মনিরুল ইসলাম মনির :
আজ ৯ অক্টোবর থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সেই সাথে ওই নির্ধারিত সময়ে ইলিশের আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ। উল্লেখিত সময়ে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ ডিম পাড়ে। আর এই ডিম পাড়ে মূলত মিঠা পানিতে।
চাঁদপুরের মতলব উত্তরের উপজেলার মেঘনা নদীতেও সকল ধরনের মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবে জেলেরা। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসকে গত কয়েকদিন থেকেই তৎপরতা দেখা গেছে। ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে সচেতনতামূলক সভা, প্রচার-প্রচারণা ও জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন উপকরণ প্রদানসহ নানান কর্মসূচী হাতে নিয়েছে প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর এলাকার আলেকজান্ডার পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার মেঘনা নদীতে ইলিশ অভয়াশ্রম ধরা হয়েছে। গবেষকদের মতে, ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সময় হলে মা ইলিশ গভীর থেকে কম পানিতে চলে আসে। তাই এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একেকটি ইলিশ মাছ কমপক্ষে ২৫ লাখ ডিম দেয়। দেশে ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে মা ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখতে হবে।
মতলব উত্তর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে পনের হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় উন্নয়ন সূচকে প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে ইলিশ উৎপাদন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেলে, জেলে প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ’সহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগীতা কামনা করেছে প্রশাসন। এর পাশাপাশি নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ, আহরণ, মজুদ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে এসব কর্মকান্ডে সাথে কাউকে জড়িত পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান রয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জানান, নদীতে যাতে জেলেরা না নামতে পারে সেজন্য ফিস গার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রাখতে অতিরিক্ত পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও গত কয়েকদিন যাবৎ জনসচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. নাছির উদ্দিন জানান, ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে নদী ও সড়ক পথে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। উভয় পথেই অভিযান চালানো হবে। ২৪ ঘন্টা পাহাড়াসহ ইলিশ রক্ষায় যেকোন প্রস্তুতি মোকাবেলা করা হবে।
মতলব উত্তর থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, ইলিশ জাতীয় সম্পদ। এই সোনালী সম্পদ রক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় প্রস্তুত আছে। আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। তাছাড়া ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয়ের কাউকে জড়িত পাওয়া গেছে সাথে সাথে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা আছে।
উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি। স্থানীয় উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী এবারে আমরা ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরেছি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ইলিশ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সরকার ইলিশ রপ্তানি করছে। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা ইত্যোমধ্যেই প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। সরকারি আইন অমান্য করে যাদেরকে ইলিশ আহরণ, মজুদ বা পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিরোনাম:
মতলব উত্তরে ১৫ হাজার মেট্টিকটন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্য
Tag :
সর্বাধিক পঠিত