১৬ বছর পর ভোট দিবে ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের জনগণ

  • আপডেট: ০৩:২৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯
  • ৫৭

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আজ ২৫ জুলাই ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোট । ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান পদে ভোট দানের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে ১৭ হাজার ৬৩০ ভোটার। ভোট নিয়ে ভোটারদের মাঝে তীব্র আশার পাশাপাশি আতংকও বিরাজ করছে। ইতিপূর্বে হওয়া নির্বাচনগুলোর কারণে তাদের এই আতংক। সর্বশেষ ২০০৩ সালে উপনির্বাচনের সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এই ইউনিয়নে। তারপর উচ্চ আদলতে রিট জনিত কারণে এতবছর ভোট হয় নি। ১৬ বছর পূর্বে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যুজনিত কারণে পদশুন্য হওয়ায় অবশেষে নির্বাচন হচ্ছে এখানে। এদিকে গতকাল বুধবার সকালে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে মতবিনিময় কালে শান্তি পূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি থাকার জন্য সকলকে আহ্বান জানান।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। ৯টি মেম্বার পদে পুরুষ প্রার্থী রয়েছেন মোট ৪১ জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা মেম্বার পদে মহিলা প্রার্থী হয়েছে ৯ জন। ভোটার রয়েছে ১৭ হাজার ৬৩০ ভোট। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৮৯৬ জন। মহিলা ভোটার ৮ হাজার ৭৩৪ জন। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা রয়েছে ৯টি। মোট ৫২টি বুথের জন্য ১৬৩জন কর্মকর্তা ছাড়াও পর্যাপ্ত পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠ ও অবাধ এবং নিরপেক্ষ করার লক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। র‌্যাব বিজিবি এবং পুলিশের সমন্বয়ে চার স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবার বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ৫ জন। যারা সকলেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের সমর্থক। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রয়েছে সাইফুল আলম সোহেল খান (নৌকা), বাকি ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর হোসেন রিপন (আনারস), আকবর পাটওয়ারী (চশমা), শফিকুর রহমান (মোটরসাইকেল) ও রেজাউল ইসলাম (টেলিফোন)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সোহেল খান (নৌকা) সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য হিসেবে দীর্ঘ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যতম প্রতিদ্বন্ধী আলমগীর হোসেন রিপন (আনারস) সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা যুব লীগের আহ্বায়ক। বাকি তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ কিংবা এর কোনো সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী না হলেও এরা সরকার দলীয় সমর্থক বটে।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মুল প্রতিদ্বন্ধীতা হবে নৌকার সাথে আনারসের। এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের লোকজন থাকার সাথে সাথে আনারসের পক্ষেও বিপুল কর্মী সমর্থক রয়েছে। নেতাকর্মীদের ধারনা এই নির্বাচনে ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যকার বিভেদ কাজ করছে। যারা নৌকার পক্ষে রয়েছেন। তাদের প্রতিপক্ষরা রয়েছের আনারসের দিকে।
ওই ইউনিয়নে গিয়ে কথা হয় প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ জনগণের সাথে। বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও বিএনপির ভোটাদের দাবি, এই ইউনিয়নটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এখানে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে ভোট হয় তাহলে যে প্রার্থী বিএনপির ভোটারদের ভোট নিতে পারেন তাহলে সেই প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছেন অনেকেই।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোহেল খানের জয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিনই জেলা ও উপজেলা থেকে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা ওই ইউনিয়নে গণসংযোগের পাশাপাশি নির্বাচনী সভা করে এখন ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
উক্ত ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নূর মোহাম্মদের ছেলে আলমগীর হোসেন রিপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার প্রয়াত বাবার আদর্শের স্মৃতিচারণ করে নির্বাচনী প্রতীক আনারসের জয় নিশ্চিত করতে মাঠ চষে বেড়িয়েচ্ছন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আকবর পাটওয়ারী তার নির্বাচনী প্রতীক চশমার জয় নিশ্চিত করতে ঘরে বসে ছিলেন না। বাকি স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী সফিকুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলামকে নির্বাচনী প্রচারে দেখা যায় না। তবে পুরুষ ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা প্রার্থীরা দলবল নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে তাদের নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রার্থীরা এখন অভ্যন্তরীণ প্রচারনা ও ভোটের চুলচেরা হিসাব নিকেশ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভোটারই বলছে, ১৬ বছর পর ভোটারগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করতে পারবো তো? নাকি ক্ষমতার প্রভাবে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আবারো আরেকটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়? এমন নানা প্রশ্ন উঠছে স্বয়ং প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ভোটারসহ বিভিন্ন মহল থেকে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ভারতে মসজিদের স্থানে মন্দির দাবি করে জরিপের চেস্টায় উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে ৩ মুসল্লি নিহত (ভিডিওসহ)

১৬ বছর পর ভোট দিবে ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের জনগণ

আপডেট: ০৩:২৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আজ ২৫ জুলাই ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোট । ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান পদে ভোট দানের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে ১৭ হাজার ৬৩০ ভোটার। ভোট নিয়ে ভোটারদের মাঝে তীব্র আশার পাশাপাশি আতংকও বিরাজ করছে। ইতিপূর্বে হওয়া নির্বাচনগুলোর কারণে তাদের এই আতংক। সর্বশেষ ২০০৩ সালে উপনির্বাচনের সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এই ইউনিয়নে। তারপর উচ্চ আদলতে রিট জনিত কারণে এতবছর ভোট হয় নি। ১৬ বছর পূর্বে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যুজনিত কারণে পদশুন্য হওয়ায় অবশেষে নির্বাচন হচ্ছে এখানে। এদিকে গতকাল বুধবার সকালে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে মতবিনিময় কালে শান্তি পূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি থাকার জন্য সকলকে আহ্বান জানান।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। ৯টি মেম্বার পদে পুরুষ প্রার্থী রয়েছেন মোট ৪১ জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা মেম্বার পদে মহিলা প্রার্থী হয়েছে ৯ জন। ভোটার রয়েছে ১৭ হাজার ৬৩০ ভোট। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৮৯৬ জন। মহিলা ভোটার ৮ হাজার ৭৩৪ জন। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা রয়েছে ৯টি। মোট ৫২টি বুথের জন্য ১৬৩জন কর্মকর্তা ছাড়াও পর্যাপ্ত পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠ ও অবাধ এবং নিরপেক্ষ করার লক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। র‌্যাব বিজিবি এবং পুলিশের সমন্বয়ে চার স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবার বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ৫ জন। যারা সকলেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের সমর্থক। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রয়েছে সাইফুল আলম সোহেল খান (নৌকা), বাকি ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর হোসেন রিপন (আনারস), আকবর পাটওয়ারী (চশমা), শফিকুর রহমান (মোটরসাইকেল) ও রেজাউল ইসলাম (টেলিফোন)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সোহেল খান (নৌকা) সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য হিসেবে দীর্ঘ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যতম প্রতিদ্বন্ধী আলমগীর হোসেন রিপন (আনারস) সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা যুব লীগের আহ্বায়ক। বাকি তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ কিংবা এর কোনো সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী না হলেও এরা সরকার দলীয় সমর্থক বটে।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মুল প্রতিদ্বন্ধীতা হবে নৌকার সাথে আনারসের। এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের লোকজন থাকার সাথে সাথে আনারসের পক্ষেও বিপুল কর্মী সমর্থক রয়েছে। নেতাকর্মীদের ধারনা এই নির্বাচনে ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যকার বিভেদ কাজ করছে। যারা নৌকার পক্ষে রয়েছেন। তাদের প্রতিপক্ষরা রয়েছের আনারসের দিকে।
ওই ইউনিয়নে গিয়ে কথা হয় প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ জনগণের সাথে। বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও বিএনপির ভোটাদের দাবি, এই ইউনিয়নটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এখানে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে ভোট হয় তাহলে যে প্রার্থী বিএনপির ভোটারদের ভোট নিতে পারেন তাহলে সেই প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছেন অনেকেই।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোহেল খানের জয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিনই জেলা ও উপজেলা থেকে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা ওই ইউনিয়নে গণসংযোগের পাশাপাশি নির্বাচনী সভা করে এখন ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
উক্ত ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নূর মোহাম্মদের ছেলে আলমগীর হোসেন রিপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার প্রয়াত বাবার আদর্শের স্মৃতিচারণ করে নির্বাচনী প্রতীক আনারসের জয় নিশ্চিত করতে মাঠ চষে বেড়িয়েচ্ছন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আকবর পাটওয়ারী তার নির্বাচনী প্রতীক চশমার জয় নিশ্চিত করতে ঘরে বসে ছিলেন না। বাকি স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী সফিকুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলামকে নির্বাচনী প্রচারে দেখা যায় না। তবে পুরুষ ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা প্রার্থীরা দলবল নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে তাদের নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রার্থীরা এখন অভ্যন্তরীণ প্রচারনা ও ভোটের চুলচেরা হিসাব নিকেশ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভোটারই বলছে, ১৬ বছর পর ভোটারগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করতে পারবো তো? নাকি ক্ষমতার প্রভাবে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আবারো আরেকটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়? এমন নানা প্রশ্ন উঠছে স্বয়ং প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ভোটারসহ বিভিন্ন মহল থেকে।