বিশেষ প্রতিনিধি:
চলমান বিশ^মহামারীর কারণে প্রায় সারা বিশ^ই বন্ধি দশায় কাটছে। স্থবির হয়ে পড়ছে সকল ব্যবসা-বাণিজ্য। পথে বসার উপক্রম হচ্ছে ব্যবসায়ীসহ সর্বসাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এসব কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৮ মে ঘোষণা প্রদান করেন ১০ মে থেকে বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল করা হবে।
সকল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দোকান পাট খোলা থাকবে। তবে কিছু কিছু সপিংমল মালিক কর্তৃপক্ষ তাদের মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা প্রদান করেন।
সরকার লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দিলেও চাঁদপুরের কয়েকটি ব্যবসায়ী সমিতি মার্কেট বন্ধ রাখার পক্ষে মতামত প্রদান করেন। তাদের এ মতের পক্ষে কোন সাড়া না দিয়ে ব্যবসায়ীরা ঈদকে সামনে রেখে দোকান পাট খুলে বসে। এতে ব্যবসায়ীদের সাথের পুলিশে চলছে চোর পুলিশ খেলা।
গত ৯ এপ্রিল থেকে চাঁদপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। কার্যত তখন থেকেই চাঁদপুর জেলার সকল ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।
৮ মে থেকে ব্যবসা বাণিজ্যের কিছুটা চাঙ্গাভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে আবারো তা বন্ধের পথে। চাঁদপুর জেলার মধ্যে অন্যতম ব্যবসায়ীক প্রসিদ্ধ কেন্দ্র হাজীগঞ্জ বাজার। জেলা শহর চাঁদপুর হলেও যুগের বিবর্তনে হাজীগঞ্জ বাজার আজ শুধু চাঁদপুর জেলা শহর নয়, লক্ষীপুর ও কুমিল্লার মধ্যে অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক নগরি হয়ে উঠছে।
বিশেষ করে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের কারণে হাজীগঞ্জ বাজারের সুনাম দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাজীগঞ্জ বাজারের এ সুনাম ও খ্যাতি ধরে রাখতে হবে।
কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে জেলার প্রধান এ বাণিজ্যিক কেন্দ্রের অবস্থা আজ বেহাল। ব্যবসায়ীরা পথে বসার উপক্রম। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন দোকান মালিকরা কোটি কোটি টাকার মালা-মাল কিনে বিপাকে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১০ মে থেকে দেশব্যাপী লকডাউন শিথিল করার যে ঘোষণা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন চাই হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ।
এ ব্যাপারে সুধীসমাজ হাজীগঞ্জ বাজার ৯ থেকে ৪টা পর্যন্ত খুলে দেয়ার ব্যাপারে পুলিশ বাহিনী, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমরাতো লকডাউন মেনে সবাই বাসায় ছিলাম। কখনো দোকান খুলিনি। যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লকডাউন শিথিলের ঘোষণা প্রদান করেন তখনই আমরা মোবাইল ফোন মারফতে কোটি কোটি টাকার মালামাল ক্রয় করে ঈদ বাজারের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কিন্তু যখন জেলা প্রশাসক মহোদয় পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করেন, তখন আমরা ব্যবসায়ীরা বড় বেকায়দায় পড়ি।
হাজীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্যামল সাহা জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মার্কেট খোলা রয়েছে। সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। আমরা সরকারি নির্দেশনা স্বাস্থ্য বিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। এই ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা দোকান ভাড়া, ৫জন কর্মচারির বেতন ৬০ হাজার টাকা সব মিলিয়ে বিপাকে আছি। আমাদের লকডাউনের শিথিলের আওতায় এনে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হউক।
হাজীগঞ্জ টাওয়ারের রাজধানী ক্লথ স্টোরের স্বত্বাধীকারী মো. এমরান হোসেন জানান, আমার ৪জন কর্মচারির বেতন ৪০ হাজার টাকাসহ দোকান ভাড়া নিয়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকারমতো প্রতি মাসে খরচ হয়। ব্যাংক লোন করে লাখ লাখ টাকার ঈদের মালামাল ক্রয় করেছি। লকডাউনের কারণে এখন পথে বসার উপক্রম।
এ ব্যবসায়ী জানান স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের অন্তত ১০দিন দোকানা করার সুযোগ দিলে আমরা ব্যবসায়ীকভাবে উপকৃত হবো। আর নহে আমাদের সকল মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে। ঢাকার পাইকারের টাকা এবং ব্যাংক লোন দিতে বাড়ী বিক্রয় করা ছাড়া উপায় নেই।
হাজীগঞ্জ রয়েল রওশন সুপার মার্কেটের জোনাকি সপিং সেন্টারের মালিক প্রাণ কৃষ্ণ সাহা জানান, আমি মূলত ঈদের ২ মাস আগেই ঈদের মালামাল বায়না করে ফেলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দেয়ার পর মালামাল দোকানে সাজিয়েছি। পরে শোনলাম বিভিন্ন ব্যাবসায়ী সংগঠন মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এতে জেলা প্রশাসক স্যার পুনরায় চাঁদপুরকে লকডাউন ঘোষণা করেছে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য বিধি মেনে আমাদের অন্তত ঈদের পূর্বে ৮/১০টি ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া হউক। আর নহে কোটি কোটি টাকার পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে।
হাজীগঞ্জ হকার্স মার্কেটের সভাপতি কবির হোসেন মিলন জানান, হর্কাস মার্কেট হলো গরীবের মার্কেট। প্রতি বছরে একবার এ মার্কেটে জমজমাট থাকে। আমি ব্যবসায়ীদের পক্ষে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাবো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া হউক।
হকার্স মার্কেট সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. আমিন মিয়া সেন্টু বলেন, আমরা গরীব মানুষ। বছরে একবার ব্যবসা করি। অন্তত সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের ব্যবসা করার অনুমতি দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো।
একইভাবে কাপড়িয়াপট্রি, হকার্স মার্কেট, কিউসি টাওয়ার, পৌর বিপনি বিতান, কওমী মাদরাসা মার্কেট, পৌরসভা মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটের দোকানদারগণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে দোকান খোলার অনুমতি চান।