উচ্চ আদালতের ৪ মামলার আদেশ অমান্য করে আবারও একই ব্যাক্তি ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ সভাপতি

  • আপডেট: ০৭:৪৭:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই ২০২২
  • ৪২

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
কোন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে কোন ব্যক্তি পর পর দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর হাইকোর্টের এই নির্দেশনাটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি বিধিমালায় সংযোজনের পরামর্শ দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন আদালত। কিন্তু চাঁদপুর সদর উপজেলার ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে একই ব্যাক্তি টানা ৬বার সভাপতি হিসেবে আছেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে সভাপতি পদে আসিন হওয়ার পর কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দায়িত্বে রয়েছেন। অনিয়ম করে সভাপতি পদ দখল করে রাখা, একাধিক অভিযোগে এই পর্যন্ত উচ্চ আদালত এবং চাঁদপুর আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযুক্ত ব্যাক্তি হলেন একই এলাকার বাসিন্দা সুজিত রায় নন্দী। তিনি সম্প্রতি সময়ে উচ্চ আদালতের ৪ আদেশ অবমাননা করেছেন। আবার তিনি নিজেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দাবী করে আসছেন। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির বিষয়টিও স্থানীয়ভাবে বিতর্কিত। বর্তমানে তিনি সপ্তমবার সভাপতি হওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কলেজের সর্বশেষ নিয়মিত কমিটির মেয়াদ চলতি বছরের ১৭ মার্চ শেষ হয়। এরপর ১৮০ দিনের জন্য এডহক কমিটি হয়। সেখানেও সভাপতি সুজিত রায় নন্দী। এরপর ৯০ দিন শেষ। এরপর নির্বাচন না দিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করে সুজিত রায় নন্দী আবারও সভাপতি হওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন কিংবা কোন ধরণের প্রচার প্রচরণা ছাড়াই সপ্তম বারের মত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন জেনে ােভ প্রকাশ করেছেন পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্যরা। এর আগের কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক মিজি তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ৩৯২২/২০২১নং রীট করেছেন। ওই রীটে ২৯ জুন ২০২১ তারিখে উচ্চ আদালত কলেজ কমিটি স্থগিত করেন। তিনি রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। কিন্তু রুল নিস্পত্তি করেননি। এছাড়াও আব্দুর রাজ্জাক বিগত দিনে কলেজের অনিয়মের বিস্তারিত অভিযোগ এনে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক বরাবর দরখাস্ত দিয়েছেন।

এছাড়াও কলেজের শিক জাহাঙ্গীর ও নোমান মাউশি ডিজি, কলেজ সভাপতি সুজিত রায় নন্দী ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট করেছেন। জাহাঙ্গীর ও নোমানের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা চলমান অবস্থায় এবং মামলায় তারা দোষী সাবস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের অর্ধেক বেতন ও খরপোষের টাকা দেয়ার জন্য পৃথক দু’টি রীট করলে উচ্চ আদালত তা বাস্তবায়নের জন্য আদেশ দেন মাউশি’র ডিজি, কলেজ সভাপতি সুজিত রায় নন্দী ও ভারপ্রাপ্ত অধ্য ফেরদৌসি বেগমকে। কিন্তু তারা সকলেই উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করে আসছেন। যার ফলে শিক জাহাঙ্গীর উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করার করাণে মাউশির ডিজি, সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের আদেশ অবমনানানর মামলা করেন। মামলাটি চলমান।

কলেজের অধ্য ড. মোহাম্মদ হাসান খান বাদী হয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে স্বার জাল জালিয়াতি করায় অভিযোগে চাঁদপুর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি চলমান।

অভিভাবক সদস্য ও উচ্চ আদালতে মামলার রীটকারী আব্দুর রাজ্জাক মিজি অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমি কলেজ সভাপতি সুজিত রায় নন্দীর বিরুদ্ধে শুধু মামলাই নয়, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কারণ সুজিত রায় নন্দী অবৈধ প্রতিষ্ঠাতা। সভাপতি বৈধতা করার জন্য করেছেন মহা দুর্নীতি। ৬০ লাখ টাকা ভুয়া অনুদান দেখিয়ে রেজুলেশন করেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী দখল করে আছেন সভাপতি পদ। তার অধীনে থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্য ফেরদৌসি আক্তার অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। কলেজের গান্ধী ভবন টেন্ডার না দিয়ে নিজ আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে কাজ করিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সভাপতি।

উচ্চ আদালতে রীটকারি শিক জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের মামলার কোন রায় হয়নি। পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার কোন রায় হয়নি। আমি গ্রেফতার হওয়ার পরে আমার কলেজের নির্দিষ্ট ড্রয়ার থেকে কলেজ কর্তৃপ সত্যায়িত সার্টিফিকেট, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নগদ ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তারা ভূয়া সনদ তৈরী করে তদন্ত কমিটি গঠন করে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। যার ফলে আমি উচ্চ আদালতে রীট করি। সেখানে আমাকে আদালত ভেতনের অর্ধেক ও খরপোষের টাকা দেয়ার আদেশ দেন। এসব কাগজপত্র আমি মাউশি পাঠানো হয় এবং আমি কলেজ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে নিকট পৌঁছালে তারা রিসিভ করেননি। তারা সকলে উচ্চ আদালত অবমাননা করেছেন। যার ফলে আমি উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার কারণে মাউশি’র ডিজি, কলেজ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করি।

কলেজের এডহক কমিটির আগে নিয়মিত কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এডহক কমিটি হওয়ার আগে সভাপতি সুজিত রায় নন্দী দীর্ঘ প্রায় দুই বছর আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। উনার ইচ্ছেমত মিটিং করেছেন এবং লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন। আমাদের পরামর্শ ছাড়াই তিনি সকল সিদ্ধান্ত নেন।
নির্বাচিত কমিটির সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর মেম্বার বলেন, আমরা নির্বাচন করে কলেজের সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমি বেশ কয়েকবার সদস্য ছিলাম। কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১০ বছর পরে সুজিত রায় নন্দীকে প্রতিষ্ঠাতা বানিয়েছি। তার জন্য আমাদের সব সময় নমনীয়তা ছিল। কিন্ত সে আমাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করেনি। সর্বশেষ নিয়মিত কমিটির মেয়াদ থাকা অবস্থায় আমাদেরকে কোন মিটিং ডাকেনি এবং নোটিশ করেনি। ঢাকা থেকে এসে নিজস্ব কয়েকজনকে নিয়ে গোপনে মিটিং করেছে এবং সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি একজন সচেতন লোক হিসেবে এই কলেজের নির্বাচিত কমিটি চাই এবং কলেজের সুনাম ফিরিয়ে আনতে চাই।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সর্বশেষ কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সুজিত রায় নন্দীকে অনেক ছাড় দিয়েছি। তিনি কলেজের সুনাম নষ্ট করেছেন। নিজেই সব সিদ্ধান নিয়েছেন। কোন বিষয়ে কারো সাথে পরামর্শ করেননি। কলেজের কোন সমস্যার বিষয়ে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত, সেসব বিষয়ে তিনি মামলা করে এবং পুলিশ ব্যবহার করে কলেজের অনেক অর্থ অপচয় করেছেন। যার কারণে তিনি যেমন রাজনৈতিক ভাবে তিগ্রস্থ হয়েছেন এবং কলেজের সুনাম নষ্ট করেছেন। এক কথায় সুজিত রায় নন্দী কাউকে মূল্যায়ন করেন না।

সাময়িক বরখাস্ত দুই শিক্ষককে অর্ধেক বেতন ও খরপোষ দেয়ার বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকলেও তা গ্রহন না করে, না মেনে এবং কোন ব্যবস্থা কেন নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি বলেন, মন্ত্রণালয় তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। করোনার কারণে কলেজ থেকেও কোন সম্মানি দিতে পারেনি। মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে তারা বেতন-ভাতা পাবে। এসব বিষয়ে বাকী কোন বিষয় জানার প্রয়োজন থাকলে সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্যের কাছ থেকে জেনে নেন। আমি আর কিছু বলতে পারব না।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দাসের নিকট কলেজ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বাড়িয়ে নিবে। নতুন কমিটি করার জন্য সভাপতি আমাকে কোন কথা বলেনি।

ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি সুজিত রায় নন্দী বলেন, কলেজ এডহক কমিটির মেয়াদ সময় আরো বাকী আছে। আরো ৬ মাস সময় আছে। বার বার সভাপতি হতে আইনগত কোন বাঁধা নেই। কারণ নিয়মিত কমিটির বিষয়ে উচ্চ আদালাতে যে রীট হয়েছে, সেই রীট সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে এই রীট অর্থাৎ মামলাটি অপ্রয়োজনীয়। রুল নিস্পত্তির বিষয়টি উচ্চ আদালতের বিষয়।

কলেজের গান্ধী ভবন নির্মাণে কেন টেন্ডার দেয়া হয়নি এবং ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সুজিত রায় নন্দী বলেন, ওই ভবন নির্মাণ কাজের টাকা এখনো বাকী আছে। ঠিকাদার এখনো টাকা পাবেন। এই ভবনের কাজ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি এসব ঘটনায় মামলা করব। আপনারা (সাংবাদিকরা) সরেজমিন এসে এসব বিষয়গুলো ভালো করে জানেন এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে লেখেন।

সুজিত রায় নন্দী বলেন, আমি কলেজের সভাপতি হওয়ার দরকার নাই। স্থানীয় লোকজন দল মত নির্বিশেষে আমাকে বার বার সভাপতি বানাচ্ছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী’র সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম

উচ্চ আদালতের ৪ মামলার আদেশ অমান্য করে আবারও একই ব্যাক্তি ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ সভাপতি

আপডেট: ০৭:৪৭:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
কোন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে কোন ব্যক্তি পর পর দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর হাইকোর্টের এই নির্দেশনাটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি বিধিমালায় সংযোজনের পরামর্শ দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন আদালত। কিন্তু চাঁদপুর সদর উপজেলার ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে একই ব্যাক্তি টানা ৬বার সভাপতি হিসেবে আছেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে সভাপতি পদে আসিন হওয়ার পর কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দায়িত্বে রয়েছেন। অনিয়ম করে সভাপতি পদ দখল করে রাখা, একাধিক অভিযোগে এই পর্যন্ত উচ্চ আদালত এবং চাঁদপুর আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযুক্ত ব্যাক্তি হলেন একই এলাকার বাসিন্দা সুজিত রায় নন্দী। তিনি সম্প্রতি সময়ে উচ্চ আদালতের ৪ আদেশ অবমাননা করেছেন। আবার তিনি নিজেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দাবী করে আসছেন। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির বিষয়টিও স্থানীয়ভাবে বিতর্কিত। বর্তমানে তিনি সপ্তমবার সভাপতি হওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কলেজের সর্বশেষ নিয়মিত কমিটির মেয়াদ চলতি বছরের ১৭ মার্চ শেষ হয়। এরপর ১৮০ দিনের জন্য এডহক কমিটি হয়। সেখানেও সভাপতি সুজিত রায় নন্দী। এরপর ৯০ দিন শেষ। এরপর নির্বাচন না দিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করে সুজিত রায় নন্দী আবারও সভাপতি হওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন কিংবা কোন ধরণের প্রচার প্রচরণা ছাড়াই সপ্তম বারের মত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন জেনে ােভ প্রকাশ করেছেন পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্যরা। এর আগের কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক মিজি তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ৩৯২২/২০২১নং রীট করেছেন। ওই রীটে ২৯ জুন ২০২১ তারিখে উচ্চ আদালত কলেজ কমিটি স্থগিত করেন। তিনি রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। কিন্তু রুল নিস্পত্তি করেননি। এছাড়াও আব্দুর রাজ্জাক বিগত দিনে কলেজের অনিয়মের বিস্তারিত অভিযোগ এনে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক বরাবর দরখাস্ত দিয়েছেন।

এছাড়াও কলেজের শিক জাহাঙ্গীর ও নোমান মাউশি ডিজি, কলেজ সভাপতি সুজিত রায় নন্দী ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট করেছেন। জাহাঙ্গীর ও নোমানের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা চলমান অবস্থায় এবং মামলায় তারা দোষী সাবস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের অর্ধেক বেতন ও খরপোষের টাকা দেয়ার জন্য পৃথক দু’টি রীট করলে উচ্চ আদালত তা বাস্তবায়নের জন্য আদেশ দেন মাউশি’র ডিজি, কলেজ সভাপতি সুজিত রায় নন্দী ও ভারপ্রাপ্ত অধ্য ফেরদৌসি বেগমকে। কিন্তু তারা সকলেই উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করে আসছেন। যার ফলে শিক জাহাঙ্গীর উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করার করাণে মাউশির ডিজি, সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের আদেশ অবমনানানর মামলা করেন। মামলাটি চলমান।

কলেজের অধ্য ড. মোহাম্মদ হাসান খান বাদী হয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে স্বার জাল জালিয়াতি করায় অভিযোগে চাঁদপুর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি চলমান।

অভিভাবক সদস্য ও উচ্চ আদালতে মামলার রীটকারী আব্দুর রাজ্জাক মিজি অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমি কলেজ সভাপতি সুজিত রায় নন্দীর বিরুদ্ধে শুধু মামলাই নয়, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কারণ সুজিত রায় নন্দী অবৈধ প্রতিষ্ঠাতা। সভাপতি বৈধতা করার জন্য করেছেন মহা দুর্নীতি। ৬০ লাখ টাকা ভুয়া অনুদান দেখিয়ে রেজুলেশন করেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী দখল করে আছেন সভাপতি পদ। তার অধীনে থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্য ফেরদৌসি আক্তার অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। কলেজের গান্ধী ভবন টেন্ডার না দিয়ে নিজ আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে কাজ করিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সভাপতি।

উচ্চ আদালতে রীটকারি শিক জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের মামলার কোন রায় হয়নি। পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার কোন রায় হয়নি। আমি গ্রেফতার হওয়ার পরে আমার কলেজের নির্দিষ্ট ড্রয়ার থেকে কলেজ কর্তৃপ সত্যায়িত সার্টিফিকেট, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নগদ ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তারা ভূয়া সনদ তৈরী করে তদন্ত কমিটি গঠন করে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। যার ফলে আমি উচ্চ আদালতে রীট করি। সেখানে আমাকে আদালত ভেতনের অর্ধেক ও খরপোষের টাকা দেয়ার আদেশ দেন। এসব কাগজপত্র আমি মাউশি পাঠানো হয় এবং আমি কলেজ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে নিকট পৌঁছালে তারা রিসিভ করেননি। তারা সকলে উচ্চ আদালত অবমাননা করেছেন। যার ফলে আমি উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার কারণে মাউশি’র ডিজি, কলেজ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করি।

কলেজের এডহক কমিটির আগে নিয়মিত কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এডহক কমিটি হওয়ার আগে সভাপতি সুজিত রায় নন্দী দীর্ঘ প্রায় দুই বছর আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। উনার ইচ্ছেমত মিটিং করেছেন এবং লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন। আমাদের পরামর্শ ছাড়াই তিনি সকল সিদ্ধান্ত নেন।
নির্বাচিত কমিটির সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর মেম্বার বলেন, আমরা নির্বাচন করে কলেজের সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমি বেশ কয়েকবার সদস্য ছিলাম। কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১০ বছর পরে সুজিত রায় নন্দীকে প্রতিষ্ঠাতা বানিয়েছি। তার জন্য আমাদের সব সময় নমনীয়তা ছিল। কিন্ত সে আমাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করেনি। সর্বশেষ নিয়মিত কমিটির মেয়াদ থাকা অবস্থায় আমাদেরকে কোন মিটিং ডাকেনি এবং নোটিশ করেনি। ঢাকা থেকে এসে নিজস্ব কয়েকজনকে নিয়ে গোপনে মিটিং করেছে এবং সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি একজন সচেতন লোক হিসেবে এই কলেজের নির্বাচিত কমিটি চাই এবং কলেজের সুনাম ফিরিয়ে আনতে চাই।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সর্বশেষ কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সুজিত রায় নন্দীকে অনেক ছাড় দিয়েছি। তিনি কলেজের সুনাম নষ্ট করেছেন। নিজেই সব সিদ্ধান নিয়েছেন। কোন বিষয়ে কারো সাথে পরামর্শ করেননি। কলেজের কোন সমস্যার বিষয়ে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত, সেসব বিষয়ে তিনি মামলা করে এবং পুলিশ ব্যবহার করে কলেজের অনেক অর্থ অপচয় করেছেন। যার কারণে তিনি যেমন রাজনৈতিক ভাবে তিগ্রস্থ হয়েছেন এবং কলেজের সুনাম নষ্ট করেছেন। এক কথায় সুজিত রায় নন্দী কাউকে মূল্যায়ন করেন না।

সাময়িক বরখাস্ত দুই শিক্ষককে অর্ধেক বেতন ও খরপোষ দেয়ার বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকলেও তা গ্রহন না করে, না মেনে এবং কোন ব্যবস্থা কেন নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি বলেন, মন্ত্রণালয় তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। করোনার কারণে কলেজ থেকেও কোন সম্মানি দিতে পারেনি। মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে তারা বেতন-ভাতা পাবে। এসব বিষয়ে বাকী কোন বিষয় জানার প্রয়োজন থাকলে সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্যের কাছ থেকে জেনে নেন। আমি আর কিছু বলতে পারব না।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দাসের নিকট কলেজ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বাড়িয়ে নিবে। নতুন কমিটি করার জন্য সভাপতি আমাকে কোন কথা বলেনি।

ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি সুজিত রায় নন্দী বলেন, কলেজ এডহক কমিটির মেয়াদ সময় আরো বাকী আছে। আরো ৬ মাস সময় আছে। বার বার সভাপতি হতে আইনগত কোন বাঁধা নেই। কারণ নিয়মিত কমিটির বিষয়ে উচ্চ আদালাতে যে রীট হয়েছে, সেই রীট সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে এই রীট অর্থাৎ মামলাটি অপ্রয়োজনীয়। রুল নিস্পত্তির বিষয়টি উচ্চ আদালতের বিষয়।

কলেজের গান্ধী ভবন নির্মাণে কেন টেন্ডার দেয়া হয়নি এবং ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সুজিত রায় নন্দী বলেন, ওই ভবন নির্মাণ কাজের টাকা এখনো বাকী আছে। ঠিকাদার এখনো টাকা পাবেন। এই ভবনের কাজ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি এসব ঘটনায় মামলা করব। আপনারা (সাংবাদিকরা) সরেজমিন এসে এসব বিষয়গুলো ভালো করে জানেন এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে লেখেন।

সুজিত রায় নন্দী বলেন, আমি কলেজের সভাপতি হওয়ার দরকার নাই। স্থানীয় লোকজন দল মত নির্বিশেষে আমাকে বার বার সভাপতি বানাচ্ছে।