যুবলীগ কর্মীর ভয়ভীতি প্রদর্শন, ১০ বছর পর বাড়ি ফিরছে প্রবাসী পরিবার

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নে প্রায় এক দশক পরে বাড়ি ফিরেছে দুই প্রবাসী পরিবার। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিজ বাড়ীর যুবলীগ কর্মীর অত্যাচার আর নির্যাতন আর ভয়ভীতি প্রদর্শনের শিকার হয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছিলো এই দুই পরিবার। তাদের অভিযোগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দাফট দেখিয়ে যুবলীগের কর্মী জহির তাদের বাড়ি ছাড়া করে।

ইউনিয়নের সানকিসাইর গ্রামের মিজি বাড়ীতে ২০১৪ সালে এই ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তাহীনতায় তখন প্রবাসীদের দুই স্ত্রী ও ৫ কন্যা সন্তান ঢাকা চলে যায়। সেখানেই তারা ভাড়া বাসায় ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় গত দুইদিন পূর্বে এই দুই পরিবারের সদস্যরা ঘরের তালা ভেঙে প্রবেশ করে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, মিজি বাড়ীর মো. আনোয়ার উল্লাহ’র ছেলে মো. নুরুল আমিন এবং আব্বাস মিজি প্রবাসে থাকতেন। তাদের দুই পরিবার দশ কক্ষের একটি সেমি পাকা ঘরে বসবাস করতেন। পাশের ঘরই ছিলো যুবলীগ কর্মী জহির মিজির। তবে তাদের দুপরিবারের মধ্যে সম্পত্তিগত বিরোধ ছিলো। সেই থেকেই দুই পরিবারের সম্পর্কের অবনতি হয় এবং নুরুল আমিন এবং আব্বাস পরিবার ছিলো বিএনপি সমর্থক।

প্রবাসী আব্বাস মিজি বলেন, তারা প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে নানা অযুহাতে তার আপন চাচাত ভাই জহির মিজি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রতি অত্যাচর এবং নির্যাতন করেছে। এক সময় চাঁদাও দাবী করে। কোন উপায় না পেয়ে উভয় পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। কারণ জহির স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদের আত্মীয় এবং যুবলীগ কর্মী। সে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পূর্বে সে বিদেশে চলেগেছে।

প্রবাসীদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, শাহিনুর বেগম ও তাঁদের মেয়ে আয়শা আক্তার মিম বলেন, আমরা ১০ বছর জহিরের অত্যাচারের শিকার হয়ে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বাড়িতে ফিরে আসতে পেরেছি। আমাদের মতো এমন অন্যায়ের শিকার যেন আর কোনো পরিবারকে না হতে হয় সেই চাওয়া বর্তমান সরকারের কাছে।

তারা আরও বলেন, আমরা গত ১০ বছর বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে এলেও ঘরে প্রবেশ করতে পারিনি। কারণ আমাদের ঘরের বিভিন্ন স্থানে ১০-১২টি তালা দিয়েছে জহির। ঘরে একটি বিড়াল ছিলো, আমরা ঘরে প্রবেশ করে ওই বিড়ালের কঙ্কাল পেয়েছি। জহির আমাদের পুকুরের মাছ লুট করেছে এবং অনেক মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। তার সাথে আমাদের পরিবার বহুবার বসে সমাধানে আসার চেষ্টা করেছি এবং বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি কিন্তু তারা সমাধানে আসেনি। থানা পুলিশেও চেষ্টা করে কোন সমাধানে আসতে পারেনি। কারণ তারা সরকারি দলের লোক।

যুবলীগ কর্মী জহিরুল ইসলাম মিজির স্ত্রী মানসুরা বলেন, আমরা স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা সত্য নয়। আমাদের সাথে তাদের সম্পত্তিগত হিসাব নিকাশ আছে। এসব বিষয়ে তাদের সাথে বসতে বললেও তারা আসেনি। তারা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে মামলা দিয়েছে। গত ৭ মাস পূর্বে আমার স্বামী বিদেশে চলেগেছে।

যুবলীগ কর্মী জহিরের কারণে প্রবাসী এই পরিবারগুলোর বাড়ি ছাড়া হওয়ার বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাদেকসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা।

অভিযোগের বিষয়ে বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম হারুনুর রশিদ বলেন, আমার বিষয়ে যেসব কথা ওই পরিবার বলেছে তা সঠিক না। কারণ ওই সময়ে আমি চেয়ারম্যান ছিলাম না। তবে ওই জহির ভুক্তভোগী প্রবাসীর এই পরিবারটিকে অনেক হয়রানি করেছে। আমি নিজেও জহিরের হয়রানির শিকার হয়েছি। ওই পরিবারটিকে কেউ ভুল বুঝিয়ে ঘটনাটি ভিন্ন দিকে নিতে চাচ্ছে। মূলত তাদের দুই পরিবারে সম্পত্তিগত সমস্যা।

সর্বাধিক পঠিত

যে কারণে পুরুষে ৪টি বিয়ের পক্ষে হীরা সুমরো

যুবলীগ কর্মীর ভয়ভীতি প্রদর্শন, ১০ বছর পর বাড়ি ফিরছে প্রবাসী পরিবার

আপডেট: ০৯:৫৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নে প্রায় এক দশক পরে বাড়ি ফিরেছে দুই প্রবাসী পরিবার। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিজ বাড়ীর যুবলীগ কর্মীর অত্যাচার আর নির্যাতন আর ভয়ভীতি প্রদর্শনের শিকার হয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছিলো এই দুই পরিবার। তাদের অভিযোগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দাফট দেখিয়ে যুবলীগের কর্মী জহির তাদের বাড়ি ছাড়া করে।

ইউনিয়নের সানকিসাইর গ্রামের মিজি বাড়ীতে ২০১৪ সালে এই ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তাহীনতায় তখন প্রবাসীদের দুই স্ত্রী ও ৫ কন্যা সন্তান ঢাকা চলে যায়। সেখানেই তারা ভাড়া বাসায় ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় গত দুইদিন পূর্বে এই দুই পরিবারের সদস্যরা ঘরের তালা ভেঙে প্রবেশ করে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, মিজি বাড়ীর মো. আনোয়ার উল্লাহ’র ছেলে মো. নুরুল আমিন এবং আব্বাস মিজি প্রবাসে থাকতেন। তাদের দুই পরিবার দশ কক্ষের একটি সেমি পাকা ঘরে বসবাস করতেন। পাশের ঘরই ছিলো যুবলীগ কর্মী জহির মিজির। তবে তাদের দুপরিবারের মধ্যে সম্পত্তিগত বিরোধ ছিলো। সেই থেকেই দুই পরিবারের সম্পর্কের অবনতি হয় এবং নুরুল আমিন এবং আব্বাস পরিবার ছিলো বিএনপি সমর্থক।

প্রবাসী আব্বাস মিজি বলেন, তারা প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে নানা অযুহাতে তার আপন চাচাত ভাই জহির মিজি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রতি অত্যাচর এবং নির্যাতন করেছে। এক সময় চাঁদাও দাবী করে। কোন উপায় না পেয়ে উভয় পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। কারণ জহির স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদের আত্মীয় এবং যুবলীগ কর্মী। সে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পূর্বে সে বিদেশে চলেগেছে।

প্রবাসীদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, শাহিনুর বেগম ও তাঁদের মেয়ে আয়শা আক্তার মিম বলেন, আমরা ১০ বছর জহিরের অত্যাচারের শিকার হয়ে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বাড়িতে ফিরে আসতে পেরেছি। আমাদের মতো এমন অন্যায়ের শিকার যেন আর কোনো পরিবারকে না হতে হয় সেই চাওয়া বর্তমান সরকারের কাছে।

তারা আরও বলেন, আমরা গত ১০ বছর বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে এলেও ঘরে প্রবেশ করতে পারিনি। কারণ আমাদের ঘরের বিভিন্ন স্থানে ১০-১২টি তালা দিয়েছে জহির। ঘরে একটি বিড়াল ছিলো, আমরা ঘরে প্রবেশ করে ওই বিড়ালের কঙ্কাল পেয়েছি। জহির আমাদের পুকুরের মাছ লুট করেছে এবং অনেক মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। তার সাথে আমাদের পরিবার বহুবার বসে সমাধানে আসার চেষ্টা করেছি এবং বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি কিন্তু তারা সমাধানে আসেনি। থানা পুলিশেও চেষ্টা করে কোন সমাধানে আসতে পারেনি। কারণ তারা সরকারি দলের লোক।

যুবলীগ কর্মী জহিরুল ইসলাম মিজির স্ত্রী মানসুরা বলেন, আমরা স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা সত্য নয়। আমাদের সাথে তাদের সম্পত্তিগত হিসাব নিকাশ আছে। এসব বিষয়ে তাদের সাথে বসতে বললেও তারা আসেনি। তারা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে মামলা দিয়েছে। গত ৭ মাস পূর্বে আমার স্বামী বিদেশে চলেগেছে।

যুবলীগ কর্মী জহিরের কারণে প্রবাসী এই পরিবারগুলোর বাড়ি ছাড়া হওয়ার বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাদেকসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা।

অভিযোগের বিষয়ে বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম হারুনুর রশিদ বলেন, আমার বিষয়ে যেসব কথা ওই পরিবার বলেছে তা সঠিক না। কারণ ওই সময়ে আমি চেয়ারম্যান ছিলাম না। তবে ওই জহির ভুক্তভোগী প্রবাসীর এই পরিবারটিকে অনেক হয়রানি করেছে। আমি নিজেও জহিরের হয়রানির শিকার হয়েছি। ওই পরিবারটিকে কেউ ভুল বুঝিয়ে ঘটনাটি ভিন্ন দিকে নিতে চাচ্ছে। মূলত তাদের দুই পরিবারে সম্পত্তিগত সমস্যা।