আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পৃথিবীর ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকার রাজধানী শ্রীনগর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি। আমিও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামের কন্যা। আমি ছাড়া আমার স্বামী আব্দুর রশিদ ও একটি ছোট ছেলে খালেদুর রশীদ। এ তিনজন নিয়েই ছিল আমাদের ছোট সাজানো- গোছানো সংসার। আমাদের বাড়ির চতুর্দিক ছিল কাশ্মীরী আঙ্গুর ও আপেলের বাগানে ঘেরা।সবুজ নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সুন্দরের প্রাচুর্য ছিল সারাটা এলাকা জুড়ে, যার জন্য কাশ্মীরকে বলা হতো পৃথিবীর ভূস্বর্গ।
হে মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ! আমার মত হাজারো নির্যাতিতা বোন আপনাদের দিকে চেয়ে
আছে; আপনাদের সহযোগিতার আশা করছে। আল্লাহ পাক না করুন, এমন অবস্থা যদি আপনাদের হাজারো বোনের হয়ে যায়, তাহলে ঠিকই আপনাদের ঘুম ভাঙ্গবে, চেতনাও জাগবে।
পবিত্র সত্তার.কসম! নিজেদের শত মতবিরোধ পেছনে ফেলে ঐক্যবদ্ধ হোন। জেগে উঠুন। সিংহ শাবকদের ভীরু শৃগালের মত কাপুরুষোচিত জীবন শোভা পায় না।
জালেম ব্রাহ্মণ্যবাদের ভন্ডামির আড্ডায় মুহম্মদ বিন কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত গর্জে উঠুন, ওদের কুঠারাঘাত হানুন ।এখনো সময় আছে, আপনার মুসলিম বোনদের ইজ্জত রক্ষা করুন। এ দুর্যোগেও যদি আপনার ঘুম না ভাঙ্গে, আপনার পৌরুষত্বের ধমনীতে আগুন না লাগে, ব্যাঘ্র হুংকার দিয়ে বেরিয়ে আসতে না পারেন তাহলে আপনার এ অচেতনতা, মনের দিবানিদ্রা কোনদিন ভাংবে না। বোধোদয় হবে না কোনদিন।
হে মুসলিম বিশ্বের শেরদিল ভ্রাতৃবৃন্দ! আপনার এক নির্যাতিতা ভাগ্যাহতা বোনের নির্মম কাহিনী আপনাদের কাছে বিধৃত করছি।
১৯৯৩-এর ১৫ জুলাই। আমি আমার ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু খালেদকে কোলে নিয়ে উঠানে বসেছিলাম। আমার স্বামী আব্দুর রশীদ বৈঠকখানায় তার এক বাল্য বন্ধুর সাথে আলাপ করছিলেন।
তার বাল্য বন্ধুটি পুরো এক বছর গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের বাড়ি বেড়াতে এসে আমার স্বামী আব্দুর রশীদকে জিহাদী প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা শুনাচ্ছিল। এমন সময় আমার ছোট ভাই ঘরে প্রবেশ করে কুশল বিনিময়ের পর খালেদকে কোলে নিয়ে সোহাগ করতে লাগলো। খালেদ তার মামার কোলে খেলতে লাগলো।
মাগরিবের নামাযান্তে আমার স্বামী আব্দুর রশীদ এবং গোলাম মুহিউদ্দীন বৈঠকখানার ঘরে অনেক রাত পর্যন্ত আলাপ করে ইশার নামায পড়ে সেখানেই খাবার খেয়েছিলেন। অধিক রাতে শুয়েও সবাই আযানের অনেক আগেই উঠে ফযরের নামাযের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমিও অযু করে মাত্র আল্লাহ পাক উনার দরবারে সিজদা দিচ্ছি। এমন সময় পাশের বাড়ি থেকে ভেসে এল মেয়েদের কান্নার রোল।
ভারতীয় জঙ্গী বর্বর হায়েনারা পুরো গ্রাম অবরোধ করে লুট, সম্ভম হরণ, হত্যা আর অগ্নিসংযোগে অল্পক্ষণের মধ্যে ভূস্বর্গ তুল্য গ্রামটিকে নরকে পরিণত করে ফেললো। কয়েক শ’ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে বিশজন মেয়ের শ্লীলতাহানি করে ৩০ জন মানুষকে হত্যা করার পর যখন আমাদের ঘরে প্রবেশ করলো; তখন প্রথম তাদের উন্মত্ততায় বাঁধা পড়ল।
আমার দিকে হাত বাড়াতেই দেখতে দেখতে চারজন ভারতীয় সৈন্য গোলাম মুহিউদ্দীনের ক্লাশনিকভের নিশানায় পরিণত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমার স্বামীর হাতে ছিল পিস্তল। আর ভাই আব্দুল হামিদ ক্লাশনিকভের ম্যাগাজিন ভরে দিচ্ছিল। গোলাম মুহিউদ্দীনের প্রতিটি গুলিতে একাধিক ভারতীয় জঙ্গি বর্বর হায়েনা জাহান্নামের অতল গহ্বরে চলে যাচ্ছিল।
আমি তখন শিশুপুত্র খালিদকে বুকে জড়িয়ে তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় অকস্মাৎ একটা গুলি আমার ভাই আব্দুল হামিদের মাথায় বিদ্ধ হলে সে পড়ে গেল। সাথে সাথে সে শহীদ হয়ে গেল। এ সময় ভারতীয় জানোয়ারগুলো এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে স্বামী আব্দুর রশীদও চিরদিনের মত আমাদেরকে ছেড়ে জান্নাতে চলে গেলেন ।
গোলাম মুহিউদ্দীন খালিদকে নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে আমাকে পালিয়ে যেতে বললেন, কিন্তু আমার পা এক ইঞ্চিও নড়লো না। দশ-বারোটা হায়েনা একসাথে ঘরে ঢুকে গোলাম মুহিউদ্দীনের বুকে কয়েকশ’ বুলেট বিদ্ধ করলো। আমার চোখের সামনে বিদায় হয়ে গেলেন সবাই। বর্বর পাষ- জঙ্গী হায়েনারা আমার কোল থেকে শিশুপুত্র খালিদকে ছিনিয়ে নিয়ে বুটের আঘাতে পিষে ফেললো, আর ঘরের সমস্ত মাল সম্পদ লুটে নিল। চোখে অন্ধকার নেমে এলো ।ইজ্জত রক্ষার্থে প্রাণপণ চেষ্টা করলাম। কিন্তু চারটি ভারতীয় হিংস্র জানোয়ার একসাথে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।
আমার প্রিয় ভাই! এরপর কী হতে পারে তা শুনলে আপনাদের চেতনায় অবশ্যই আঘাতলাগবে। ভিজে যাবে চোখের পাতা।
বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ! কাশ্মীরের হাজারো বিপন্ন অসহায় বোন আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যদি আপনাদের সাহস না থাকে, যদি আপনাদের মধ্যে গাজী সালাহুদ্দীন আইউবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জজবার অভাব হয়, মুহম্মদ বিন কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দীপ্ততেজ জমে গিয়ে থাকে, ভীরুতায় যদি আপনারা বুযদিল হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের হাতে ট্যাংক-অস্ত্র দিন; যেন আমরা নিজেরাই আমাদের ইজ্জত রক্ষা করতে পারি।
এতো মাত্র একজন মজলুম বোনের আর্তনাদ। এমন হাজারো কাশ্মীরী বোন আজ লাঞ্ছিতা, নির্যাতিতা। বর্বর পাষন্ড ভারতীয় সন্ত্রাসী হায়েনাদের মুসলিম মা বোনদের সম্ভ্রমলুট, হত্যা-নির্যাতনে সন্তানহারা মা, স্বামী হারা বিধবা বোন, আর নিপীড়িতা অসহায় রমণীর ফরিয়াদে কাশ্মীরের বাতাস ভারী হয়ে গেছে।
তারা আজ খাদ্য চায় না, বস্ত্র চায় না, চায় অস্ত্র। নিজেদের ইজ্জত বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাদের শুধুমাত্র একটু সাহায্যের প্রয়োজন। কাশ্মীরী নির্যাতিতা হাজারো বোনের এ নিষ্করুণ আর্তনাদ আপনাদের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করবে কী, প্রভাব ফেলবে কী আপনাদের মনে ? আমরা অসংখ্য নির্যাতিত মুসলিম বোন চেয়ে রইলাম আপনাদের আগমন অপেক্ষায়।