বিএনপি ক্যাডার থেকে আ’লীগের সভাপতিকে হত্যা করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ফিরোজ

  • আপডেট: ০৬:১০:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৭

ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার:

ধানমন্ডির কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ একসময় বিএনপির এক নেতার ক্যাডার ছিলেন। পাশা-পাশি গুলিস্থানে পকেট মাইর ও ছিনতাইয়ের সাথে জড়ি ছিলেন। পরে তিনি হন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন। চার জনকে হত্যা করাসহ তার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বের হয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

র‌্যাবের করা দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত শনিবার বিকালে ফিরোজকে ঢাকার আদালতে পাঠায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তিনি দুই মামলায় ৫ দিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডে আছেন। বর্তমানে ডিবি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ধানমন্ডির কলাবাগান ক্লাবের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন শফিকুল আলম ফিরোজ। ফিরোজের ছেলের নাম রচি। বাপ-বেটা দুই জনই এলাকার আতঙ্ক। হাতিরপুলের দি তুর্কি অ্যাসোসিয়েট তার আদম ব্যবসায়ের অফিস। পাওনাদার টাকা চাইলে দুই জনকেই হত্যা করে ফিরোজ।

কলাবাগান এলাকায় আরো দুটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে ফিরোজের বিরুদ্ধে। গ্রিন রোডে রূপসী কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ১২ কাঠার একটি জায়গার মালিক ছিলেন কায়কোবাদ নামে এক ব্যক্তি। ঐ জায়গাটি দখল করে বিক্রি করে দেন ফিরোজ ও তার পুত্র।

২০১৭ সালে ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ছিলেন নামজুল করিম পিংকু। তিনি কলাবাগান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাকেও হত্যা করা হয়—এমন অভিযোগও এসেছে। প্রতিপক্ষ কাউকেই জীবিত রাখবেন না—এই নীতিতে চলতেন ফিরোজ।

বিএনপির আমলে কলাবাগান এলাকার এক বিএনপি নেতার ক্যাডার ছিলেন শফিকুল আলম ফিরোজ। চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের রাগৈ গ্রামের শিক্ষক ইদ্রিস পন্ডিতের ছেলে ফিরোজ। মূলত: ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরেই হাওয়া ভবনের বদৌলতে পাল্টে যায় ফিরোজের জীবন। রাতা-রাতি হয়ে যান আন্ডারওয়াল্ডের ডন। তারেক জিয়ার হাত ধরেই উত্থান এ ডন ফিরোজের। কথিত আছে আন্ডারওয়াল্ডের আরেক ডন গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সহযোগি ছিলেন ডন ফিরোজ।  জরুরী অবস্থার সময় পালিয়ে যান বিদেশে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে টাকার বিনিময়ে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ বাগিয়ে নেন তিনি। ফিরোজ বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এজন্য এলাকায় পোষ্টার ছাটানোসহ গনসংযোগও করেন এ সাবেক বিএনপি নেতা।

ফিরোজ কলাবাগানে ৩০ কাঠার জায়গা দখলে নিয়েছেন। ৭/৮ বছর ধরে পান্থপথ, কলাবাগান ও রাজাবাজারের কিছু অংশ, মিরপুর রোডের পূর্ব অংশে যারা বাড়ি করবে তাদের নগদ টাকা ও একটি করে ফ্ল্যাট দিতে হতো ফিরোজকে। পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণকাজ দুই বছর বন্ধ রাখে ফিরোজ। পরে বোঝাপড়া হওয়ার পর নির্মাণকাজ চালু হয়। ফিরোজের সঙ্গে আপস করতে হয়েছে ঐ পক্ষকে।

আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীদের একটি গ্রুপ পরিচালনাকারী ফিরোজ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তিনি করেন না। কলাবাগান এলাকায় তিনি একটি আতঙ্ক। (তথ্য সূত্র:ইত্তেফাক)

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ভারতে মসজিদের স্থানে মন্দির দাবি করে জরিপের চেস্টায় উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে ৩ মুসল্লি নিহত (ভিডিওসহ)

বিএনপি ক্যাডার থেকে আ’লীগের সভাপতিকে হত্যা করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ফিরোজ

আপডেট: ০৬:১০:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার:

ধানমন্ডির কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ একসময় বিএনপির এক নেতার ক্যাডার ছিলেন। পাশা-পাশি গুলিস্থানে পকেট মাইর ও ছিনতাইয়ের সাথে জড়ি ছিলেন। পরে তিনি হন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন। চার জনকে হত্যা করাসহ তার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বের হয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

র‌্যাবের করা দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত শনিবার বিকালে ফিরোজকে ঢাকার আদালতে পাঠায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তিনি দুই মামলায় ৫ দিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডে আছেন। বর্তমানে ডিবি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ধানমন্ডির কলাবাগান ক্লাবের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন শফিকুল আলম ফিরোজ। ফিরোজের ছেলের নাম রচি। বাপ-বেটা দুই জনই এলাকার আতঙ্ক। হাতিরপুলের দি তুর্কি অ্যাসোসিয়েট তার আদম ব্যবসায়ের অফিস। পাওনাদার টাকা চাইলে দুই জনকেই হত্যা করে ফিরোজ।

কলাবাগান এলাকায় আরো দুটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে ফিরোজের বিরুদ্ধে। গ্রিন রোডে রূপসী কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ১২ কাঠার একটি জায়গার মালিক ছিলেন কায়কোবাদ নামে এক ব্যক্তি। ঐ জায়গাটি দখল করে বিক্রি করে দেন ফিরোজ ও তার পুত্র।

২০১৭ সালে ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ছিলেন নামজুল করিম পিংকু। তিনি কলাবাগান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাকেও হত্যা করা হয়—এমন অভিযোগও এসেছে। প্রতিপক্ষ কাউকেই জীবিত রাখবেন না—এই নীতিতে চলতেন ফিরোজ।

বিএনপির আমলে কলাবাগান এলাকার এক বিএনপি নেতার ক্যাডার ছিলেন শফিকুল আলম ফিরোজ। চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের রাগৈ গ্রামের শিক্ষক ইদ্রিস পন্ডিতের ছেলে ফিরোজ। মূলত: ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরেই হাওয়া ভবনের বদৌলতে পাল্টে যায় ফিরোজের জীবন। রাতা-রাতি হয়ে যান আন্ডারওয়াল্ডের ডন। তারেক জিয়ার হাত ধরেই উত্থান এ ডন ফিরোজের। কথিত আছে আন্ডারওয়াল্ডের আরেক ডন গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সহযোগি ছিলেন ডন ফিরোজ।  জরুরী অবস্থার সময় পালিয়ে যান বিদেশে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে টাকার বিনিময়ে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ বাগিয়ে নেন তিনি। ফিরোজ বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এজন্য এলাকায় পোষ্টার ছাটানোসহ গনসংযোগও করেন এ সাবেক বিএনপি নেতা।

ফিরোজ কলাবাগানে ৩০ কাঠার জায়গা দখলে নিয়েছেন। ৭/৮ বছর ধরে পান্থপথ, কলাবাগান ও রাজাবাজারের কিছু অংশ, মিরপুর রোডের পূর্ব অংশে যারা বাড়ি করবে তাদের নগদ টাকা ও একটি করে ফ্ল্যাট দিতে হতো ফিরোজকে। পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণকাজ দুই বছর বন্ধ রাখে ফিরোজ। পরে বোঝাপড়া হওয়ার পর নির্মাণকাজ চালু হয়। ফিরোজের সঙ্গে আপস করতে হয়েছে ঐ পক্ষকে।

আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীদের একটি গ্রুপ পরিচালনাকারী ফিরোজ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তিনি করেন না। কলাবাগান এলাকায় তিনি একটি আতঙ্ক। (তথ্য সূত্র:ইত্তেফাক)