ঘুসের টাকা গুনে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, হাজীগঞ্জ থানার এসআই মাহফুজ প্রত্যাহার

  • আপডেট: ০৯:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • ২৫

ছবি-নতুনেরকথা।

দোকানে বসে ঘুসের টাকা গুনে গুনে পকেটে নেওয়া পুলিশের সেই উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমানকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ওই এসআইকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।

এর আগে সোমবার দুপুরে তাকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সম্প্রতি হাজীগঞ্জে একটি দোকানে বসে সাদা পোশাকে এসআই মাহফুজুর রহমানের ঘুসের টাকা প্রকাশ্যে গুনে গুনে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, এসআই মাহফুজুর রহমান স্থানীয় একটি দোকানের চেয়ারে খোশমেজাজে বসে আছেন। তিনি বলছেন, ‘১০ হাজার টাকা কইছি।’

সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’ পুলিশ কর্মকর্তা তার দিকে মনোযোগ দিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘এক টাকাও কম হইত ন।’

সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘বস, একটু বসেন।’ এসআই তখন মুচকি হাসেন। মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘কাম শেষ, এখন টিয়া।’

এ সময় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাহফুজ ভাই, আসলে যে মুরুব্বি, সে বেকার মানুষ তো জানেন।’

এ সময় এসআই মাহফুজ হেসে হেসে বলেন, ‘বেকার না আকার।’ তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘যাই হোক তার ছেলেমেয়ে বাদ, তিনি বেকার মানুষ। তিনি আগে ড্রেজার ব্যবসা টেবসা করতেন। অনেকের কাছে টাকা পাওনা ছিল। এর আগে যাই দিছি দেখছেননি। তারে একজন দিয়ে গেছে, তার আবার ওষুধ কিনা লাগে, এরপর এই ঝামেলা লাগি গেছে।’

এ সময় মাহফুজ বলেন, ‘দেন দেন।’ তখন প্রথম ব্যক্তি বলছেন, ‘গরিব মাইনসের লাগি একটু দিলটা নরম করেন। যেডিন ঝামেলা আছে।’

এরপর মাহফুজ আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে হাত এগিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মাহফুজের হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকা দিতে দিতে বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন। আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলব, তখন বুঝবেন। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না। যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম।’

এ সময় প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘টাকা গইন্নেন না, গইন্নেন না।’

তখন মাহফুজ বলেন, ‘টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত।’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘রুম অন্ধকার, আল্লাহ কইছে মাইনসেরে দেহাই কিল্লাই।’ এ সময় মাহফুজ মুচকি হাসতে হাসতে টাকা গুনছেন কয়েকবার। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, ‘চা খাবেন?’ মাহফুজ জবাব দেন, ‘পরে খাব’। এই বলে টাকা হাতের মুঠোয় নিয়ে বের হয়ে যান।

তবে ঘুস নেওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে এসআই মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’ ঘুষের টাকা গুনে নেওয়ার ভিডিও আপনার কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে চুপ করে থাকেন তিনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে চাঁদপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে ঘটনাটির তদন্ত করা হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বিদায় সংবর্ধনা

ঘুসের টাকা গুনে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, হাজীগঞ্জ থানার এসআই মাহফুজ প্রত্যাহার

আপডেট: ০৯:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

দোকানে বসে ঘুসের টাকা গুনে গুনে পকেটে নেওয়া পুলিশের সেই উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমানকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ওই এসআইকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।

এর আগে সোমবার দুপুরে তাকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সম্প্রতি হাজীগঞ্জে একটি দোকানে বসে সাদা পোশাকে এসআই মাহফুজুর রহমানের ঘুসের টাকা প্রকাশ্যে গুনে গুনে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, এসআই মাহফুজুর রহমান স্থানীয় একটি দোকানের চেয়ারে খোশমেজাজে বসে আছেন। তিনি বলছেন, ‘১০ হাজার টাকা কইছি।’

সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’ পুলিশ কর্মকর্তা তার দিকে মনোযোগ দিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘এক টাকাও কম হইত ন।’

সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘বস, একটু বসেন।’ এসআই তখন মুচকি হাসেন। মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘কাম শেষ, এখন টিয়া।’

এ সময় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাহফুজ ভাই, আসলে যে মুরুব্বি, সে বেকার মানুষ তো জানেন।’

এ সময় এসআই মাহফুজ হেসে হেসে বলেন, ‘বেকার না আকার।’ তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘যাই হোক তার ছেলেমেয়ে বাদ, তিনি বেকার মানুষ। তিনি আগে ড্রেজার ব্যবসা টেবসা করতেন। অনেকের কাছে টাকা পাওনা ছিল। এর আগে যাই দিছি দেখছেননি। তারে একজন দিয়ে গেছে, তার আবার ওষুধ কিনা লাগে, এরপর এই ঝামেলা লাগি গেছে।’

এ সময় মাহফুজ বলেন, ‘দেন দেন।’ তখন প্রথম ব্যক্তি বলছেন, ‘গরিব মাইনসের লাগি একটু দিলটা নরম করেন। যেডিন ঝামেলা আছে।’

এরপর মাহফুজ আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে হাত এগিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মাহফুজের হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকা দিতে দিতে বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন। আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলব, তখন বুঝবেন। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না। যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম।’

এ সময় প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘টাকা গইন্নেন না, গইন্নেন না।’

তখন মাহফুজ বলেন, ‘টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত।’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘রুম অন্ধকার, আল্লাহ কইছে মাইনসেরে দেহাই কিল্লাই।’ এ সময় মাহফুজ মুচকি হাসতে হাসতে টাকা গুনছেন কয়েকবার। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, ‘চা খাবেন?’ মাহফুজ জবাব দেন, ‘পরে খাব’। এই বলে টাকা হাতের মুঠোয় নিয়ে বের হয়ে যান।

তবে ঘুস নেওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে এসআই মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’ ঘুষের টাকা গুনে নেওয়ার ভিডিও আপনার কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে চুপ করে থাকেন তিনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে চাঁদপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে ঘটনাটির তদন্ত করা হবে।