ফরিদগঞ্জের ইসলামপুর ডিআর মন্ডল গ্রামে কোন ধরণের অজুহাত ছাড়াই বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নামধারী রাজনৈতিক কর্মীদের হামলায় ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ ৪ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযাগ উঠেছে। তবে হামলাকারীদের অভিযোগ তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক। আর এই হামলার ঘটনার মূলহোতা হলেন আলী আহম্মেদ মিন্টু তালুকদার নামে বিএনপির আরেক ব্যবসায়ী। তিনিই আবার উল্টো ফরিদগঞ্জ থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলে আহতদের দাবী।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ওই গ্রামের অদু মিয়া তালুকদার বাড়ী ও বেড়িবাধের রাস্তার ওপর এসব ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন-মৃত অদু মিয়া তালুকদারের ছেলে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন খোকন তালুকদার (৫৬), মৃত শহীদ উল্লাহ তালুকদারের ছেলে নাছির তালুকদার (৫০), কবির তালুকদার (৪৮) ও করিম উল্লাহ তালুকদারের ছেলে মো. মহসীন তালুকদার (৪২)। এদের মধ্যে খোকন ও মহসীন তালুকদার চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এবং কবির ও নাছির স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। নাছির ঢাকায় একটি কোম্পানীতে চাকরি করেন।
আহত খোকন তালুকদার জানান, আমি বাড়িতে থাকি না। ঢাকায় ব্যবসা করি। ঘটনার দিন বাড়িতে এসেছি। কারণ বাড়িতে মেহমান আসবে। বাড়ির সামনে রাস্তায় নামার পর আমাদের এলাকার হুতার বাড়ির বিএনপির আব্দুল হাইসহ কয়েকজন আমাকে দেখে বলে পাইছি। আওয়ামী লীগ এলাকায় রাখবো না। এই বলে আমাকে মারধর শুরু করে। পরে আমি প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই। রাত ৩টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে চাঁদপুরে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, আমার বড় ভাই রফিক তালুকদার জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। উনার মৃত্যুর পরে আলী আহম্মেদ মিন্টু তালুকদার বাড়ির মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আমি ছিলাম ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি নিজের ইচ্ছেমত মসজিদের নামে থাকা ব্যাংকের ১লাখ টাকাসহ আরো ৬০হাজার টাকা উন্নয়নের নামে তসরুপ করেন। এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে মতবিরোধ হয়। এছাড়া আর কোন সমস্যা নেই। আমরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। যে কারণে বাড়ীর অন্যদের সাথে ঘটনার সুযোগ নিয়ে আমার ওপর হামলা করে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমি ও অন্য আহতরা আইনের আশ্রয় নিতে পারছি না। কিন্তু মিন্টু তালুকদার আমাদেরকে মারধর করে উল্টো থানায় আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
আহত মহসীন বলেন, মূলত আমাদের বাড়ীর নাছির ও কবিরের স্ত্রীর সাথে তাদের বড় ভাই কাশেমের স্ত্রীর মুরগি পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এসব নিয়ে গত শুক্রবার থানায় বসে মিমাংসা করার কথা। একই সময়ে বাড়ীতে শালিশী বৈঠক ডাকেন মিন্টু তালুকদার। সেখানে প্রায় দেড় শতাধিক লোক উপস্থিত হয়। ওই শালিশ বৈঠকের সময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মিন্টু তালুকদারের ডাকে আসা বিএনপির লোকজন আমাদের মারধর করে। তবে আমাকে ইউনিয়ন যুবদল নেতা গিয়াস উদ্দিন মারধর থেকে উদ্ধার করেন। সেখানে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হারিছ মিজি,শহীদ উল্লাহ ও মোস্তাফা ছিলেন। তারা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হারিছ মিজি বলেন, আলী আহম্মেদ মিন্টু তালুকদার এর সাথে বাড়ীর অন্য অংশীদার সাথে ব্যাক্তিগত বিরোধ আছে। কিন্তু ঘটনার দিন শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে মিন্টু তালুকদার আমাদেরকে বাড়ীতে শালিশ আছে বলে ডাকেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি দরবারের নামে নাটক। মিন্টু তালুকদার এলাকার টোকাই ও বিএনপি নামধারী লোকজন এনে মারামারির ঘটনা ঘটাচ্ছে। পরে আমি ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি। পরে জানতে পারি খোকন তালুকদারকেও হুতার বাড়ির আব্দুল হাই নামে টোকাই মারধর করেছে। এই ঘটনার পর আজকে জানতে পেরেছি মিন্টু তালকুদার থানায় আবার অভিযোগ দিয়েছেন।
আলী আহম্মেদ মিন্টু তালুকদার বলেন, তারা আমার বিষয়ে যেসব অভিযোগ করেছে তা সঠিক না। তবে নাছির ও কবির আমার সাথে বহুবার অন্যায় আচরণ করেছে। কবির আমাকে বলেছে আমি নাকি টাকা দিয়ে কাশেমের স্ত্রীকে বলেছি থানায় মামলা করার জন্য। এসব কথা এলাকায় বলে বেড়িয়েছে। আমি ঢাকায় থাকি। বাড়িতে খুব কম আসি। বিএনপি করার কারণে আমার বাড়িতে কয়েকবার ডাকাতি হয়েছে। মসজিদের কোন টাকা আমি তসরুপ করি না। বরং আমি নিজের থেকে ১লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে উন্ননের কাজ করেছি।
তিনি আরও বলেন, খোকন তালুকদার মসজিদের সেক্রেটারী আর আমি সভাপতি। তার সাথে যোগাযোগ না করে মসজিদের টাকা উত্তোলন করেছি এটা সঠিক। এটা আমার করা ঠিক হয়নি। তার সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন ছিলো। তবে খোকন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে আমাকে হত্যা মামলার আসামী বানিয়েছে। নির্বাচনের সময় কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সময়ে এমন অনেক ঘটনার শিকার আমি। সর্বশেষ গত শুক্রবার আমাকে তারা হুমকি ও ধমকি দেয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।