মো. জহির হোসেন॥
বঙ্গবন্ধু দর্শন, সমবায় উন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে হাজীগঞ্জে ৫০তম জাতীয় সমবায় দিবস পালিত হয়েছে। জাতীয় পতাকা ও সমবায় পতাকা উত্তোলণের মাধ্যমে দিবসটির কার্যক্রম শুরু করেন উপজেলা সমবায় অফিস পরে হাজীগঞ্জ উপজেলা মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে টেলিকনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের সংসদ সদস্য, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম।
প্রধান অতিথির তাঁর বক্তব্যে বলেন, সমবায় একটি গণমুখী আন্দোলন। এ আন্দোলন জাতির দর্পণ হিসেবে কাজ করে। যাকে অবলম্বন করে জাতি আত্ননির্ভর এবং আত্নবিশ্বাসী হয়ে কাঙ্খিত ল্য অর্জনে সম। একটি অবহেলিত জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যায় এ আন্দোলন। সমাজের অবহেলিত মানুষগণ একজোট হয়ে সততা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে কাজ করে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে। এসব ল্য, উদ্দেশ্য নিয়েই সমবায় আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
তিনি বলেন, সমবায় আন্দোলন সর্ব প্রথম শুরু হয় ইংল্যান্ডে। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে ইংল্যান্ডে সর্বত্র কুটির শিল্প ভেঙে পড়ে। ফলে লাখ, লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। তাছাড়া, শিল্প কল-কারখানায় যেসব শ্রমিক কাজ করতো তাদের ওপর মিল মালিকদের শাসন, শোষণ এবং নির্যাতন চলতে থাকে। এই ক্রান্তিকাল সময়ে রবার্ট ওয়েন নামক এক হৃদয়বান, শিল্পপতি ব্যবসায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে সকলকে একত্রিত করে-Village of co-operative সংঘ বা সমবায় গ্রাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। রবার্ট ওয়েন-এর চেষ্টায় ১৮২১ সাল থেকে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের নিউ লার্নাক নামক শহরে ও তার আশপাশে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্যে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে সংকল্পবদ্ধ হয়ে উঠে। তবে তার সমবায় কার্যক্রম প্রথম দিকে সফলতার আলো দেখলেও পরে ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে সফলতা লাভ করেনি।
মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে সমবায় আন্দোলন ১৯০৪ সালে শুরু হয়। তখন এদেশের অধিকাংশ মানুষ ছিল কৃষক এবং কৃষিই ছিল তাদের একমাত্র সম্বল। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টির ফলে কৃষকদের ফসল ভাল হতো না। কৃষি কাজ করতে গিয়ে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে তিগ্রস্ত এবং ঋণী হয়ে পড়তো। কৃষকদের এ দুরবস্থার কথা চিন্তা করে তৎকালিন বৃটিশ সরকার ১৯০৪ সালে সমবায় আইন জারি এবং গ্রাম্য কৃষি ঋণদান সমবায় সমিতি গঠন করেন। ১৯১২ সালে এই আইন সংশোধন করে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক স্থাপন ও অকৃষি ক্ষেত্রের সমবায় সমিতি গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১৯১৯ সালে সমবায়কে প্রদেশিক সরকারের হাতে অর্পণ করা হয়। ১৯৪০ সালে বঙ্গীয় সমবায় আইন পাস করে সমবায়কে আরো বেগবান এবং জোরদার করার পদপে নেয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নেন আখতার হামিদ খান।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায় আন্দোলন কার্যক্রম হাতে নেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতিরজনককে স্ব-পরিবারে হত্যার পর আর আলোর মুখ দেখিনি সমবায়।
তিনি বলেন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৪ মে ২০১২ ইং তারিখে সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন ১০১২-এর খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। এ আইনে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সমবায়কে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ আইনের ফরে সমবায় আন্দোলন আরো বেশি গতিশীল এবং ত্রুটি মুক্ত হবে বলে আমি একান্ত ভাবে বিশ্বাস করি।
সভাপতিত্ব করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুহাম্মদ গোলামুর রহমান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় পল্লী উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশনের পরিচালক ও হাজীগঞ্জ উপজেলা বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান কাজী খায়রুল আলম পারভেজ, সমবায়ী ইকবালুজ্জামান ফারুক, কবির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ।
এসময় হাজীগঞ্জ উপজেলা সমবায় সমিতি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সমবায় সমিতি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সমবায় অফিসের কর্মকর্তা রকি সাহা।