রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে আক্রমণ চালাচ্ছে রাশিয়ান সেনারা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ান সেনারা তিন দিক থেকে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে। ইউক্রেনের সেনারাও প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যদিও রাশিয়ার সামরিক শক্তির কাছে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি খুবই নগণ্য; তারপরও ইউক্রেনের জনগণের মনোবলে কোনো ঘাটতি নেই। আর এ কারণেই সমূহ বিপদ জেনেও নিজের দেশের জন্য যুদ্ধ করতে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছে ইউক্রেনের ৬৬ হাজারেরও অধিক নাগরিক।
অন্যদিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিপুল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও ইউক্রেনের আকাশসীমায় বিমান চলাচল নিষিদ্ধ না করায় ন্যাটোর ওপর ক্ষুব্ধ দেশটির প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো শুরু থেকেই সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়া ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোও বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন ইউক্রেনকে।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইউক্রেন সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের প্রতিরক্ষা সামগ্রী পেতে যাচ্ছে।
এর আগে গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনে প্রতিরক্ষাসামগ্রী দিতে সম্মত হয়। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র ডেলিভারি দিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, প্রায় ২৪০ মিলিয়ন ডলার প্যাকেজের প্রতিরক্ষা সামগ্রী ইতোমধ্যে ইউক্রেনে পৌঁছেছে। বাকিগুলো কয়েকদিনের মধ্যে পৌঁছাবে। না হলে সপ্তাহের মধ্যে পৌঁছাবে। তবে দেরি হবে না। এই প্রতিরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে ট্যাঙ্ক প্রতিরোধী অস্ত্র সামগ্রী রয়েছে।
রুশ আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু জেলেনস্কি তাকে সরিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র সহযোগিতার আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্র শুধু নিজে নয়, ইউক্রেনকে আরও ১৪টি দেশ থেকে অস্ত্র সহযোগিতা সমন্বয় করছে।
এর মধ্যে জ্যাভলিন (ছবি) এবং স্টিঙ্গারও রয়েছে৷ এছাড়া সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বর্ম, ছোট অস্ত্র, অ্যান্টি-আর্মার থাকার কথা জানিয়েছে পেন্টাগন৷ ইতোমধ্যে জার্মানিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সংগ্রহশালা থেকে সেগুলো পোল্যান্ড হয়ে ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইইউ নেতারা কিয়েভে ৪৫০ মিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র সরবরাহ করতে একমত হয়েছেন বলে ডয়চে ভেলে জানিয়েছে।
জার্মানি
সংঘাত চলছে এমন জায়গায় এতদিন অস্ত্র না পাঠানোর নীতি অনুসরণ করত জার্মানি৷ তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে এক হাজার অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন ও ৫০০ স্টিঙ্গার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি৷ এছাড়া সোভিয়েতদের তৈরি ২,৭০০ ‘স্ট্রেলা’ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইলও (ছবি) পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ফ্রান্স
ইউক্রেনের অনুরোধে ডিফেন্সিভ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ও ডিজিটাল উইপন পাঠিয়েছে ফ্রান্স৷
যুক্তরাজ্য
গত জানুয়ারিতে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস ইউক্রেনকে হালকা অ্যান্টি-আর্মার ডিফেন্সিভ উইপন সিস্টেম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন৷ ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাউনিং স্ট্রিট ‘লিথাল ডিফেন্সিভ উইপন’ দেয়ার অঙ্গীকার করে৷
পোল্যান্ড
কয়েক হাজার শেল ও আর্টিলারি অ্যামুনিশন, অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল, লাইট মর্টার এবং শত্রুপক্ষের অবস্থান জানার জন্য ড্রোন ও অস্ত্র পাঠানোর অঙ্গীকার করেছে পোল্যান্ড৷
সুইডেন, ডেনমার্ক
নিরপেক্ষ থাকার নীতি ভেঙে পাঁচ হাজার ‘এটি৪ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন’ পাঠাচ্ছে সুইডেন৷ ডেনমার্ক পাঠাচ্ছে দুই হাজার ৭০০টি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন৷
নরওয়ে
নরওয়ে হেলমেট ও বর্ম ছাড়া প্রায় দুই হাজারের মতো এম৭২ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন পাঠাচ্ছে৷
এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া
এস্তোনিয়া জ্যাভলিন মিসাইল এবং লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়া স্টিঙ্গার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল দিচ্ছে৷
ফিনল্যান্ড
দেড় হাজার সিঙ্গেল শট অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন, আড়াই হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল, দেড় লাখ রাউন্ড গুলি পাঠাচ্ছে ফিনল্যান্ড৷
নেদারল্যান্ডস
২০০টি স্টিঙ্গার এয়ার ডিফেন্স রকেট এবং ৪০০ রকেটসহ ৫০টি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন পাঠানো হবে বলে ২৬ ফেব্রুয়ারি সংসদকে জানায় সরকার৷
বেলজিয়াম
আরও তিন হাজার অটোমেটিক রাইফেল, ২০০ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন ও ৩,৮০০ টন জ্বালানি পাঠাচ্ছে৷
পর্তুগাল
নাইট-ভিশন চশমা, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট, গ্রেনেড, গুলি ও অটোমেটিক জি৩ রাইফেল৷
চেক প্রজাতন্ত্র
ইউক্রেনে চার হাজার মর্টার, ৩০ হাজার পিস্তল, সাত হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল, তিন হাজার মেশিন গান, অনেকগুলো স্নাইপার রাইফেল ও দশ লাখ বুলেট পাঠানো হবে বলে শনিবার জানিয়েছিল দেশটি৷