স্ত্রীর দেয়া কিডনীতে ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠছে জহিরুল

  • আপডেট: ০৮:৫২:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ২৫

ছবি-সংগৃহিত।

বছর দেড়েক আগে মাথা ঝিমঝিম, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন জহিরুল হক ওরফে জুনাইদ (৩৯)। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে তাঁর দুটি কিডনিই বিকল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কিডনি মিলছিল না। তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান স্ত্রী সায়মা জাহান ওরফে পলি (২৭)। স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে সুস্থ হয়ে উঠছেন জহিরুল হক।

জহিরুল হকের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুর বাজার এলাকায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করা জহিরুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী সায়মা জাহান নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এই দম্পতি। তাঁদের পাঁচ বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান আছে।

জহিরুলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় বছর আগে জেলার আটপাড়া উপজেলার পাঁচগজ গ্রামের সায়মা জাহানের সঙ্গে জহিরুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁরা ঢাকায় থাকতেন। গত বছরের ২৭ মে জহিরুল ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওই দিন উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনেরা তাঁকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর কিডনির রোগ ধরা পড়ে। এরপর ময়মনসিংহ ও ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছিল।

স্বজনেরা জানান, মাসখানেক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন জহিরুল। ঢাকায় চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে হলে অন্তত একটি কিডনির প্রয়োজন। এরপর বিভিন্ন কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কোথাও কিডনি মেলেনি। পরে পরীক্ষা করার পর জহিরুলের সঙ্গে স্ত্রী সায়মার কিডনি মিলে যায়। তিনি স্বামীর জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দেন। ৫ সেপ্টেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। ওই হাসপাতালের সপ্তম তলায় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিসিইউ) চিকিৎসাধীন জহিরুল। সায়মা জাহানকে গতকাল শনিবার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

জহিরুলের ছোট ভাই আশিকুল হক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ভাবি এখন কিছুটা সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। ভাইয়ের অবস্থাও ভালোর দিকে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমলে তাঁকেও হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ভাবির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভাই হয়ে যা পারিনি, ভাবি পেরেছেন। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি, উভয়েই যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। আপনারাও দোয়া করবেন।’

কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে জহিরুলের স্ত্রী সায়মা জাহান নিজের ফেসবুক আইডি থেকে বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট দেন। ৫ সেপ্টেম্বর সকালে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার আগের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি হেসে হেসে হাত নাড়ছেন। ছোট্ট মেয়েকে কাছে টেনে চুমু খাচ্ছেন। গতকাল হাসপাতাল ছাড়ার আগে স্বামীর কাছে বসা আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন সায়মা। সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানতে চেয়েছেন, আমরা কেমন আছি। আমরা এখন অনেক ভালো আছি। আপনাদের দোয়ায় আমরা ভালোর দিকে।’
জানতে চাইলে সায়মা জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বামীকে নিজের কিডনি দিতে পেরে আমি গর্বিত। তিনি (স্বামী) কখনো বলেননি, আমি নিজের ইচ্ছায় কিডনি দিয়েছি। তিনি সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন, এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, মরলে দুজনে মরব।’

পূর্বধলার নারানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস ব্যাপারী বলেন, গৃহবধূ সায়মা নিজের কিডনি স্বামীকে দিয়ে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন। এটি সত্যিই বিরল উদাহরণ। তাঁরা উভয়ই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। (প্রথম আলো)

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে ভ্রাম্যমান আদালতে ৬৫০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ

স্ত্রীর দেয়া কিডনীতে ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠছে জহিরুল

আপডেট: ০৮:৫২:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বছর দেড়েক আগে মাথা ঝিমঝিম, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন জহিরুল হক ওরফে জুনাইদ (৩৯)। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে তাঁর দুটি কিডনিই বিকল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কিডনি মিলছিল না। তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান স্ত্রী সায়মা জাহান ওরফে পলি (২৭)। স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে সুস্থ হয়ে উঠছেন জহিরুল হক।

জহিরুল হকের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুর বাজার এলাকায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করা জহিরুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী সায়মা জাহান নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এই দম্পতি। তাঁদের পাঁচ বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান আছে।

জহিরুলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় বছর আগে জেলার আটপাড়া উপজেলার পাঁচগজ গ্রামের সায়মা জাহানের সঙ্গে জহিরুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁরা ঢাকায় থাকতেন। গত বছরের ২৭ মে জহিরুল ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওই দিন উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনেরা তাঁকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর কিডনির রোগ ধরা পড়ে। এরপর ময়মনসিংহ ও ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছিল।

স্বজনেরা জানান, মাসখানেক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন জহিরুল। ঢাকায় চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে হলে অন্তত একটি কিডনির প্রয়োজন। এরপর বিভিন্ন কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কোথাও কিডনি মেলেনি। পরে পরীক্ষা করার পর জহিরুলের সঙ্গে স্ত্রী সায়মার কিডনি মিলে যায়। তিনি স্বামীর জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দেন। ৫ সেপ্টেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। ওই হাসপাতালের সপ্তম তলায় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিসিইউ) চিকিৎসাধীন জহিরুল। সায়মা জাহানকে গতকাল শনিবার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

জহিরুলের ছোট ভাই আশিকুল হক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ভাবি এখন কিছুটা সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। ভাইয়ের অবস্থাও ভালোর দিকে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমলে তাঁকেও হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ভাবির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভাই হয়ে যা পারিনি, ভাবি পেরেছেন। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি, উভয়েই যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। আপনারাও দোয়া করবেন।’

কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে জহিরুলের স্ত্রী সায়মা জাহান নিজের ফেসবুক আইডি থেকে বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট দেন। ৫ সেপ্টেম্বর সকালে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার আগের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি হেসে হেসে হাত নাড়ছেন। ছোট্ট মেয়েকে কাছে টেনে চুমু খাচ্ছেন। গতকাল হাসপাতাল ছাড়ার আগে স্বামীর কাছে বসা আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন সায়মা। সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানতে চেয়েছেন, আমরা কেমন আছি। আমরা এখন অনেক ভালো আছি। আপনাদের দোয়ায় আমরা ভালোর দিকে।’
জানতে চাইলে সায়মা জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বামীকে নিজের কিডনি দিতে পেরে আমি গর্বিত। তিনি (স্বামী) কখনো বলেননি, আমি নিজের ইচ্ছায় কিডনি দিয়েছি। তিনি সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন, এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, মরলে দুজনে মরব।’

পূর্বধলার নারানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস ব্যাপারী বলেন, গৃহবধূ সায়মা নিজের কিডনি স্বামীকে দিয়ে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন। এটি সত্যিই বিরল উদাহরণ। তাঁরা উভয়ই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। (প্রথম আলো)