ক্রীড়া ডেস্ক:
স্রেফ ভাগ্যটাই সঙ্গে ছিল না। এতোগুলো শটের একটাও জাল খুঁজে পেল না! ফরোয়ার্ডরা ব্যর্থ না হলে হয়তো এ ম্যাচের গল্প ভিন্নভাবে লেখা হতো। শক্তি, সামর্থ্য ও র্যাংকিংয়ে সব দিক থেকে এগিয়ে থাকা কাতারের সঙ্গে সমান তালেই লড়াই করল বাংলাদেশ। কিন্তু দুই অর্ধে দুটি গোল খেয়ে বসে তারা। আর ম্যাচের ফলাফল তাই যায় কাতারের পক্ষেই।
বৃহস্পতিবার বন্ধবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০২২ বিশ্বকাপ ও এশিয়াকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে এদিন বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারের কাছে ০-২ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।
বৃষ্টি হলে ম্যাচে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়বে কাতার। এমনটা অনুমিতই ছিল। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক জালাম ভুঁইয়া ও কোচ জেমি ডেও বলেছেন এমনটা হলে বাড়তি সুবিধা পাবেন তারা। সকাল থেকে হওয়া কয়েক দফা ভারী বর্ষণে তাই আশা জেগেছিল বাংলাদেশ শিবিরে। রক্ষণ জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণে খেলছিল দলটি। কিন্তু ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে হারতে হয় ম্যাচটি।
কাতারের এই দলটি বেশ অভিজ্ঞ। আট জনের খেলার অভিজ্ঞতা আছে ৫০টির বেশি ম্যাচ। বাকিদের মধ্যে যারা আছেন তাদের ছয় জনও খেলেছেন ২০টির বেশি। সে তুলনায় বাংলাদেশটি একেবারেই নবীন। কিন্তু ম্যাচে যেভাবে লড়াই করেছে তারা তাতে উপস্থিত প্রায় ৩০ হাজারের বেশি সমর্থক তাই ম্যাচ হারার পর হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিয়েছে তাদের। অনেক দিন পর যে তারা মন ভোলানো একটি ম্যাচ দেখতে পেল।
এদিন গোল করার মতো প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল বাংলাদেশই। ম্যাচের নবম মিনিটে রায়হানের ট্রেডমার্ক লম্বা থ্রোতে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন জীবন। কিন্তু নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে পারেনি কাতারি ডিফেন্ডাররাও। ফিরতি বলে ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন জামাল। কিন্তু অল্পের জন্য নিশানা ঠিক থাকেনি। দুই মিনিট পর মিনিটে সুযোগ ছিল কাতারেরও। বাঁ প্রান্ত থেকে নেওয়া আলমোয়েজ আলী আব্দুল্লাহর কোণাকোণি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
১৮তম মিনিটেও ভালো সুযোগ ছিল অতিথিদের। ডান প্রান্ত থেকে সতীর্থের ক্রসে ভালো হেড নিয়েছিলেন করিম বাউদাইফ। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারেননি এ মিডফিল্ডার। চার মিনিট পর বাংলাদেশী ডিফেন্ডারের ভুল ডি বক্সের বাইরে বল পেয়ে অসাধারণ এক শট নিয়েছিলেন আব্দুল করিম হাসান। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৪তম মিনিটে নিজেদের বিপদ প্রায় ডেকে এনেছিল কাতার। গোলরক্ষককে পাস দিতে আড়াআড়ি বল দিয়েছিলেন এক ডিফেন্ডার। তবে বলের নাগাল পাননি গোলরক্ষক। দৌড়ে নাগাল পাননি ইব্রাহিমও। বল ধরার আগেই কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন এক ডিফেন্ডার।
২৮তম মিনিটে গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত থেকে সতীর্থের ক্রস ডি বক্সে সৃষ্ট জটলা থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে যান ইউসুফ আব্দুরিসাগ। জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করতে কোন ভুল করেননি এ ফরোয়ার্ড। নয় মিনিট পর ব্যবধান বাড়াতে পারতো কাতার। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বাড়ানো বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অসাধারণ এক ভলি করেছিলেন আল মোয়েজ। কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
৪২তম মিনিটে ভাগ্যবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। জামাল ভুঁইয়ার কর্নার থেকে সৃষ্ট জটলায় বারপোস্টে চারটি শট নিয়েছিল বাংলাদেশের জীবন, বিপলু ও ইব্রাহিমরা। তিন তিনটি দারুণ সেভ করেছিলেন কাতার গোলরক্ষক সাদ আল শিব। একবার গোলরক্ষকও পরাস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু গোললাইন থেকে সে বল ফিরিয়ে দেন এক ডিফেন্ডার। হতাশা বাড়ে স্বাগতিক শিবিরে। ফলে এক গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে বেশ গোছানো ফুটবল খেলে বাংলাদেশ। বেশ কিছু দারুণ সুযোগও তৈরি করে তারা। তার প্রায় প্রতিটিই ছিল গোল করার মতো। যদিও এ অর্ধে বলার মতো প্রথম সুযোগটা আসে অতিথিদেরই। ৫৯তম মিনিটে ইউসুফের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ৭১তম মিনিটে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন ইয়াসিন হাসান। সুফিলের ক্রসে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বুকে না নামিয়ে শট নিলে হয়তো গোল পেতে পারতেন। কিন্তু তার দুর্বল হেড ধরতে কোন সমস্যা হয়নি কাতার গোলরক্ষকের।
দুই মিনিট পর ফের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ফাঁকায় শট নেওয়ার সুযোগ ছিল জামাল ভুঁইয়ার। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। পরের মিনিটে বদলী খেলোয়াড় সুফিলের ক্রস থেকে ভালো শট নিয়েছিলেন বিপলু। কিন্তু তার শট গোললাইন থেকে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান এক ডিফেন্ডার। পরের মিনিটে ফের আক্রমণ। তিনজনকে কাটিয়ে ঢুকে শট নিয়েছিলেন ইব্রাহিম। তবে এক ডিফেন্ডার তা প্রতিহত করেন।
৭৭তম মিনিটে আবার হতাশ হয় বাংলাদেশ শিবির। ইব্রাহিমের পাস থেকে বিপলুর নেওয়া একটি বারপোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে হতাশা বাড়ে স্বাগতিকদের। এতো এতো আক্রমণের পর ধারার বিপরীতে ম্যাচের যোগ করার সময়ে বাউদিয়াফের গোল ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় কাতার। জটলায় বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। ফলে ২-০ গোলে হেরেই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।