জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় বিগত সরকারের নির্দেশে পরিচালিত গণহত্যার তথ্য উপাত্ত চেয়ে সকল গণমাধ্যম, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠাচ্ছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের সোমবার এ তথ্য জানান।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গণহত্যার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে আমরা হাসপাতালগুলোতে রোববার থেকে পরিদর্শন শুরু করেছি। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। জুলাই -আগস্ট গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আহ্বান জানান চিফ প্রসিকিউটর।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কবরস্থান পরিচালনাকারীদের কাছেও তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আন্দোলনের সবচাইতে বড় সাক্ষী হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এ বিচারের সবচেয়ে বড় সাক্ষী তারা। আমরা এ আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে মত বিনিময় করবো।
আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ অপরাধগুলোর মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে তদন্তকালে আসামিদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন হবে। নিশ্চয়ই আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার চাইবো। আমাদের প্রথম চেষ্টা থাকবে যারা সম্ভাব্য অপরাধী তারা যাতে আদালতের জুরিসডিকশনের বাইরে চলে যেতে না পারেন। সেটা ঠেকানোর চেষ্টা থাকবে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর হিসেবে শনিবার নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
এডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও চার আইনজীবীকে প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। বাকি চার প্রসিকিউটরের মধ্যে মো. মিজানুল ইসলাম অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদ ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান সহকারী এটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদা পাবেন।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর সেকশন ৭ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার জন্য পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিয়োগ কার্যকর থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্যবিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় সরকারি হিসেবেই ৮০০ লোক নিহত হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে বহু মানুষ। এখনও চিকিৎসাধীন কয়েক হাজার মানুষ। এ গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে। ইতোমধ্যে প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।