হাজীগঞ্জ, ১৭ এপ্রিল, শুক্রবার
চাঁদপুরের পাশবর্তী জেলা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় একদিনে ১৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। সীমান্তবর্তি উপজেলা হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া মরনঘাতি কোভিড-১৯ আক্রান্তের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জের ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
লক্ষীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল গফফার মুঠোফোনে জানান, এ পর্যন্ত (১৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত) লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে সর্বমোট আক্রান্ত ১৯ জন, যার মধ্যে শুধুমাত্র রামগঞ্জ উপজেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারসহ একই হাসপাতালের আরও চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
আরো পড়ুন: লক্ষীপুরে ১৯জন করোনায় আক্রান্ত, রামগঞ্জেেই ১৩জন
জানা যায়, রামগঞ্জ উপজেলার পূর্বে চাঁদপুরের শাহারাস্তি, উত্তরে হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা সংযুক্ত থাকায় প্রাশাসনিক কার্যক্রমের বাইরে দুই জেলার লোকজনই একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বিশেষত আন্তঃ বাজার, ব্যবসা-বানিজ্য, আত্মীয়তা, সামাজিকতা ও চিকিৎসাসেবায় ৪ উপজেলায় মিথস্ক্রিয়া।
রামগঞ্জ উপজেলার পুর্বে ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদ। যার সাথে শাহরাস্তির চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন ও সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন সংযুক্ত। পশ্চিমে ইছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ। যার সাথে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি ইউনিয়ন ও রূপসা ইউনিয়ন সংযুক্ত। উত্তরের একাংশে নোয়াগাও ইউনিয়ন। যার সাথে শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন ও হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন সংযুক্ত।
উত্তরের আরেকাংশে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি ইউনিয়ন ও হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন সংযুক্ত।
আরো পড়ুন: হাজীগঞ্জবাসিকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে লকডাউন আরো কঠের হতে হবে
শাহরাস্তি উপজেলার মেহের-দোয়াভাংগা-দল্টা সড়ক রামগঞ্জের অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক পরিবহণ বন্ধ থাকায় প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে রিক্সা বা অটো রিক্সা যোগে শাহরাস্তি হয়ে লোকজন রামগঞ্জ যাচ্ছে।
একইভাবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ হতে বাবুরহাট এবং হাজীগঞ্জের বিশ্বরোড হয়ে লোকজন রামগঞ্জে যাতাযাত করছে। গত কয়েকদিন আগে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে ট্রাকের ভেতর ত্রিপল দিয়ে ঢেকে যাত্রী পারাপারের ঘটনা শনাক্ত হয়।
উভয় জেলা প্রশাসন স্ব স্ব জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করলেও পারস্পরিক সু সম্পর্কের কারণে মূল রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা থাকলেও শাখা রাস্তা ব্যবহার করে এক উপজেলা হতে অন্য উপজেলায় জনযোগাযোগ অব্যহত রয়েছে বলে অভিযোগ প্রান্তিক লোকজনের। সাপ্তাহিক বাজারের ব্যবসা ও লেনদেনও চলছে প্রশাসনের লোকজনের সাথে লুকোচুরির মাধ্যমে।
আরো পড়ুন: ত্রাণ চাওয়ায় কৃষককে মারধর করা সেই ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার
শাহরাস্তির চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এইচ এম শোয়েব দেওয়ান জানান, রামগঞ্জের ভাটরা ইউনিয়নের জনচলাচল বন্ধ করতে খেড়িহর বাজারে লকডাউন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ বার রাতের আঁধারে ওই প্রতিবন্ধক বাঁশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। রাতে গাড়ি চলাচল করতে ভাটরা হতে আসা ড্রাইভাররা এসব প্রতিবন্ধকতা উঠিয়ে ফেলছে। আমরা রামগঞ্জে আক্রান্তের ভয়াবহতায় শংকিত। এলাকার যুবসমাজ নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক কমিটি করা হয়েছে। যারা পালাক্রমে লোকের আগমন বন্ধ রাখতে ভূমিকা রাখবে।
একই উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আঃ রশিদ জানান, উভয় উপজেলার লোকজনই লকডাউন ভাংছে। আমার এলাকার বেশির ভাগ লোকই ভাটরা ইউনিয়নের পানিয়ালা ও সোনাপুর বাজারে ব্যবসা বানিজ্যের সাথে যুক্ত। অনেক বলেও লোকজনকে আটকাতে পারিনা।
আরো পড়ুন: করোনা উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে শাহরাস্তির শিশু ও চাঁদপুর সদরের সিএনজি চালকের মৃত্যু
হাজীগঞ্জ সার্কেল (হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ) ও কচুয়া সার্কেলের (শাহরাস্তি-কচুয়া) অতিরিক্ত সুপার আফজাল হোসেন জানান, তিন উপজেলার সীমান্ত এলাকায় লোকজনের আনাগোনা রোধে পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। হাজীগঞ্জের সাথে রামগঞ্জের যোগাযোগে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে হাজীগঞ্জ চৌরাস্তা, সেন্দ্রা ও বেলচো এলাকায় পুলিশ অবস্থান নিয়ে জনচলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে। এছাড়া লক্ষীপুরের সাথে ফরিদগঞ্জের জনচলাচল নিয়ন্ত্রনে পুলিশ তৎপর রয়েছে। শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ও চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের সাথে রামগঞ্জের জনচলাচল নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক টীম পুলিশের সাথে সহায়তা করে আসছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রনে এসব এলাকায় অযাচিত ঘুরাঘুরি বা জেলার লকডাউন নির্দেশনা অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এখন পর্যন্ত শাহরাস্তি উপজেলায় ৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭ জনের নেগেটিভ ও ১ টি নমুনা অপেক্ষমান রয়েছে। হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার সবগুলো নেগেটিভ এসেছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৩৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে।