চাঁদপুর, ৮ ডিসেম্বর, রবিবার:
চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েকে দেখতে এসে করুণভাবে মৃত্যু বরণ করেছে নুরজাহান বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধা মা। নিহত বৃদ্ধার মেয়ে রুমানা বেগম (২২) চাঁদপুর সদর হাসপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে, রোববার দুপুরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ভিতরে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে আগত রোগী ও শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শত–শত মানুষ হাসপাতালের গাইনী বিভাগে এসে ভিড় জমায়। এ সময় মানুষজনের মধ্যে এক হৃদয় বিধারক দৃশ্যের অবতারনা লক্ষ করা যায়। ঘটনার পর হাসপাতালে ছুটে এসে ভিড় জমায় চাঁদপুরে বসবাসরত নিহতের আত্বীয় স্বজন। তখন নিহতের স্বজনদের, নিহত নূরজাহানের স্বামী ও মেয়ে রুমানার কান্নায় হাসপাতালের বাতাস তাৎক্ষনিক ভারি হয়ে উঠে। তারা বুকফাটা কান্নায় হঠাৎ–হঠাৎ মুর্ছা যেতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: আশিবুল আহসান চোধুরী আসিফ,ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে বলেন,মেয়েকে দেখতে এসে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ধারনা করা হচেছ,নিহত মহিলার পুর্ব থেকে সম্ববত পেশার অথবা হার্ডের সমস্যা ছিল। যার কারনে এ ঘটনা হয়তোবা হয়েছে।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়,চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার ট্রাকরোড বটতলা এলাকায় বসবাস করেন,নিহত নূরজাহানের মেয়ে রুমানা বেগম ও তার স্বামী মমিনুল ইসলাম। রুমানার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ও সে অন্ত:সত্বার কারনে তাকে চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। রুমানার চিকিৎসা চলা অবস্থায় তার মা’তাকে দেখার জন্য গতকাল রোববার দুপুরে দিনাজপুর থেকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে এসে লঞ্চ থেকে নামেন। রুমানার বাবা ওহিদুল ইসলাম জানান, লঞ্চঘাটে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন মেয়ে রুমানার অবস্থা অনেক খারাপ,তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়ের প্রতি মায়ের অনেক মায়া থাকার কারনে মা’আবেগ আপ্লুত হয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালে। দুপুর সোয়া ১টায় হাসপাতালে এসে জানতে পারেন মেয়ের শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ তাকে সিজার (অপারেশন)করতে হবে। এ সব জেনে চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে রুমানার মায়ের হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সে হার্ডএটাক হয়ে ফ্লোরে পড়ে গিয়ে মারা জান। তারবাড়ি দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার পাকের হাট গ্রামে।
ঘটনার বিষয়ে ইবনেসিনা ফার্মাসিটিকেলের চাঁদপুরের এরিয়া ম্যানেজার মো: জাকিউল ইসলাম জানান,নিহত নূরজাহানের মেয়ের শারীরিক অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে তার বাবা,ওহিদুল ইসলাম ও মা’নূরজাহান বেগম দিনাজপুর থেকে আজ দুপুরে চাঁদপুর আসেন। তার পর মেয়ে রুমানাকে দেখার জন্য চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ছুটে আসেন চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগে। সেখানে মেয়ে রুমানার সাথে শারীরিক অবস্থার কথা বলার সময় হঠাৎ তিনি গাইনি বিভাগের ফ্লোরে লুটে পড়েন। খবর পেয়ে হাসপাতালের আরএমও ডা: আশিবুল আহসান চোধুরী আসিফ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন নূরজাহানের মৃত্যু হয়েছে। তার পরও দীর্ঘ সময় অক্যিজেন দিয়ে ও ইসিজি করে নূরজাহানের মৃত্যু নিশ্চিত হন।
দুপুরেই নিহত নূরজাহানের আত্বীয় স্বজনরা তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান বলে হাসপতাল কর্তৃপক্ষ জানান। নিহতের মেয়ের জামাতা মমিনুল ইসলাম জানান,নিহত নূরজাহানের লাশ বিকেলে এম্বুলেন্স যোগে তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।