নাজমাকে নিয়ে থাকেন পলিথিন মোড়ানো একটি ঝুঁপড়ি ঘরে। অনাহারে অর্ধাহারে ঝুঁপড়ি ঘরেই জীবন কাটে তাদের। সরকারের দেয়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কোন সহায়তা তার ভাগ্যে জোটেনি। বড় মেয়ে জ্যোস্নাকে বিয়ে দিলেও অভাব অনটনের কারণে স্বামী তাকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছে।
গতকাল রোববার সকালে মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম সরাসরি সেই মনোহর আলী ও তার পরিবারকে দেখতে শোরসাক গ্রামে হাজির হউন। সেখানে অন্ধ মনোহর আলী সংসদ সদস্যকে কাছে পেয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় সংসদ সদস্য ও তার সাথে থাকা ইউএনও শিরিন আকতার, পৌর মেয়র আবদুল লতিফ মিয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান মিন্টু, থানার ওসি মো. শাহ আলম, ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদারসহ নেতা-কর্মীদের কেহই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
মনোহর আলী তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, অনেক বছর ধরে খুবই কষ্টে আছি। কেউ কখনো খোঁজখবর নেয়নি। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভয়ে ঘরে আতঙ্কিত হয়ে থাকতাম। আপনি (স্থানীয় সংসদ সদস্য) আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমারা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ আপনার সহায় হউক। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও হাত তুলে দোয়া করেন।
মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম অন্ধ মনোহর আলীকে আশ্বস্থ করে বলেন, আপনার জন্য তিন শতাংশ জায়গা কিনে একটি বাড়ী করে দেয়া হবে। আপনার দুই মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। যেই পর্যন্ত আপনার বাড়ী না হবে সেই পর্যন্ত আপনাকে বাসা ভাড়া করে দেয়া হবে। সেই বাসায় আপনারা থাকবেন। এ সময় রফিকুল ইসলাম অন্ধ মনোহর আলীর হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। তিনি মনোহর আলীর পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটান।
মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের আনাছে কানাছে অনেক মনোহর আলী পড়ে আছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের মানুষের দূঃখকষ্ট লাগবের জন্য কাজ করছেন। সেখানে একজন মনোহর আলী স্ত্রী সন্তান নিয়ে এভাবে দূঃখ কষ্টে থাকবে তা মেনে না যায়না। আমরা তাকে জায়গা কিনে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্ব-রুপ একটি ঘর প্রদান করবো।
একই দিন দুপরে হাজীগঞ্জ উপজেলায় শেখ হাসিনার উপহার আশ্রহয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ‘যার জমি আছে, ঘর নেই’ প্রকল্পে ২৪০জন গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘরের চাবি তুলে দেন।
ছবি পাঠানো হয়েছে।
২২.০৯.২০১৯