হাজীগঞ্জে দাদার হাতে নাতিন ধর্ষণ, লক্ষ টাকা দিয়েও বাঁচতে পারলোনা ধর্ষক

  • আপডেট: ০৩:২৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২৮

নিজস্ব প্রতিনিধি

হাজীগঞ্জে দাদার হাতে কিশোরী (১১) নাতিন ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি স্থানীয় প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে বলে জানা গেছে। কিন্তু হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিষয়টি জানতে পেরে তাৎখনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় রায়কে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করে, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষক দাদা সুলতান কবিরাজ (৬৫) পালিয়ে যান।

গত ১১ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের লোধপাড়া গ্রামের কবিরাজ বাড়ীতে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষক সুলতান কবিরাজ ওই বাড়ীর মৃত রমজান আলী কবিরাজের ছেলে। ধর্ষণের শিকার কিশোরী স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়রে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী এবং সে ওই এলাকার অসহায়-দরিদ্র প্রতিবন্ধী জুলহাসের বড় মেয়ে।

কিশোরীর বাবা জানান, গত বুধবারের আগের বুধবার, তার মেয়েকে ফুসলিয়ে বাড়ীর পাশে মুস্তাক মুড়ায় নিয়ে যায় সুলতান কবিরাজ। সেখানে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার পর, এ কথা কাউকে না বলার জন্য হুমকি-ধমকি দেয় সে। ওই দিনই সে (মেয়েটি) অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার মায়ের কাছে বিস্তারিত জানায়। পরে বিষয়টি তারা (মেয়েটির বাবা ও মা) স্থানীয় প্রভাবশালীদের (সালিশদার) অবগত করলে, তারা সমাধান করে দিবেন বলে জানান।

তার মা জানান, তিনি ঝিয়ের কাজ করায়, দিনের বেলায় অধিকাংশ সময় ঘরে থাকেন না। প্রতিবন্ধী স্বামী চা দোকানে থাকেন, আর ছেলে স্কুলে থাকায়, অনেক সময় মেয়েটি ঘরে একা থাকে। এই সুযোগে বাড়ীর সর্ম্পকে দাদা সুলতান কবিরাজ মেয়েটির সাথে এই অনৈতিক কাজ করে। পরে তিনি ও তার স্বামী বিষয়টি পঞ্চায়েতদের (শালিসদার) জানালে, তারা ভেঙ্গে (সমাধান) করে দিবেন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তাই ভয়ে পুলিশকে জানাইনি এবং টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসাও করাতে পারিনি।

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি টাকার বিনিময়ে ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন প্রভাবশালীরা। বেশ কয়েকজন শালিসদারকে নিয়ে জাকির হোসেন প্রধানীয়ার নেতৃত্বে গত ২২ ডিসেম্বর (সোমবার) বিকেলে স্থানীয় জনতা বাজারের উত্তর পাশ্বে থাকা তার ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গরুর ফার্মে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে শালিসদার নুরে আলম, মজিবুর রহমানসহ আরো বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

ওই বৈঠকে জাকির হোসেনসহ তার নেতৃত্বে থাকায় শালিসদাররা ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত সুলতান কবিরাজের ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন এবং ভবিষ্যতে এমন অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকার মর্মে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। জরিমানাকৃত টাকা মেয়েটির বাবাকে পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়ে শালিসদাররা বলেন, এ কথা কাউকে যেন না বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন প্রধানীয়া সংবাদকর্মীদের বলেন, সমাধানের বিষয়টি সম্পুর্ণ মিথ্যা। আমরা কোন সমাধান করিনি। কেবল মাত্র সুলতান মিয়াকে জিজ্ঞাসা করেছি। এর বাহিরে আর কিছু নয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুলতান কবিরাজ সংবাদর্মীদের জানান, শালিদাররা বলেছেন, তারা যে সিদ্ধান্ত দিবে, তা আমি মেনে নিবো কিনা। আমি বলেছি, মেনে নিবো। তারপর তারা (শালিসদার) মেয়ের বাবাকে এক লাখ টাকা দেয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দেন। এবং সে বৈঠকে আমার কাছ থেকে তারা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেন।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, মঙ্গলবার বিষয়টি জানার পর, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। নির্যাতিত মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বুধবার তাকে চাঁদপুরে মেডিকেলে করানোর জন্য প্রেরণ করা হবে।  এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

অধ্যক্ষ চিন্ময় দাস ইস্যুতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি যা বললো

হাজীগঞ্জে দাদার হাতে নাতিন ধর্ষণ, লক্ষ টাকা দিয়েও বাঁচতে পারলোনা ধর্ষক

আপডেট: ০৩:২৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিনিধি

হাজীগঞ্জে দাদার হাতে কিশোরী (১১) নাতিন ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি স্থানীয় প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে বলে জানা গেছে। কিন্তু হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিষয়টি জানতে পেরে তাৎখনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় রায়কে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করে, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষক দাদা সুলতান কবিরাজ (৬৫) পালিয়ে যান।

গত ১১ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের লোধপাড়া গ্রামের কবিরাজ বাড়ীতে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষক সুলতান কবিরাজ ওই বাড়ীর মৃত রমজান আলী কবিরাজের ছেলে। ধর্ষণের শিকার কিশোরী স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়রে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী এবং সে ওই এলাকার অসহায়-দরিদ্র প্রতিবন্ধী জুলহাসের বড় মেয়ে।

কিশোরীর বাবা জানান, গত বুধবারের আগের বুধবার, তার মেয়েকে ফুসলিয়ে বাড়ীর পাশে মুস্তাক মুড়ায় নিয়ে যায় সুলতান কবিরাজ। সেখানে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার পর, এ কথা কাউকে না বলার জন্য হুমকি-ধমকি দেয় সে। ওই দিনই সে (মেয়েটি) অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার মায়ের কাছে বিস্তারিত জানায়। পরে বিষয়টি তারা (মেয়েটির বাবা ও মা) স্থানীয় প্রভাবশালীদের (সালিশদার) অবগত করলে, তারা সমাধান করে দিবেন বলে জানান।

তার মা জানান, তিনি ঝিয়ের কাজ করায়, দিনের বেলায় অধিকাংশ সময় ঘরে থাকেন না। প্রতিবন্ধী স্বামী চা দোকানে থাকেন, আর ছেলে স্কুলে থাকায়, অনেক সময় মেয়েটি ঘরে একা থাকে। এই সুযোগে বাড়ীর সর্ম্পকে দাদা সুলতান কবিরাজ মেয়েটির সাথে এই অনৈতিক কাজ করে। পরে তিনি ও তার স্বামী বিষয়টি পঞ্চায়েতদের (শালিসদার) জানালে, তারা ভেঙ্গে (সমাধান) করে দিবেন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তাই ভয়ে পুলিশকে জানাইনি এবং টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসাও করাতে পারিনি।

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি টাকার বিনিময়ে ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন প্রভাবশালীরা। বেশ কয়েকজন শালিসদারকে নিয়ে জাকির হোসেন প্রধানীয়ার নেতৃত্বে গত ২২ ডিসেম্বর (সোমবার) বিকেলে স্থানীয় জনতা বাজারের উত্তর পাশ্বে থাকা তার ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গরুর ফার্মে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে শালিসদার নুরে আলম, মজিবুর রহমানসহ আরো বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

ওই বৈঠকে জাকির হোসেনসহ তার নেতৃত্বে থাকায় শালিসদাররা ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত সুলতান কবিরাজের ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন এবং ভবিষ্যতে এমন অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকার মর্মে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। জরিমানাকৃত টাকা মেয়েটির বাবাকে পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়ে শালিসদাররা বলেন, এ কথা কাউকে যেন না বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন প্রধানীয়া সংবাদকর্মীদের বলেন, সমাধানের বিষয়টি সম্পুর্ণ মিথ্যা। আমরা কোন সমাধান করিনি। কেবল মাত্র সুলতান মিয়াকে জিজ্ঞাসা করেছি। এর বাহিরে আর কিছু নয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুলতান কবিরাজ সংবাদর্মীদের জানান, শালিদাররা বলেছেন, তারা যে সিদ্ধান্ত দিবে, তা আমি মেনে নিবো কিনা। আমি বলেছি, মেনে নিবো। তারপর তারা (শালিসদার) মেয়ের বাবাকে এক লাখ টাকা দেয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দেন। এবং সে বৈঠকে আমার কাছ থেকে তারা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেন।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, মঙ্গলবার বিষয়টি জানার পর, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। নির্যাতিত মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বুধবার তাকে চাঁদপুরে মেডিকেলে করানোর জন্য প্রেরণ করা হবে।  এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।