আসছে শীতকাল জানান দিচ্ছে কাঁশফুল

  • আপডেট: ০৪:২৪:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৯
  • ৪৪

ডেস্ক নিউজ:

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। দুই মাস পর পরই আমাদের দেশে ঋতুর পরিবর্তন হয়। এই ঋতু পরিবর্তনে এখন বইছে শরৎকাল। নাগরিক কোলাহল আর যাপিত জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝে চুপিচুপি আসে শরৎ। আর প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় শরতের আগমনী বার্তা।

শরতের বিকালে নীল আকাশের নিচে দোলা খায় শুভ্র কাশফুল। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা শরৎ ছাড়া আর কে ভাসাতে পারে? তাইতো শরতের বন্দনায় বিমোহিত হয়ে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম লিখেছেন- “কাশফুল মনে সাদা শিহরন জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি। শরৎ এর আর এক রুপ, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, শান্ত ঠান্ডা বাতাস বাবরী চুল উড়িয়ে নিয়ে যায় বাতাসে দোল খায় সাদা মেঘ গুলো। মনে জাগরণ জাগায়-শরীরে কেমন জানি শিহরণ জাগায়- সাদা মেঘ গুলো- আকাশে উড়ে যায়।

ঋতু অনুসারে ভাদ্র-আশ্বিন মাস জুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। নিকট অতীতেও দেখা গেছে, শরৎকাল এলেই গ্রাম-বাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে কাশফুলের মন মাতানো নাচানাচি। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো বাতাসে। গলাগলি হতো একটার সাথে আর একটার। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেত। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই স্নিগ্ধতা। প্রকৃতিতে শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। নদীর দুই ধারে, জমির আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। এখন গ্রাম-বাংলায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশবন চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত।

প্রকৃতির এ অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় কেবল মাত্র গ্রামাঞ্চলে। তাই তো প্রকৃতির এ অপার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছুটতে হয় ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড় ছোট কোনো গ্রামে। কাশফুলের দেখা মিলল সন্দ্বীপের মুছাপুর গ্রামের গুরুদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বেড়ীবাঁধ এলাকায় ফুটে আছে সাদা কাশফুল। এ দৃশ্য সবার নজর কাড়ে। সেখানে যেতে হবে শিশির-ভেজা দুর্বা ঘাস মাড়িয়ে,লজ্জাবতীর মায়াবি পরশ ডিঙিয়ে। নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শহরগুলো এভাবেই শরতের সৌন্দর্যকে শুইয়ে দিচ্ছে সাদা কাফনের ভেতরে। শরতে মাঠে মাঠে এখন নতুন ধানের সমারোহ। কৃষকের মনে নবীন আশা, সাজ সাজ রব। দোয়েল-কোয়েলের কুজনে মুখরিত পল্লী গ্রাম-মাঠ-ঘাট, জনপদ। বিশেষ করে হিন্দু সমপ্রদায়ের ঘরে ঘরে প্রহর গোনা শুরু হলো এই শরতে, কৈলাশ ছেড়ে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা আসবেন তাদের গৃহে। নদীর পাড়ে কাশফুলের জেগে ওঠার আভাস দেখেই বাতাসে রটে গেছে শরৎ এসেছে, পূজা আসছে।

এ কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। আপনা থেকে অথবা বীজ ছিটিয়ে দিলেই কাশবনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি, দোন তৈরি করে থাকে। আর কৃষকরা ব্যবহার করে ঘরের ছাউনি হিসেবে। কিন্তু শহরের যান্ত্রিক জীবনে এর রূপ দেখার সময় কোথায়! কাশফুল মূলত ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। ঘাস প্রজাতির উদ্ভিদ হওয়ায় এর মূল গুচ্ছমূল। কাশফুল আগাছা হিসেবে বিবেচিত হলেও শুকনো কাশগাছ খুব কাজের জিনিস। কাশগাছ দিয়ে তৈরি করা হয় মাদুর, সীমানার বেড়া। এমনকি ঘরের চালও ছাওয়া হয়। শরতের স্নিগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ! এ সময় না আছে গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ, না আছে বর্ষার অঝোর ধারার বৃষ্টি। আছে শুধু আলোকোজ্জ্বল ঝলমলে দিন, জ্যোৎস্না রাত, মৃদুমন্দ সমীরণ আর সেই সমীরণে দুলতে থাকা শুভ্র কাশবন।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

চাঁদপুরে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা

আসছে শীতকাল জানান দিচ্ছে কাঁশফুল

আপডেট: ০৪:২৪:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৯

ডেস্ক নিউজ:

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। দুই মাস পর পরই আমাদের দেশে ঋতুর পরিবর্তন হয়। এই ঋতু পরিবর্তনে এখন বইছে শরৎকাল। নাগরিক কোলাহল আর যাপিত জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝে চুপিচুপি আসে শরৎ। আর প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় শরতের আগমনী বার্তা।

শরতের বিকালে নীল আকাশের নিচে দোলা খায় শুভ্র কাশফুল। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা শরৎ ছাড়া আর কে ভাসাতে পারে? তাইতো শরতের বন্দনায় বিমোহিত হয়ে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম লিখেছেন- “কাশফুল মনে সাদা শিহরন জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি। শরৎ এর আর এক রুপ, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, শান্ত ঠান্ডা বাতাস বাবরী চুল উড়িয়ে নিয়ে যায় বাতাসে দোল খায় সাদা মেঘ গুলো। মনে জাগরণ জাগায়-শরীরে কেমন জানি শিহরণ জাগায়- সাদা মেঘ গুলো- আকাশে উড়ে যায়।

ঋতু অনুসারে ভাদ্র-আশ্বিন মাস জুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। নিকট অতীতেও দেখা গেছে, শরৎকাল এলেই গ্রাম-বাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে কাশফুলের মন মাতানো নাচানাচি। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো বাতাসে। গলাগলি হতো একটার সাথে আর একটার। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেত। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই স্নিগ্ধতা। প্রকৃতিতে শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। নদীর দুই ধারে, জমির আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। এখন গ্রাম-বাংলায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশবন চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত।

প্রকৃতির এ অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় কেবল মাত্র গ্রামাঞ্চলে। তাই তো প্রকৃতির এ অপার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছুটতে হয় ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড় ছোট কোনো গ্রামে। কাশফুলের দেখা মিলল সন্দ্বীপের মুছাপুর গ্রামের গুরুদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বেড়ীবাঁধ এলাকায় ফুটে আছে সাদা কাশফুল। এ দৃশ্য সবার নজর কাড়ে। সেখানে যেতে হবে শিশির-ভেজা দুর্বা ঘাস মাড়িয়ে,লজ্জাবতীর মায়াবি পরশ ডিঙিয়ে। নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শহরগুলো এভাবেই শরতের সৌন্দর্যকে শুইয়ে দিচ্ছে সাদা কাফনের ভেতরে। শরতে মাঠে মাঠে এখন নতুন ধানের সমারোহ। কৃষকের মনে নবীন আশা, সাজ সাজ রব। দোয়েল-কোয়েলের কুজনে মুখরিত পল্লী গ্রাম-মাঠ-ঘাট, জনপদ। বিশেষ করে হিন্দু সমপ্রদায়ের ঘরে ঘরে প্রহর গোনা শুরু হলো এই শরতে, কৈলাশ ছেড়ে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা আসবেন তাদের গৃহে। নদীর পাড়ে কাশফুলের জেগে ওঠার আভাস দেখেই বাতাসে রটে গেছে শরৎ এসেছে, পূজা আসছে।

এ কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। আপনা থেকে অথবা বীজ ছিটিয়ে দিলেই কাশবনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি, দোন তৈরি করে থাকে। আর কৃষকরা ব্যবহার করে ঘরের ছাউনি হিসেবে। কিন্তু শহরের যান্ত্রিক জীবনে এর রূপ দেখার সময় কোথায়! কাশফুল মূলত ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। ঘাস প্রজাতির উদ্ভিদ হওয়ায় এর মূল গুচ্ছমূল। কাশফুল আগাছা হিসেবে বিবেচিত হলেও শুকনো কাশগাছ খুব কাজের জিনিস। কাশগাছ দিয়ে তৈরি করা হয় মাদুর, সীমানার বেড়া। এমনকি ঘরের চালও ছাওয়া হয়। শরতের স্নিগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ! এ সময় না আছে গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ, না আছে বর্ষার অঝোর ধারার বৃষ্টি। আছে শুধু আলোকোজ্জ্বল ঝলমলে দিন, জ্যোৎস্না রাত, মৃদুমন্দ সমীরণ আর সেই সমীরণে দুলতে থাকা শুভ্র কাশবন।