ফরিদপুরে কৃষক দল নেতা শহীদুলের সমর্থকদের ওপর হামলা, নিহত ১

  • আপডেট: ০৭:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩১

ছবি-নতুনেরকথা।

ফরিদপুরের নগরকান্দা কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুলের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শহীদুলের এক সমর্থক নিহত হয়েছেন। এ সময় তাঁর সমর্থকদের অন্তত তিনটি দোকান লুটপাট করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায়  উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শহীদুলের সমর্থকদের অভিযোগ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা এ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন।  শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা নগরকান্দা বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন। এ সময় নগরকান্দা বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নগরকান্দার ভুবকদিয়া থেকে তালমার মোড় পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের আট কিলোমিটার এলাকায় নেতা-কর্মীরা মহড়া দিচ্ছেন।

শামা ওবায়েদ নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের লস্করদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। শহীদুল ইসলাম নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের কোনাগ্রামের বাসিন্দা। নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এ দুই নেতার মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ ঘটনায় তা প্রকাশ্য রূপ নিল।

নিহত ব্যক্তির নাম কবির ভূঁইয়া (৫০)। তিনি নগরকান্দা পৌরসভার ছাগলদী মহল্লার বাসিন্দা বশিরউদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার এনায়েত হোসেন সাখাওয়াৎ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, বুধবার কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল একটি মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে ভাঙ্গা গোলচত্বর থেকে নগরকান্দার জয় বাংলা মোড় যান। নগরকান্দা বাজারে ও তালমার মোড়ে একটি পথসভা করে ফরিদপুর শহরে জনসভা করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল রাত দুইটার দিকে শহীদুলকে স্বাগত জানিয়ে নগরকান্দা উপজেলা সদরে তাঁর সমর্থকদের বানানো দুটি তোরণ ভেঙে ফেলেন শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা। শহীদুলের সমর্থক নগরকান্দা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর মাতুব্বরকে ধাওয়া দেন শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা। এ নিয়ে গতকাল রাত থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

ছবি-নতুনেরকথা।

বুধবার সকালে নগরকান্দা বেইলি সেতুর বাজারের দিকে শহীদুলের সমর্থকেরা আর জুঙ্গুরদী বাসস্ট্যান্ডের কাছে শামা ওবায়েদের লোকজন অবস্থান নেন। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শহীদুল ইসলামের কয়েকজন সমর্থক আহত হন। পরে শামার লোকজন শহীদুলের সমর্থক নগরকান্দা বাজারের লঞ্চঘাটা এলাকায় অবস্থিত জাকির হোসেনের চাল ও গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ভাঙচুর করেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহীদুল ইসলামের সমর্থক ছাগলদী এলাকার কবির ভূঁইয়া একটি ভ্যানে করে শহীদুলের জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য নগরকান্দা বাজারের দিকে আসছিলেন। ভ্যানটি ছাগলদী সেতুর ঢালে পৌঁছালে প্রতিপক্ষরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এলাকাবাসী উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যু হয় কবিরের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার এনায়েত হোসেন সাখাওয়াৎ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বক্তব্যে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নগরকান্দায় উড়ে আসিনি। আন্দোলন–সংগ্রাম করে নেতা হয়েছি। বিএনপির মধ্যে আওয়ামী লীগ ঢুকে গেছে। তারাই দলের মধ্যে এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আমি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করি। কেউ অশান্তি করলে তার দাঁতভাঙা জবাব কীভাবে দিতে হয়, তা জানে শহীদুল ইসলাম। আমি জনগণের জন্য দল করি।

অন্যদিকে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বর্তমান সময় উৎসবের সময় নয়। এ সময় গেট বানিয়ে বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্যাতন–নিষ্পেষণের শিকার হয়েছে, নগরকান্দার বিভিন্ন গ্রামের লোকজন, তারা এ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি। এ কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি, এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। এ মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুর রহমান জানান, কৃষক দলের নেতা শহীদুল সভা করতে চাইলে বাধা দেন বিএনপির শামা ওবায়েদের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষ সকাল থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে একজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের সংখ্যা জানা যায়নি। তাঁরা মাইকিং করে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে খাঁটি গরুর দুধ বিক্রর নামে প্রতারণা

ফরিদপুরে কৃষক দল নেতা শহীদুলের সমর্থকদের ওপর হামলা, নিহত ১

আপডেট: ০৭:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

ফরিদপুরের নগরকান্দা কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুলের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শহীদুলের এক সমর্থক নিহত হয়েছেন। এ সময় তাঁর সমর্থকদের অন্তত তিনটি দোকান লুটপাট করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায়  উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শহীদুলের সমর্থকদের অভিযোগ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা এ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন।  শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা নগরকান্দা বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন। এ সময় নগরকান্দা বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নগরকান্দার ভুবকদিয়া থেকে তালমার মোড় পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের আট কিলোমিটার এলাকায় নেতা-কর্মীরা মহড়া দিচ্ছেন।

শামা ওবায়েদ নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের লস্করদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। শহীদুল ইসলাম নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের কোনাগ্রামের বাসিন্দা। নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এ দুই নেতার মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ ঘটনায় তা প্রকাশ্য রূপ নিল।

নিহত ব্যক্তির নাম কবির ভূঁইয়া (৫০)। তিনি নগরকান্দা পৌরসভার ছাগলদী মহল্লার বাসিন্দা বশিরউদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার এনায়েত হোসেন সাখাওয়াৎ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, বুধবার কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল একটি মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে ভাঙ্গা গোলচত্বর থেকে নগরকান্দার জয় বাংলা মোড় যান। নগরকান্দা বাজারে ও তালমার মোড়ে একটি পথসভা করে ফরিদপুর শহরে জনসভা করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল রাত দুইটার দিকে শহীদুলকে স্বাগত জানিয়ে নগরকান্দা উপজেলা সদরে তাঁর সমর্থকদের বানানো দুটি তোরণ ভেঙে ফেলেন শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা। শহীদুলের সমর্থক নগরকান্দা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর মাতুব্বরকে ধাওয়া দেন শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা। এ নিয়ে গতকাল রাত থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

ছবি-নতুনেরকথা।

বুধবার সকালে নগরকান্দা বেইলি সেতুর বাজারের দিকে শহীদুলের সমর্থকেরা আর জুঙ্গুরদী বাসস্ট্যান্ডের কাছে শামা ওবায়েদের লোকজন অবস্থান নেন। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শহীদুল ইসলামের কয়েকজন সমর্থক আহত হন। পরে শামার লোকজন শহীদুলের সমর্থক নগরকান্দা বাজারের লঞ্চঘাটা এলাকায় অবস্থিত জাকির হোসেনের চাল ও গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ভাঙচুর করেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহীদুল ইসলামের সমর্থক ছাগলদী এলাকার কবির ভূঁইয়া একটি ভ্যানে করে শহীদুলের জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য নগরকান্দা বাজারের দিকে আসছিলেন। ভ্যানটি ছাগলদী সেতুর ঢালে পৌঁছালে প্রতিপক্ষরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এলাকাবাসী উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যু হয় কবিরের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার এনায়েত হোসেন সাখাওয়াৎ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বক্তব্যে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নগরকান্দায় উড়ে আসিনি। আন্দোলন–সংগ্রাম করে নেতা হয়েছি। বিএনপির মধ্যে আওয়ামী লীগ ঢুকে গেছে। তারাই দলের মধ্যে এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আমি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করি। কেউ অশান্তি করলে তার দাঁতভাঙা জবাব কীভাবে দিতে হয়, তা জানে শহীদুল ইসলাম। আমি জনগণের জন্য দল করি।

অন্যদিকে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বর্তমান সময় উৎসবের সময় নয়। এ সময় গেট বানিয়ে বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্যাতন–নিষ্পেষণের শিকার হয়েছে, নগরকান্দার বিভিন্ন গ্রামের লোকজন, তারা এ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি। এ কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি, এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। এ মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুর রহমান জানান, কৃষক দলের নেতা শহীদুল সভা করতে চাইলে বাধা দেন বিএনপির শামা ওবায়েদের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষ সকাল থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে একজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের সংখ্যা জানা যায়নি। তাঁরা মাইকিং করে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।