কালের স্বাক্ষী লক্ষ্মীপুর জমিদারবাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘি

  • আপডেট: ০৪:০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৯
  • ৩৪

লক্ষীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ দালাল বাজার জমিদারবাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘিকে ঘিরে দেখা দিয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। জঙ্গলে ঘেরা ভুতুড়ে বাড়িটি সরকারি উদ্যোগে সংস্কার করায় এখন অপূর্ব প্রাচীন এ অন্যতম নিদর্শন আর রহস্যেঘেরা দীঘিটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। তবে এ আয়োজনের আরও ব্যাপকতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা। জেলা প্রশাসক বলেছেন, পর্যটন শিল্পের জন্য এ জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান এ দুটি। সরকারের পরিকল্পনা ও বরাদ্দ প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানালেন তিনি। জানা যায়, লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণব প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে কলকাতা থেকে কাপড়ের ব্যবসা করতে দালাল বাজারে আসেন। তার উত্তর পুরুষরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক এজেন্সি এবং পরে জমিদারি লাভ করেন। বাণিজ্যিক এজেন্ট হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের মনেপ্রাণে গ্রহণ করেননি। তাদের ‘দালাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। ১৯৪৬ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জমিদাররা পালিয়ে গেলে তাদের পরিত্যক্ত জমিদারবাড়িটি রয়ে যায়। প্রায় ৫ একরের এ জমিদারবাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্মীপুরবাসীর দাবি ছিল ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি যেন বিলীন না হয়। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মাধ্যমে সংস্কার করে পর্যটন স্পট ঘোষণা করার দাবিও ছিল স্থানীয়দের।এমন দাবি ও সরকারের বরাদ্দ প্রাপ্তিতে বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন।

রাস্তার উন্নয়ন, কয়েকটি শেড নির্মাণ, আবর্জনা সরিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও স্থাপনাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের নানা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসু নারী-শিশু, কিশোর কিশোরীসহ সব বয়সী মানুষ ছুটে আসে এখানে। বাজারসংলগ্ন রাজগেট, রাজপ্রাসাদ, জমিদার প্রাসাদ, অন্দরমহল প্রাসাদ, বাড়ির প্রাচীর, ছোট-বড় ৫টি পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট, নাটমন্দির, পূজামন্ডপ, বিরাটাকারের লোহার সিন্দুক, কয়েক টন ওজনের লোহার বিম মুগ্ধ করে তোলে। গল্প আড্ডায় অন্যরকম আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল থেকে যে কোনো যানবাহনে দালাল বাজারে খুব সহজে যাওয়া যায়। প্রবেশ পথেই ২২ একর জমি নিয়ে খোয়া সাগর দীঘিও মনকাড়ে পর্যটকদের। দীঘির এক পাড় থেকে অন্যপাড় দেখা না যাওয়ায় খোয়া সাগর দীঘি হিসেবে নামকরণ করা হয়। দীঘির পাড়ে অতিথি পাখির কলতান আর মনোমুগ্ধকর বাতাসে প্রশান্তির ছোঁয়া আকৃষ্ট করে তোলে আগন্তুকদের। একই সঙ্গে পর্যটকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে পর্যটন স্পট ঘোষণা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, ঐতিহ্যবাহী দালাল বাজার জমিদারবাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘিকে ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা দিন দিন ওই স্থাপনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

যে কারণে পুরুষে ৪টি বিয়ের পক্ষে হীরা সুমরো

কালের স্বাক্ষী লক্ষ্মীপুর জমিদারবাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘি

আপডেট: ০৪:০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

লক্ষীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ দালাল বাজার জমিদারবাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘিকে ঘিরে দেখা দিয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। জঙ্গলে ঘেরা ভুতুড়ে বাড়িটি সরকারি উদ্যোগে সংস্কার করায় এখন অপূর্ব প্রাচীন এ অন্যতম নিদর্শন আর রহস্যেঘেরা দীঘিটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। তবে এ আয়োজনের আরও ব্যাপকতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা। জেলা প্রশাসক বলেছেন, পর্যটন শিল্পের জন্য এ জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান এ দুটি। সরকারের পরিকল্পনা ও বরাদ্দ প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানালেন তিনি। জানা যায়, লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণব প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে কলকাতা থেকে কাপড়ের ব্যবসা করতে দালাল বাজারে আসেন। তার উত্তর পুরুষরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক এজেন্সি এবং পরে জমিদারি লাভ করেন। বাণিজ্যিক এজেন্ট হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের মনেপ্রাণে গ্রহণ করেননি। তাদের ‘দালাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। ১৯৪৬ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জমিদাররা পালিয়ে গেলে তাদের পরিত্যক্ত জমিদারবাড়িটি রয়ে যায়। প্রায় ৫ একরের এ জমিদারবাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্মীপুরবাসীর দাবি ছিল ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি যেন বিলীন না হয়। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মাধ্যমে সংস্কার করে পর্যটন স্পট ঘোষণা করার দাবিও ছিল স্থানীয়দের।এমন দাবি ও সরকারের বরাদ্দ প্রাপ্তিতে বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন।

রাস্তার উন্নয়ন, কয়েকটি শেড নির্মাণ, আবর্জনা সরিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও স্থাপনাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের নানা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসু নারী-শিশু, কিশোর কিশোরীসহ সব বয়সী মানুষ ছুটে আসে এখানে। বাজারসংলগ্ন রাজগেট, রাজপ্রাসাদ, জমিদার প্রাসাদ, অন্দরমহল প্রাসাদ, বাড়ির প্রাচীর, ছোট-বড় ৫টি পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট, নাটমন্দির, পূজামন্ডপ, বিরাটাকারের লোহার সিন্দুক, কয়েক টন ওজনের লোহার বিম মুগ্ধ করে তোলে। গল্প আড্ডায় অন্যরকম আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল থেকে যে কোনো যানবাহনে দালাল বাজারে খুব সহজে যাওয়া যায়। প্রবেশ পথেই ২২ একর জমি নিয়ে খোয়া সাগর দীঘিও মনকাড়ে পর্যটকদের। দীঘির এক পাড় থেকে অন্যপাড় দেখা না যাওয়ায় খোয়া সাগর দীঘি হিসেবে নামকরণ করা হয়। দীঘির পাড়ে অতিথি পাখির কলতান আর মনোমুগ্ধকর বাতাসে প্রশান্তির ছোঁয়া আকৃষ্ট করে তোলে আগন্তুকদের। একই সঙ্গে পর্যটকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে পর্যটন স্পট ঘোষণা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, ঐতিহ্যবাহী দালাল বাজার জমিদারবাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘিকে ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা দিন দিন ওই স্থাপনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।