আতিথেয়তার দেশের সেরা শহর কুমিল্লা

  • আপডেট: ০৭:৩৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০১৯
  • ৬৩

অনলাইন ডেস্কঃ

শুরুতেই রসমালাই প্রসঙ্গ। হ্যাঁ, কুমিল্লা জেলা নিয়ে আলোচনা করতে হলে সবার আগে যে প্রসঙ্গটি চলে আসে তা হল ঐতিহ্যবাহী মাতৃভান্ডার এর রসমালাই। আমরা কম বেশি অনেকেই হয়ত খেয়ে থাকব কুমিল্লার সেই মাতৃভান্ডার এর রসমালাই। আহ! কি অমৃত স্বাদ। যে একবার খেয়েছেন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এবং সুযোগ পেলে আবার সেই স্বাদ নেয়ার প্রত্যাশায় আছেন। তবে শুধু কি রসমালাই ??

নানা কারণে বিখ্যাত হয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা জেলা। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত একটি মহানগর। ১৫৩ কিলোমিটার আয়তনের ২৩লাখ জনসংখ্যার এই জেলায় আছে বড় বড় দীঘি আর ঐতিহাসিক শালবন বিহার। কুমিল্লায় এখন ১৭টি উপজেলা আর এগুলো বিভক্ত ১১টি সংসদীয় আসনে।

কুমিল্লা একসময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল, সেসময় নোয়াখালীও তার অংশ ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এ অঞ্চলটি দখলে নেয় আর ১৭৮১ সালে নোয়াখালীকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর ১৭৯০ সালে কোম্পানী শাসনামলেই ত্রিপুরা নামে জেলার সৃষ্টি,তবে ১৯৬০ সালে এরই নাম করা হয় কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলার নামকরণের নানান তথ্য লোক মুখে শোনা যায় তবে তার মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য দুটো তথ্য তুলে ধরা হলঃ

১. চীনা পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্তে কিয়া-মল-ঙ্কিয়া (করধসড়ষড়হশরধ) নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ করা হয়েছে বলে পন্ডিতেরা অভিমত দিয়েছেন।

২. চতুর্দশ শতকে হযরত শাহজালাল তাঁর মামা আহমেদ কবীর এর নির্দেশে একমুঠো মাটি নিয়ে ধর্ম প্রচারে বের হন। মামা নির্দেশ দেন এই মাটির মত মাটি যেখানে পাবে সেখান থেকেই ধর্ম প্রচার শুরু করতে হবে। হযরত শাহজালাল বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এই কুমিল্লাতেই সেই মাটির মত মাটি খুঁজে পান। যখন খুঁজে পান তখন তিনি আনন্দে বলে উঠেন ‘কোহমিলা’ যার অর্থ কাঙ্ক্ষিত মাটি। সেই কোহমিলা থেকেই কুমিল্লা নামকরণ করা হয়েছে। শাহজালালের ধর্মপ্রচারও সেখান থেকেই শুরু হয়। কুমিল্লা নিয়ে ‘কুমিল্লা জেলার ইতিহাস’ নামে প্রয়াত গবেষক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার একটি বই ও আছে।

মেঘনা-গোমতী-তিতাস-ডাকাতিয়া বিধৌত প্রাচীন জনপদ কুমিল্লা। এখানে আছে বিখ্যাত লালমাই পাহাড়, ময়নামতি, শালবন বিহার, ভোজবিহার ,শাহ সুজা মসজিদ, কোটিলা মুড়া, চন্ডিমুড়া, রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ওয়ার সিমেট্রি (ইংরেজ কবরস্থান) ধর্মসাগর, রাণীর দীঘি, নানুয়ার দিঘী’সহ নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মেজর আব্দুল গণি, সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মন, রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা নওয়াব নবাব ফয়জুন্নেসা ও কুমিল্লা মডেলের পথিকৃত ডক্টর আখতার হামিদ খানের স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লা দেশের রাজনীতি অথনীতি,শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। চলুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসি।

১. শালবন বিহার শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। লালমাই-ময়নামতি অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই বৌদ্ধ বিহার। এতে ৭ম থেকে ১২শ শতকের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় যে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন।

২. ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি বাংলাদেশের কুমিল্লাতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে তৎকালীন বার্মা, আসাম, এবং বাংলাদেশে ৯টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এরকম দুটি সমাধিক্ষেত্র আছে, যার একটি কুমিল্লায় এবং অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ভারতবর্ষ ও বৃটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। ১৯৪৬ সালে তৈরি করা এ সমাধি কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই অবস্থিত। এতে ৭৩৬টি কবর রয়েছে।

৩. শাহ সুজা মসজিদ শাহ সুজা মসজিদ প্রায় সাড়ে তিনশ বছর ধরে কুমিল্লায় স্ব মহিমায় টিকে আছে। এ মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ মসজিদ যে পাক ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম সে বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক মোগলটুলী শাহ সুজা মসজিদের প্রতিষ্ঠার প্রকৃত সন তারিখ উল্লেখ না থাকলেও জনশ্রুতি রয়েছে যে, ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। শাহ সুজা যখন বাংলার সুবেদার ছিলেন তখন এ মসজিদ নির্মিত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু তিনি নিজে এ মসজিদ নির্মাণ করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। কারণ, শাহ সুজা কোন দিন ত্রিপুরা রাজ্য বিজয়ে এসেছিলেন বলে নির্ভরযোগ্য কোন দলিল নেই।

৪. বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি,বার্ড বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) একটি আন্তর্জাতিক মানের স্বায়ত্তশাসিত শাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে এটি পাকিস্তান গ্রাম উন্নয়ন একাডেমী নামে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার পর এর নামকরন হয় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী -বার্ড। প্রখ্যাত দার্শনিক ও সমাজ বিজ্ঞানী এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. আখতার হামিদ খাঁন বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলন কুমিল্লা থেকেই শুরু হয় আক্তার হামিদ খানের হাত ধরে। পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, গবেষনা ও প্রায়োগিক গবেষনার মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন তথা পল্লী দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করা এর প্রধান কাজ। শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি নামক স্থানে বার্ডের অবস্থান।

৫. ধর্মসাগর এটি একটি প্রাচীন দিঘী যা কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ত্রিপুরার অধিপতি মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খন
খনন করেন। তার নামেই এর নামকরণ করা হয়। ধর্মসাগরের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে আরেকটি বিশাল দিঘী যা নানুয়ার দিঘী নামে পরিচিত। এছাড়া,ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশেই রয়েছে বিখ্যাত রাণীর দিঘী যা মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ করা হয়েছে বলে প্রচলিত আছে। রসমালাইয়ের পাশাপাশি খাদি শিল্প, তাঁত শিল্প, কুটির শিল্প ও ময়নামতির শীতল পাটির জন্য এক সময় বিখ্যাত ছিল কুমিল্লা। কালের বিবর্তনে অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও হারায়নি এখানকার মানুষের আতিথেয়তা ও সামাজিক সম্প্রীতি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

যে কারণে পুরুষে ৪টি বিয়ের পক্ষে হীরা সুমরো

আতিথেয়তার দেশের সেরা শহর কুমিল্লা

আপডেট: ০৭:৩৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০১৯

অনলাইন ডেস্কঃ

শুরুতেই রসমালাই প্রসঙ্গ। হ্যাঁ, কুমিল্লা জেলা নিয়ে আলোচনা করতে হলে সবার আগে যে প্রসঙ্গটি চলে আসে তা হল ঐতিহ্যবাহী মাতৃভান্ডার এর রসমালাই। আমরা কম বেশি অনেকেই হয়ত খেয়ে থাকব কুমিল্লার সেই মাতৃভান্ডার এর রসমালাই। আহ! কি অমৃত স্বাদ। যে একবার খেয়েছেন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এবং সুযোগ পেলে আবার সেই স্বাদ নেয়ার প্রত্যাশায় আছেন। তবে শুধু কি রসমালাই ??

নানা কারণে বিখ্যাত হয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা জেলা। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত একটি মহানগর। ১৫৩ কিলোমিটার আয়তনের ২৩লাখ জনসংখ্যার এই জেলায় আছে বড় বড় দীঘি আর ঐতিহাসিক শালবন বিহার। কুমিল্লায় এখন ১৭টি উপজেলা আর এগুলো বিভক্ত ১১টি সংসদীয় আসনে।

কুমিল্লা একসময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল, সেসময় নোয়াখালীও তার অংশ ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এ অঞ্চলটি দখলে নেয় আর ১৭৮১ সালে নোয়াখালীকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর ১৭৯০ সালে কোম্পানী শাসনামলেই ত্রিপুরা নামে জেলার সৃষ্টি,তবে ১৯৬০ সালে এরই নাম করা হয় কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলার নামকরণের নানান তথ্য লোক মুখে শোনা যায় তবে তার মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য দুটো তথ্য তুলে ধরা হলঃ

১. চীনা পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্তে কিয়া-মল-ঙ্কিয়া (করধসড়ষড়হশরধ) নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ করা হয়েছে বলে পন্ডিতেরা অভিমত দিয়েছেন।

২. চতুর্দশ শতকে হযরত শাহজালাল তাঁর মামা আহমেদ কবীর এর নির্দেশে একমুঠো মাটি নিয়ে ধর্ম প্রচারে বের হন। মামা নির্দেশ দেন এই মাটির মত মাটি যেখানে পাবে সেখান থেকেই ধর্ম প্রচার শুরু করতে হবে। হযরত শাহজালাল বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এই কুমিল্লাতেই সেই মাটির মত মাটি খুঁজে পান। যখন খুঁজে পান তখন তিনি আনন্দে বলে উঠেন ‘কোহমিলা’ যার অর্থ কাঙ্ক্ষিত মাটি। সেই কোহমিলা থেকেই কুমিল্লা নামকরণ করা হয়েছে। শাহজালালের ধর্মপ্রচারও সেখান থেকেই শুরু হয়। কুমিল্লা নিয়ে ‘কুমিল্লা জেলার ইতিহাস’ নামে প্রয়াত গবেষক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার একটি বই ও আছে।

মেঘনা-গোমতী-তিতাস-ডাকাতিয়া বিধৌত প্রাচীন জনপদ কুমিল্লা। এখানে আছে বিখ্যাত লালমাই পাহাড়, ময়নামতি, শালবন বিহার, ভোজবিহার ,শাহ সুজা মসজিদ, কোটিলা মুড়া, চন্ডিমুড়া, রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ওয়ার সিমেট্রি (ইংরেজ কবরস্থান) ধর্মসাগর, রাণীর দীঘি, নানুয়ার দিঘী’সহ নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মেজর আব্দুল গণি, সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মন, রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা নওয়াব নবাব ফয়জুন্নেসা ও কুমিল্লা মডেলের পথিকৃত ডক্টর আখতার হামিদ খানের স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লা দেশের রাজনীতি অথনীতি,শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। চলুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসি।

১. শালবন বিহার শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। লালমাই-ময়নামতি অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই বৌদ্ধ বিহার। এতে ৭ম থেকে ১২শ শতকের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় যে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন।

২. ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি বাংলাদেশের কুমিল্লাতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে তৎকালীন বার্মা, আসাম, এবং বাংলাদেশে ৯টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এরকম দুটি সমাধিক্ষেত্র আছে, যার একটি কুমিল্লায় এবং অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ভারতবর্ষ ও বৃটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। ১৯৪৬ সালে তৈরি করা এ সমাধি কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই অবস্থিত। এতে ৭৩৬টি কবর রয়েছে।

৩. শাহ সুজা মসজিদ শাহ সুজা মসজিদ প্রায় সাড়ে তিনশ বছর ধরে কুমিল্লায় স্ব মহিমায় টিকে আছে। এ মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ মসজিদ যে পাক ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম সে বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক মোগলটুলী শাহ সুজা মসজিদের প্রতিষ্ঠার প্রকৃত সন তারিখ উল্লেখ না থাকলেও জনশ্রুতি রয়েছে যে, ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। শাহ সুজা যখন বাংলার সুবেদার ছিলেন তখন এ মসজিদ নির্মিত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু তিনি নিজে এ মসজিদ নির্মাণ করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। কারণ, শাহ সুজা কোন দিন ত্রিপুরা রাজ্য বিজয়ে এসেছিলেন বলে নির্ভরযোগ্য কোন দলিল নেই।

৪. বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি,বার্ড বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) একটি আন্তর্জাতিক মানের স্বায়ত্তশাসিত শাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে এটি পাকিস্তান গ্রাম উন্নয়ন একাডেমী নামে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার পর এর নামকরন হয় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী -বার্ড। প্রখ্যাত দার্শনিক ও সমাজ বিজ্ঞানী এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. আখতার হামিদ খাঁন বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলন কুমিল্লা থেকেই শুরু হয় আক্তার হামিদ খানের হাত ধরে। পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, গবেষনা ও প্রায়োগিক গবেষনার মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন তথা পল্লী দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করা এর প্রধান কাজ। শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি নামক স্থানে বার্ডের অবস্থান।

৫. ধর্মসাগর এটি একটি প্রাচীন দিঘী যা কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ত্রিপুরার অধিপতি মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খন
খনন করেন। তার নামেই এর নামকরণ করা হয়। ধর্মসাগরের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে আরেকটি বিশাল দিঘী যা নানুয়ার দিঘী নামে পরিচিত। এছাড়া,ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশেই রয়েছে বিখ্যাত রাণীর দিঘী যা মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ করা হয়েছে বলে প্রচলিত আছে। রসমালাইয়ের পাশাপাশি খাদি শিল্প, তাঁত শিল্প, কুটির শিল্প ও ময়নামতির শীতল পাটির জন্য এক সময় বিখ্যাত ছিল কুমিল্লা। কালের বিবর্তনে অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও হারায়নি এখানকার মানুষের আতিথেয়তা ও সামাজিক সম্প্রীতি।