রংপুরে হিযবুত তাওহীদের বিভাগীয় কর্মী সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০জন আহত হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে মালামাল ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় আশপাশের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উপরও হামলা করা হয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের সিদাম গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় প্রধান আব্দুল কুদ্দুস শামীমের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মালামাল ভাঙচুর করে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার বাড়ির মালামালসহ পাঁচটি ঘর ভস্মীভূত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা হিযবুত তাওহীদের নেতা শামীমের ছোট ভাই ডিবিসি টেলিভিশনের রংপুরের রিপোর্টার আমিরুল ইসলামসহ আরও পাঁচটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় দুই নারীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুরো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পীরগাছা থানার ওসি নুর আলম সিদ্দিক।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হিযবুত তাওহীদ নেতা আব্দুল কুদ্দুস শামীমের বাসায় রংপুর বিভাগীয় কর্মী সমাবেশের আহ্বান করা হয়। সেখানে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সোমবার শত শত এলাকাবাসী হিযবুত তাওহীদকে খ্রিস্টান ও অমুসলিমদের সংগঠন আখ্যা দিয়ে কর্মসূচি বাতিল করার আহ্বান জানান। তবে হিযবুত তাওহীদ তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করার ঘোষণ দেয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হিযবুত তাওহীদ নেতা শামীম তার স্বজনসহ ক্যাডাররা গ্রামবাসীর ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৫০ জনকে আহত করেছে। এর মধ্যে ১০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবিসি টেলিভিশনের রংপুরের রিপোর্টার আমিরুল ইসলাম জানান, তার বড় ভাই সংগঠনের রংপুর বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ায় মঙ্গলবার তার বাড়িতে রংপুর অঞ্চলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা আহ্বান করেন। এ জন্য ৩০০ মানুষের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তৌহিদী জনতার নামে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। তার ভগ্নীপতির সহ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে মালামাল লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বাড়িসহ স্বজনদের আরও চারটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তার বাড়ি থেকে পাঁচটি গরু লুট করা করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, হিযবুত তাওহীদের নেতা শামীমসহ তাদের পরিবারের সবাই ওই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। তারা ইসলাম ধর্মের বিকৃত উপস্থাপনা করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছিলো। এজন্য এলাকাবাসি তাদের উপর ক্ষুব্দ ছিলো।
এলাকাবাসী সমশের আলী ও আবুল কালাম জানান, হিযবুত তাওহীদের সন্ত্রাসীরা নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালিয়ে অনেককে গুরুতর আহত করেছে। তারা এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে পীরগাছা থানার ওসি নুর আলম সিদ্দিক জানান, ওই ঘটনায় দুই নারীসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিকাল ৫টার পর সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।