পদ্মা-মেঘনায় দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ

  • আপডেট: ০৪:২০:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ৩১

মনিরুল ইসলাম মনির :
জাটকা রক্ষা ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে শনিবার মধ্যরাত থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস ইলিশ’সহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকা হিসেবে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ সময় ইলিশসহ যে কোনো মাছ আহরণ, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন করা যাবে না।
মতলব উত্তর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছে। এসব জেলেদের এই দুই মাস বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন, গবাদিপশু অন্যন্যা সামগ্রী প্রদান করা হবে। এছাড়াও ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চার মাস প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। যাতে করে জেলেরা জাটকা নিধন না করেন।
মতলব উত্তর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মালিক তানভীর হোসেন জানান, জাটকা রক্ষার দুই মাসের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। আমরা জেলে, জেলে সংগঠনের নেতারা, জনপ্রতিনিধিসহ সব কমিউনিটি লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। নদী উপকূলীয় এলাকায় জাটকা নিধন না করার জন্য মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। দুই মাস নদীতে জেলা টাস্কফোর্স নিয়মিত দায়িত্বপালন করবেন। এরপরও যদি কোনো জেলে আইন অমান্য করে মাছ আহরণ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিন জানান, আমরা জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, কোস্টগার্ড ও জেলে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করেছি। আইন অমান্য করে জাটকা আহরণ করলে আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। নৌ-এলাকার সব থানা ও ইউনিটের পুলিশ নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করবে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএম জহিরুল হায়াত বলেন, ইলিশ দিয়েই চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিং হয়েছে। তাই এই ইলিশ রক্ষার দায়িত্ব চাঁদপুরের সিকি কোটি মানুষের। আমরা সকল শ্রেণি পেশার লোককে নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছি। জাটকা নিধনের সঙ্গে জড়িত কাউকেই কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। আমরা চাঁদপুরের বিগত দিনের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে চাই। সবার সহযোগিতা থাকলে অবশ্যই দুই মাসের এ কর্মসূচি সফল হবে।
মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ানম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ কুদ্দুস বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের জাটকা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাটকা মাছ নিধনরোধ করতে পারলে বাংলাদেশ ইলিশের প্রাচুর্যে ভরে যাবে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে কোন অবস্থাতেই জাটকা ইলিশ ধরা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ জাটকা মাছ ধরতে নদীতে নামলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাটকা নিধনরোধে কাজ করার আহবান জানান।
চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় গৌরব, একে রক্ষায় জাটকা ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে হবে। দেশ থেকে কারেন্ট জাল উঠিয়ে দিতে হবে। এতে শুধু দেশের মানুষের চাহিদা পূরণই নয়, বিশ্ববাসীকেও ইলিশের স্বাদ ফিরিয়ে দিতে পারবে বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, দেশের ৪০০ কিলোমিটার নদীপথে ইলিশ বিচরণ করে। এদের এই বিচরণের এলাকায় চার ধরনের কারেন্ট জাল ব্যবহার করে জাটকা শিকার করা হচ্ছে। সরকার এই জাটকা শিকারের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরও কঠোর হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী’র সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম

পদ্মা-মেঘনায় দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ

আপডেট: ০৪:২০:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০

মনিরুল ইসলাম মনির :
জাটকা রক্ষা ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে শনিবার মধ্যরাত থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস ইলিশ’সহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকা হিসেবে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ সময় ইলিশসহ যে কোনো মাছ আহরণ, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন করা যাবে না।
মতলব উত্তর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছে। এসব জেলেদের এই দুই মাস বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন, গবাদিপশু অন্যন্যা সামগ্রী প্রদান করা হবে। এছাড়াও ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চার মাস প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। যাতে করে জেলেরা জাটকা নিধন না করেন।
মতলব উত্তর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মালিক তানভীর হোসেন জানান, জাটকা রক্ষার দুই মাসের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। আমরা জেলে, জেলে সংগঠনের নেতারা, জনপ্রতিনিধিসহ সব কমিউনিটি লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। নদী উপকূলীয় এলাকায় জাটকা নিধন না করার জন্য মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। দুই মাস নদীতে জেলা টাস্কফোর্স নিয়মিত দায়িত্বপালন করবেন। এরপরও যদি কোনো জেলে আইন অমান্য করে মাছ আহরণ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিন জানান, আমরা জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, কোস্টগার্ড ও জেলে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করেছি। আইন অমান্য করে জাটকা আহরণ করলে আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। নৌ-এলাকার সব থানা ও ইউনিটের পুলিশ নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করবে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএম জহিরুল হায়াত বলেন, ইলিশ দিয়েই চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিং হয়েছে। তাই এই ইলিশ রক্ষার দায়িত্ব চাঁদপুরের সিকি কোটি মানুষের। আমরা সকল শ্রেণি পেশার লোককে নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছি। জাটকা নিধনের সঙ্গে জড়িত কাউকেই কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। আমরা চাঁদপুরের বিগত দিনের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে চাই। সবার সহযোগিতা থাকলে অবশ্যই দুই মাসের এ কর্মসূচি সফল হবে।
মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ানম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ কুদ্দুস বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের জাটকা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাটকা মাছ নিধনরোধ করতে পারলে বাংলাদেশ ইলিশের প্রাচুর্যে ভরে যাবে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে কোন অবস্থাতেই জাটকা ইলিশ ধরা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ জাটকা মাছ ধরতে নদীতে নামলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাটকা নিধনরোধে কাজ করার আহবান জানান।
চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় গৌরব, একে রক্ষায় জাটকা ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে হবে। দেশ থেকে কারেন্ট জাল উঠিয়ে দিতে হবে। এতে শুধু দেশের মানুষের চাহিদা পূরণই নয়, বিশ্ববাসীকেও ইলিশের স্বাদ ফিরিয়ে দিতে পারবে বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, দেশের ৪০০ কিলোমিটার নদীপথে ইলিশ বিচরণ করে। এদের এই বিচরণের এলাকায় চার ধরনের কারেন্ট জাল ব্যবহার করে জাটকা শিকার করা হচ্ছে। সরকার এই জাটকা শিকারের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরও কঠোর হবে।