চাঁদপুরে বিউটিশিয়ান তানজিনা খুন ॥ ৩জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের

  • আপডেট: ১২:২২:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ৪০

নিজস্ব প্রতিনিধি॥
চাঁদপুর পৌর এলাকার ১৩ নং ওয়ার্ড ওয়ারলেছ এলাকার বিউটিশিয়ান তানজিনা বেগম (২৫) কে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে নিহত তানজিনার পিতা মুনাফ মুন্সী বাদী হয়ে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে চাঁদপুর মডেল থানায় শনিবার সকালে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তানজিনা বেগম কে তাঁর স্বামী জুয়েল খান গলা টিপে হত্যা করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি।

আর হত্যা করার পর জুয়েল তানজিনাকে সদর হাসপাতালের নীচে রেখে পালিয়েছে। আমরা এ ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।

এ ব্যপারে নিহত তানজিনার পিতা মোঃ মুনাফ মুন্সি জানান, ৪ বছর আগে তার মেয়ে তানজিনাকে চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের তেতুলতলা খান বাড়ির মোঃ নুরু খানের ছেলে জুয়েল খানের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে জুয়েল খান যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে প্রতিনিয়তই মারধর করত। যার ফলে আমরা জুয়েল খান ও তার বাবা নুরু খানের বিরুদ্ধে চাঁদপুর আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করি। ওই মামলায় জুয়েল খান ও তার পিতা নুরু খান চাঁদপুর জেলহাজতে ছিল। ২ মাস আগে তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। জামিনে বের হওয়ার পর জুয়েল খান আদালতের মাধ্যমে আমার মেয়ে তানজিনাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে ওয়ারলেছ এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাসশুরু করে।

গত ১ সপ্তাহ পূর্বে জুয়েল খান অন্য এক মেয়েকে গোপনে বিয়ে করে। ওই বিয়ের পর থেকে তানজিনার উপর সে আরও অমানবিক নির্যাতন শুরু ্করে। এই নির্যাতনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় তানজিনাকে জুয়েল ও তার পরিবারের লোকজন হত্যা করে তার লাশ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন,তানজিনা বেগমের স্বামী জুয়েল খান প্রায়ই যৌতুকের টাকার জন্য তাকে মারধর করতো।এমন একটি যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা জুয়েলের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতেও চলমান রয়েছে। আমরা ধারনা করছি, এই যৌতুকের মামলা তুলে নিতেই জুয়েল খান ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্ত্রী তানজিনাকে গলা টিপে হত্যা করেছে।

তবে আমরা তদন্তের স্বার্থে হাসপাতালের ওই সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।সেখান থেকেই জানতে পারবো তানজিনাকে কে বা কারা হাসপাতালে এনে রেখে গিয়েছিলো।এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী জানান,কিছু দিন পূর্বে তানজিনা বেগম তার স্বামী পরিচয়ে জুয়েল খানকে নিয়ে পৌর ১৩ নং ওয়ার্ডে আসে।সেখানে ওয়ারল্যাছ বাজারস্থ টিএনটি অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারিছ বেপারির ৪ তলা ভবনের নীচতলা ভাড়া নেয়।সেখানেই তানজিনা নিজের নামে একটি বিউটি পার্লার খুলে ব্যবসা শুরু করে।

এ ব্যপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, তানজিনা হত্যার রহস্য উদঘাটনে প্রাথমিকভাবে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে আমরা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। শনিবার বিকেলে তানজিনার ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। সবশেষে বাপের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২নং বালিথুবা ইউয়িননের বালিথুবা গ্রামের মুনাফ মুন্সি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে ৪ বছর সংসার জীবনে তানজিনার কোন সন্তানাদি ছিল না। এই হত্যাকান্ডের পর থেকে ঘাতক জুয়েল খানের পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

সর্বাধিক পঠিত

সমন্বয়ক আর জামায়াতের কারণে ইউনুছ সরকার ব্যর্থ হবে-ইঞ্জি. মমিনুল হক

চাঁদপুরে বিউটিশিয়ান তানজিনা খুন ॥ ৩জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের

আপডেট: ১২:২২:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিনিধি॥
চাঁদপুর পৌর এলাকার ১৩ নং ওয়ার্ড ওয়ারলেছ এলাকার বিউটিশিয়ান তানজিনা বেগম (২৫) কে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে নিহত তানজিনার পিতা মুনাফ মুন্সী বাদী হয়ে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে চাঁদপুর মডেল থানায় শনিবার সকালে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তানজিনা বেগম কে তাঁর স্বামী জুয়েল খান গলা টিপে হত্যা করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি।

আর হত্যা করার পর জুয়েল তানজিনাকে সদর হাসপাতালের নীচে রেখে পালিয়েছে। আমরা এ ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।

এ ব্যপারে নিহত তানজিনার পিতা মোঃ মুনাফ মুন্সি জানান, ৪ বছর আগে তার মেয়ে তানজিনাকে চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের তেতুলতলা খান বাড়ির মোঃ নুরু খানের ছেলে জুয়েল খানের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে জুয়েল খান যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে প্রতিনিয়তই মারধর করত। যার ফলে আমরা জুয়েল খান ও তার বাবা নুরু খানের বিরুদ্ধে চাঁদপুর আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করি। ওই মামলায় জুয়েল খান ও তার পিতা নুরু খান চাঁদপুর জেলহাজতে ছিল। ২ মাস আগে তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। জামিনে বের হওয়ার পর জুয়েল খান আদালতের মাধ্যমে আমার মেয়ে তানজিনাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে ওয়ারলেছ এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাসশুরু করে।

গত ১ সপ্তাহ পূর্বে জুয়েল খান অন্য এক মেয়েকে গোপনে বিয়ে করে। ওই বিয়ের পর থেকে তানজিনার উপর সে আরও অমানবিক নির্যাতন শুরু ্করে। এই নির্যাতনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় তানজিনাকে জুয়েল ও তার পরিবারের লোকজন হত্যা করে তার লাশ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন,তানজিনা বেগমের স্বামী জুয়েল খান প্রায়ই যৌতুকের টাকার জন্য তাকে মারধর করতো।এমন একটি যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা জুয়েলের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতেও চলমান রয়েছে। আমরা ধারনা করছি, এই যৌতুকের মামলা তুলে নিতেই জুয়েল খান ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্ত্রী তানজিনাকে গলা টিপে হত্যা করেছে।

তবে আমরা তদন্তের স্বার্থে হাসপাতালের ওই সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।সেখান থেকেই জানতে পারবো তানজিনাকে কে বা কারা হাসপাতালে এনে রেখে গিয়েছিলো।এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী জানান,কিছু দিন পূর্বে তানজিনা বেগম তার স্বামী পরিচয়ে জুয়েল খানকে নিয়ে পৌর ১৩ নং ওয়ার্ডে আসে।সেখানে ওয়ারল্যাছ বাজারস্থ টিএনটি অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারিছ বেপারির ৪ তলা ভবনের নীচতলা ভাড়া নেয়।সেখানেই তানজিনা নিজের নামে একটি বিউটি পার্লার খুলে ব্যবসা শুরু করে।

এ ব্যপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, তানজিনা হত্যার রহস্য উদঘাটনে প্রাথমিকভাবে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে আমরা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। শনিবার বিকেলে তানজিনার ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। সবশেষে বাপের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২নং বালিথুবা ইউয়িননের বালিথুবা গ্রামের মুনাফ মুন্সি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে ৪ বছর সংসার জীবনে তানজিনার কোন সন্তানাদি ছিল না। এই হত্যাকান্ডের পর থেকে ঘাতক জুয়েল খানের পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।