নিজস্ব প্রতিনিধি॥
চাঁদপুরের জন্ম নেয়া উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, সম্পাদক সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কেবল একটি নাম নয়, তিনি নিজেই একটি যুগের স্রষ্টা, একটি ইতিহাস। তাঁর কর্ম, অপরিসীম সাহস, নিবেদিত নিরলস প্রচেষ্টা চিন্তাশীল মানুষের কাছে এখনো বিস্ময় জাগানিয়া। সমাজের কুসংস্কার, অশিক্ষা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই ছিল আমৃত্যু। সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘বিরুদ্ধ স্রোতের মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন’। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন গল্পকার কাদের পলাশ ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। চলতি মাসের ২৩ জানুয়ারী বইটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স।
বইটির শুরুতে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা লিখেছেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। তিনি লিখেছেন, “আমাদের সমাজ, সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের নাম চিরস্মরণীয়। সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, নারীমুক্তির জন্যে এবং মুক্তবুদ্ধিকে উৎসাহিত করতে তাঁর ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, তাঁর সম্পাদিত ‘সওগাত’ পত্রিকা, বেগম রোকেয়া ও নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর সাহচর্য প্রভৃতি সম্পর্কে গুণীজনদের আলোচনা নিয়ে কাদের পলাশ ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের সম্পাদনায় ‘বিরুদ্ধ স্রোতের নাসিরউদ্দীন’ গ্রন্থটি প্রকাশ পেতে যাচ্ছে যেনে আমি আনন্দিত হলাম। সংকলনটি গুরুত্ববহ।”
লেখকদের ভূমিকায় কাদের পলাশ ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান লিখেছেন : আমাদের সমাজ, ভাষা, সাহিত্য, নারী অধিকার নিয়ে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের কর্ম কালজয়ী হলেও তাঁকে নিয়ে আমাদের দেশে ওই অর্থে কোনো গবেষণা হয়নি। আমাদের জানা মতে, এ পর্যন্ত তাঁর সমগ্র জীবন ও কর্ম নিয়ে কোনো একক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। এ সীমাবদ্ধতা অনুধাবন করেই ‘বিরুদ্ধ স্রোতের মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন’ গ্রন্থের প্রয়াস। আমাদের চেষ্টা ছিল, এ গ্রন্থে সামগ্রিক নাসিরউদ্দীনকে তুলে ধরা এবং তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে পাঠককে একটি পরিচ্ছন্ন ধারণা দেয়া।
‘বিরুদ্ধ স্রোতের মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন’-এর প্রচ্ছদ করেছেন জি জি। ২৪০ পৃষ্ঠার মূল্য রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা। পাওয়া যাবে পাঞ্জেরী বুকশপ, রকমারি ডটকমসহ দেশের অভিজাত বুকস্টলগুলোতে। চাঁদপুরে বইটি পাওয়া যাবে চিত্রলেখার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে।
উল্লেখ্য, কাদের পলাশের জন্ম ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর। পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বাসাবাড়িয়া গ্রামে। সাপ্তাহিক ‘শপথ’ পত্রিকা সম্পাদনাসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে তিনি সংবাদিকতা করছেন। তিনি গল্প ও কবিতা লিখতে পছন্দ করেন। লিটলম্যাগ ‘ত্রিনদী’ সম্পাদনা করেন। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘দীর্ঘশ্বাসের শব্দ’ ও ‘ইচ্ছেরা উড়ে গেছে’। সাহিত্য চর্চা ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্যে কাদের পলাশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের জন্ম ১৯৯২ সালে, চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায়। জাতীয় প্রায় অনেক দৈনিকেই তিনি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, কলাম লিখেন নিয়মিত। তিনি দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় সাহিত্য পাতায় নিয়মিত লিখে থাকেন এবং বহু লেখা এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে, সাহিত্য পাতায়। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দৈনিক ও ম্যাগাজিনে তার দুশতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। লেখালেখির পাশাপাশি সম্পাদনা করছেন গল্পের কাগজ ‘বাঁক’ এবং লিটলম্যাগ ‘মৃত্তিকা’। তার প্রথম গ্রন্থ ‘সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’। সম্পাদিত গ্রন্থ : যাপনে উদযাপনে ইলিশ (২০১৮), কিশোরদের জন্যে কালজয়ী কবিতা (২০২০)। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘দেশজ জাতীয় পান্ডুলিপি পুরস্কার-২০১৭’ ও ‘সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুর পুরস্কার-২০১৪’ লাভ করেন।
উল্লেখ্য,সম্প্রতি চাঁদপুর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়, কবিতায়, আলোচনায় সওগাত সম্পাদক নাছিরউদ্দীন স্মরণে ‘মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন: প্রগতির ধ্রুবতারা’ শীর্ষক সেমিনার ও সাহিত্য আড্ডা। সেখানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন-এর ১৩১ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয় চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির আয়োজনে। এ উপলক্ষে ‘মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন: প্রগতির ধ্রুবতারা’ শীর্ষক সেমিনার ও সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করা হয়। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের সভাপতিত্বে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা।
এর আগে শুরুতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। তিনি বলেন, চাঁদপুরবাসী ভাগ্যবান এমন একজন মানুষের জন্ম এ মাটিতে হয়েছে। এমন একটি মহতি ও মনমুগ্ধকর অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
সাহিত্য আড্ডায় সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাছিরউদ্দীন সম্পর্কে আলোচনা রাখেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. এএসএম দেলোয়ার হোসেন, লেখক ও গ্রন্থাগারিক তৃপ্তি সাহা ও বিরুদ্ধ স্রোতের নাসিরউদ্দীন গ্রন্থর সম্পাদক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেণ চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির অধ্যক্ষ, কবি ও প্রান্ধিক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া এবং মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের জীবন পরিক্রমা পাঠ করেণ, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির উপাধ্যক্ষ রাসেল হাসান।
গল্পকার ও সম্পাদক কাদের পলাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাংস্কৃতিক সংগঠক শহীদ পাটওয়ারী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লক্ষন চন্দ্র সূত্রধর। অনুষ্ঠানের ফাঁকে সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি শামীম আহমেদ, চাঁদপুর বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সাংগঠণিক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক।