খবর পেয়ে তিন ছেলে প্রবাস থেকে ফিরে এলেন দেশে

হাজীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার দাদি ও নাতির দাফন

ইভটিজিং, প্রেম, পরকীয়া, পারিবারিক বিরোধ নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ

ছবি-ত্রিনদী

হাজীগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের শিকার দাদি হামিদুন্নেসা (৭২) ও নাতি আরাফাত হোসেনের (১২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ৩টায় জানাযা শেষে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের পশ্চিম রাধাসার গ্রামের বকাউল বাড়ির নিজ পারিবারিক কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়। এই ঘটনায় মারা যাওয়া দাদি ও নাতির পুরো পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে আত্মীয়-স্বজনসহ ওই গ্রামের মধ্যে।

এ দিকে দাদি হামিদুন্নেসার ও নাতি আরাফাতের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রবাস থেকে জরুরি দেশে ফিরে এসে জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করেন হামিদুন্নেসার তিন ছেলে ইসমাঈল হোসেন, ইউসুফ হোসেন ও কামরুল হোসেন। বুধবার দুপুরে নিজ বাড়িতে এসে পৌছান কুয়েত থেকে আসা ইসমাঈল হোসেন ও ইউসুফ হোসেন এবং ওমান থেকে আসা কামরুল হোসেন। এ সময় তাদের উপস্থিতিতে স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

এর আগে সোমবার (২৭ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটার দিকে নিজ ঘরে দাদি হামিদুন্নেসা, নাতি আরাফাত ও নাতনি হালিমা আক্তার মিমকে (১৫) কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে হামিদুন্নেসা ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরাফাত হোসেন মারা যান এবং গুরুতর আহত হালিমা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

এই ঘটনায় নিহত হামিদুন্নেসা ও আরাফাতের ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হামিদুন্নেসার ছোট ছেলে কামরুলের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও মেয়ে রহিমার সন্তান তাছলিমাকে বুধবার দুপুরে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে এদিন আহত হালিমা আক্তার মিমকে প্রেম নিবেদন ও উত্তোক্তকারী ১৮ বছর বয়সি এক ছেলেকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে জানা গেছে।

এ দিকে হালিমাকে হাসপাতালে নেওয়া ও তার সাথে থাকা এলাকার মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মীর হোসেন জানাযা’র পর সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডাক্তার নিষেধ করেছেন ৭২ ঘন্টার মধ্যে কেউ যেন হালিমার সাথে কথা না বলে। তাকে এই ৭২ ঘন্টা নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হবে। তবে চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন, হালিমা নাকি একাধিকবার বলেছে, স্কুলে ভর্তি হওয়া তার ভুল ছিলো।

এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে নিহত হামিদুন্নেসার ছেলে এবং নিহত আরাফাত ও আহত হালিমার বাবা ইউসুফ হোসেনসহ ইসমাঈল ও কামরুল বলেন, আমাদের কোন শত্রু নেই। কে বা কারা এবং কি কারণে আমাদের এতো বড় ক্ষতি করলো, আমরা জানিনা। পুলিশ যেন জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়।

উল্লেখ্য, সোমবার দিবাগত রাতের আঁধারে এবং ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে নিজ ঘরে হামিদুন্নেসা, আরাফাত ও হালিমাকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে হামিদুন্নেসা ও আরাফাত মারা যান এবং গুরুতর আহত হন হালিমা। নিহত হামিদুন্নেসা ওই বাড়ির মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ও নিহত আরাফাত এবং আহত হালিমা প্রবাসী ইউসুফ হোসেনের ছেলে ও মেয়ে। আরাফাত শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণি ও হালিমা একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ওই দিন রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে ওই বাড়ি থেকে হামিদা বেগম ও হাসপাতাল থেকে আরাফাতের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ দিকে ডাকাতি, প্রেম, পরকীয়া নাকি পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড, তা নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। তবে প্রথমে বিষয়টি ডাকাতি বলে চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে নিহত আরাফাতের মা শাহিনা বেগম জানান, আমি আমার দেবর কামরুলের বউয়ের (ফাতেমা) ফোন এবং শাশুড়ির ঘরে চিৎকারের শব্দ শুে ঘর থেকে বের হই। এরপর শাশুড়ির ঘরের দরজায় গিয়ে দেখি শাশুড়ি ও আমার ছেলে মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন আমি ফাতেমাকে ডাকি, সে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়নি। এসময় তার বোনের ছেলেসহ বাড়ির অন্যান্য লোকজন এসে আমার ছেলে ও মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এর আগে ফাতেমা জানান, তিনি শাশুড়ির ঘরে চিৎকার শুনে দরজা খুলে দেখেন বোরকা পরিহিত একজন লোক শাশুড়ির ঘর থেকে বের হচ্ছে। তিনি ভয়ে তার ঘরের দরজা দিয়ে জ্যা শাহিন (ইউসুফের স্ত্রী), বোনের ছেলেসহ বাড়ির লোকজনকে ফোন দেন। এর মধ্যে বোরকা পড়া ওই লোক তার ঘরের সামনের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে এবং তার কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করে, কিন্তু পারেনি। এরপর সে তাদের সামনের কক্ষে থাকা র‌্যাক থেকে স্বামী কামরুলের জুতা নিয়ে শাশুড়ির ঘরের সামনে রাখেন। পরে বাড়ির লোকজন আসলে তিনি ঘর থেকে বের হন।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) রাশেদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ, পিবিআই এর পরিদর্শক ইউনুস খন্দকার ও আতিকুর রহমান, বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রমুখ।

এদিকে প্রথমে ডাকাতির কথা বলা হলে ঘটনাস্থল থেকে স্বর্ণালংকারসহ কোন কিছু খোয়া যায়নি। এমনকি নিহত দাদি হামিদুন্নেসা ও আহত নাতনি হালিমার কানে ও গলায় স্বর্ণ ছিলো। তাও ডাকাত বা ডাকাতরা নেয়নি।

এরপর সংবাদকর্মীদের কাছে মৃত হামিদুন্নেসার মেয়ে ও চাঁদপুর সদরের বাবুরহাটের বাবুল মালের স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, তার মেয়ে তাছলিমাকে রাধাসার ছাড়া বাড়ির বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে মিলনের (৩৮) কাছে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর মিলনের জমজ ভাই আলম (৩৮) তার মেয়েকে ডিস্ট্রাব করেন। পরে তারা অসহ্য হয়ে তালাকের মাধ্যমে মেয়েকে ওই ঘর থেকে নিয়ে এসে ঢাকায় বিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ওই ঘরেও সমস্যার কারণে মেয়ে আর শশুর বাড়ি (ঢাকা) যায়নি। এ দিকে মিলনের সাথে তালাকের পর তাছলিমাকে বেশ কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয় আলম এবং ঢাকায় শশুর বাড়ির সমস্যা জানতে পেরে তাছলিমাকে বিয়ের জন্য আলম উঠে-পড়ে লেগে। কিন্তু আমার মা (হামিদুন্নেসা) রাজি হয়নি। সবশেষ কয়েকদিন আগে আলম ও ঢাকার জামাই আমাদের বাড়িতে এসে আমার মাকে হুমকি-ধমকি দেয়। এরপর কাল (সোমবার) রাতে আমরা মা, ভাইয়ের ছেলে খুন হয়, মেয়ে মৃত্যুশয্যায়।

এ দিকে আলম ও ঢাকার জামায়ের হুমকি-ধমকির বিষয়টি নিহত আরাফাতের মা শাহিনা বেগমও সংবাদকর্মীদের জানান। তিনি বলেন, তারা আমাদের বাড়িতে এসে আমার শাশুড়িকে হুমকি-ধমকি দিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত হামিদুন্নেসার মেয়ের ঘরের নাতিন চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাট বাজারের বাবুল মালের মেয়ে তাছলিমা ও হামিদুন্নেসার ছোট ছেলে কামরুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমাকে থানায় নিয়ে আসে। অপর দিকে ঘটনার পর থেকে পুলিশ যাকে সন্দেহ করছে, সে পশ্চিম রাধাসার গ্রামের ছাড়াবাড়ীর আবদুল হামিদের ছেলে আলম (৩৮) পলাতক রয়েছেন।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন এবং ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশের একাধিক সংস্থা কাজ করছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, একজন লোক বোরকা পড়ে এসেছিলেন। বিষয়টি চুরি, নাকি পারিবারিক বিরোধ বা পরকীয়া, প্রেম সংগঠিত কোন বিষয় আছে কিনা, আমরা তদন্ত করে দেখছি। পুলিশ ও পিবিআই গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

তদন্তের স্বার্থে পুলিশ বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে এবং ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। একই সময়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার স্বজনদের আশ্বস্ত করে বলেন, দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আনা হবে।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

দেশে HMPV ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু, বাড়ছে আতঙ্ক

খবর পেয়ে তিন ছেলে প্রবাস থেকে ফিরে এলেন দেশে

হাজীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার দাদি ও নাতির দাফন

ইভটিজিং, প্রেম, পরকীয়া, পারিবারিক বিরোধ নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ

আপডেট: ১১:১৪:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪

হাজীগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের শিকার দাদি হামিদুন্নেসা (৭২) ও নাতি আরাফাত হোসেনের (১২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ৩টায় জানাযা শেষে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের পশ্চিম রাধাসার গ্রামের বকাউল বাড়ির নিজ পারিবারিক কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়। এই ঘটনায় মারা যাওয়া দাদি ও নাতির পুরো পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে আত্মীয়-স্বজনসহ ওই গ্রামের মধ্যে।

এ দিকে দাদি হামিদুন্নেসার ও নাতি আরাফাতের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রবাস থেকে জরুরি দেশে ফিরে এসে জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করেন হামিদুন্নেসার তিন ছেলে ইসমাঈল হোসেন, ইউসুফ হোসেন ও কামরুল হোসেন। বুধবার দুপুরে নিজ বাড়িতে এসে পৌছান কুয়েত থেকে আসা ইসমাঈল হোসেন ও ইউসুফ হোসেন এবং ওমান থেকে আসা কামরুল হোসেন। এ সময় তাদের উপস্থিতিতে স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

এর আগে সোমবার (২৭ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটার দিকে নিজ ঘরে দাদি হামিদুন্নেসা, নাতি আরাফাত ও নাতনি হালিমা আক্তার মিমকে (১৫) কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে হামিদুন্নেসা ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরাফাত হোসেন মারা যান এবং গুরুতর আহত হালিমা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

এই ঘটনায় নিহত হামিদুন্নেসা ও আরাফাতের ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হামিদুন্নেসার ছোট ছেলে কামরুলের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও মেয়ে রহিমার সন্তান তাছলিমাকে বুধবার দুপুরে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে এদিন আহত হালিমা আক্তার মিমকে প্রেম নিবেদন ও উত্তোক্তকারী ১৮ বছর বয়সি এক ছেলেকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে জানা গেছে।

এ দিকে হালিমাকে হাসপাতালে নেওয়া ও তার সাথে থাকা এলাকার মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মীর হোসেন জানাযা’র পর সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডাক্তার নিষেধ করেছেন ৭২ ঘন্টার মধ্যে কেউ যেন হালিমার সাথে কথা না বলে। তাকে এই ৭২ ঘন্টা নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হবে। তবে চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন, হালিমা নাকি একাধিকবার বলেছে, স্কুলে ভর্তি হওয়া তার ভুল ছিলো।

এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে নিহত হামিদুন্নেসার ছেলে এবং নিহত আরাফাত ও আহত হালিমার বাবা ইউসুফ হোসেনসহ ইসমাঈল ও কামরুল বলেন, আমাদের কোন শত্রু নেই। কে বা কারা এবং কি কারণে আমাদের এতো বড় ক্ষতি করলো, আমরা জানিনা। পুলিশ যেন জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়।

উল্লেখ্য, সোমবার দিবাগত রাতের আঁধারে এবং ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে নিজ ঘরে হামিদুন্নেসা, আরাফাত ও হালিমাকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে হামিদুন্নেসা ও আরাফাত মারা যান এবং গুরুতর আহত হন হালিমা। নিহত হামিদুন্নেসা ওই বাড়ির মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ও নিহত আরাফাত এবং আহত হালিমা প্রবাসী ইউসুফ হোসেনের ছেলে ও মেয়ে। আরাফাত শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণি ও হালিমা একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ওই দিন রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে ওই বাড়ি থেকে হামিদা বেগম ও হাসপাতাল থেকে আরাফাতের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ দিকে ডাকাতি, প্রেম, পরকীয়া নাকি পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড, তা নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। তবে প্রথমে বিষয়টি ডাকাতি বলে চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে নিহত আরাফাতের মা শাহিনা বেগম জানান, আমি আমার দেবর কামরুলের বউয়ের (ফাতেমা) ফোন এবং শাশুড়ির ঘরে চিৎকারের শব্দ শুে ঘর থেকে বের হই। এরপর শাশুড়ির ঘরের দরজায় গিয়ে দেখি শাশুড়ি ও আমার ছেলে মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন আমি ফাতেমাকে ডাকি, সে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়নি। এসময় তার বোনের ছেলেসহ বাড়ির অন্যান্য লোকজন এসে আমার ছেলে ও মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এর আগে ফাতেমা জানান, তিনি শাশুড়ির ঘরে চিৎকার শুনে দরজা খুলে দেখেন বোরকা পরিহিত একজন লোক শাশুড়ির ঘর থেকে বের হচ্ছে। তিনি ভয়ে তার ঘরের দরজা দিয়ে জ্যা শাহিন (ইউসুফের স্ত্রী), বোনের ছেলেসহ বাড়ির লোকজনকে ফোন দেন। এর মধ্যে বোরকা পড়া ওই লোক তার ঘরের সামনের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে এবং তার কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করে, কিন্তু পারেনি। এরপর সে তাদের সামনের কক্ষে থাকা র‌্যাক থেকে স্বামী কামরুলের জুতা নিয়ে শাশুড়ির ঘরের সামনে রাখেন। পরে বাড়ির লোকজন আসলে তিনি ঘর থেকে বের হন।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) রাশেদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ, পিবিআই এর পরিদর্শক ইউনুস খন্দকার ও আতিকুর রহমান, বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রমুখ।

এদিকে প্রথমে ডাকাতির কথা বলা হলে ঘটনাস্থল থেকে স্বর্ণালংকারসহ কোন কিছু খোয়া যায়নি। এমনকি নিহত দাদি হামিদুন্নেসা ও আহত নাতনি হালিমার কানে ও গলায় স্বর্ণ ছিলো। তাও ডাকাত বা ডাকাতরা নেয়নি।

এরপর সংবাদকর্মীদের কাছে মৃত হামিদুন্নেসার মেয়ে ও চাঁদপুর সদরের বাবুরহাটের বাবুল মালের স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, তার মেয়ে তাছলিমাকে রাধাসার ছাড়া বাড়ির বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে মিলনের (৩৮) কাছে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর মিলনের জমজ ভাই আলম (৩৮) তার মেয়েকে ডিস্ট্রাব করেন। পরে তারা অসহ্য হয়ে তালাকের মাধ্যমে মেয়েকে ওই ঘর থেকে নিয়ে এসে ঢাকায় বিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ওই ঘরেও সমস্যার কারণে মেয়ে আর শশুর বাড়ি (ঢাকা) যায়নি। এ দিকে মিলনের সাথে তালাকের পর তাছলিমাকে বেশ কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয় আলম এবং ঢাকায় শশুর বাড়ির সমস্যা জানতে পেরে তাছলিমাকে বিয়ের জন্য আলম উঠে-পড়ে লেগে। কিন্তু আমার মা (হামিদুন্নেসা) রাজি হয়নি। সবশেষ কয়েকদিন আগে আলম ও ঢাকার জামাই আমাদের বাড়িতে এসে আমার মাকে হুমকি-ধমকি দেয়। এরপর কাল (সোমবার) রাতে আমরা মা, ভাইয়ের ছেলে খুন হয়, মেয়ে মৃত্যুশয্যায়।

এ দিকে আলম ও ঢাকার জামায়ের হুমকি-ধমকির বিষয়টি নিহত আরাফাতের মা শাহিনা বেগমও সংবাদকর্মীদের জানান। তিনি বলেন, তারা আমাদের বাড়িতে এসে আমার শাশুড়িকে হুমকি-ধমকি দিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত হামিদুন্নেসার মেয়ের ঘরের নাতিন চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাট বাজারের বাবুল মালের মেয়ে তাছলিমা ও হামিদুন্নেসার ছোট ছেলে কামরুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমাকে থানায় নিয়ে আসে। অপর দিকে ঘটনার পর থেকে পুলিশ যাকে সন্দেহ করছে, সে পশ্চিম রাধাসার গ্রামের ছাড়াবাড়ীর আবদুল হামিদের ছেলে আলম (৩৮) পলাতক রয়েছেন।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন এবং ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশের একাধিক সংস্থা কাজ করছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, একজন লোক বোরকা পড়ে এসেছিলেন। বিষয়টি চুরি, নাকি পারিবারিক বিরোধ বা পরকীয়া, প্রেম সংগঠিত কোন বিষয় আছে কিনা, আমরা তদন্ত করে দেখছি। পুলিশ ও পিবিআই গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

তদন্তের স্বার্থে পুলিশ বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে এবং ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। একই সময়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার স্বজনদের আশ্বস্ত করে বলেন, দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আনা হবে।