কিশোর হাফেজ সাইমুন (১৬)। হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন তাহফিজুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। শুক্রবার ছুটিতে বাড়ীতেই ছিলেন। মাকে বলে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে এশার নামাজ পড়তে এসেছিলেন। এটা যে তার শেষ নামাজ ছিলো, সেটা কি জানতো তার মা বিউটি? এশার নামাজ পড়ে ভয়ে অন্যান্য মুসল্লিদের সাথে মসজিদেই বসা ছিলো। মাত্র ১৬ বছরের কিশোর হাফেজ সাইমুন রাত বেশী হয়ে যাচ্ছে, তাই মসজিদ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন বাসার দিকে। কিন্তু পেছন থেকেই দূর্বৃত্তরা তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তার পেটের নাড়ীবুড়ি বের হয়ে যায়। রাস্তার পাশে ড্রেনের ময়লার উপর পড়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো।
হাজীগঞ্জ বাজারে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলছিল। চার দিকে অস্ত্রের ঝনঝনানী। তাকে হাসপাতালে নিতে এগিয়ে আসলোনা কেউ। অবশেষে ভ্যানগাড়ী চালকদের সহযোগিতায় নিয়ে যাওয়া হয় হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারের একটি হাসপাতালে। সেখান থেকে নেয়া হয় চাঁদপুর সদর হাসপতালে, সেখান থেকে রেফার করা হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা সুপার ম্যাক্স হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন কিশার হাফেজ এতিম সাইমুন।
কান্না করার জন্য তার কেউ নেই। শিশুকালেই বাবা মারা যায়। বাবার বাড়ী ছিলো ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের দিগদাইর গ্রামে। নানার বাড়ী হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের হরিপুরে। বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা বিউটি বেগমকে বিয়ে দেয়া হয় চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া চরবাকিলা প্রধানীয়া বাড়ির ইউনুছের সাথে। সে তার মায়ের সাথে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন খাটরা-বিলওয়াই ভাড়া বাসায় থাকে। ইউনুছ চট্রগ্রামে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার চালায়।
সাইমুনের মা কান্না কণ্ঠে জানান, আমার কলিজারধন ওরা খুন করেছে, আমি কার কাছে বিচার চাইবো। বাবা হারা এতিমকে তারা এভাবে মারলো ও আল্লাহ আমি কি বিচার পাবো!!!
কিশোর মো. সাইমুন হোসেনের (১৬) মৃতুর ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং- ১৪।
রবিবার দুপরে শিশু সাইমুনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাদ আছর জানাযা শেষে দাদার বাড়ী ফরিদগঞ্জের দিগদাইর গ্রামে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, মামলা তদন্ত করা হচ্ছে এবং তদন্তপূর্বক আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। এছাড়াও সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক অবস্থায় বিরাজমান। সেনাবাহিনীসহ আমাদের যৌথ অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিন সন্ধ্যার পর হাজীগঞ্জ বাজার রনক্ষেত্রে পরিণত হয়। পৌরসভাধীন টোরাগড় ও মকিমাবাদ গ্রামের দুই গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইট, পাটকেল ও কাঁচের বোতল নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হন। এতে দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা এবং ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পথচারীসহ আহত হন অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তি। এরমধ্যে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত কয়েকজনকে কুমিল্লা ও ঢাকা পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে শনিবার রাতে সাইমুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
উভয় গ্রামের সংঘর্ষের ঘটনায় এর পূর্বে টোরগড় গ্রামের পারভেজের স্ত্রী তুহিন বেগম ৪’শজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় যৌথবাহিনীর অভিযানে ৪জনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২টি মামলা দায়ের করা হলো।